শেষের পাতা
ব্ল কে ড
সিলেট সুনামগঞ্জ সড়কে অচলাবস্থা
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
১১ জুলাই ২০২৪, বৃহস্পতিবার
দুপুর ১২টার একটু পর। সিলেটের আকাশ কালো মেঘে ঢাকা। এই অবস্থায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসে জড়ো হন। কয়েকশ’ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের গোলচত্বর এলাকা থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন। কোটা সংস্কারের চলমান দাবিগুলোকে সামনে রেখে তারা ক্যাম্পাস থেকে প্রধান ফটক পর্যন্ত মিছিল নিয়ে আসেন। ফটকের পাশেই সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক। মিছিলটি এসে সড়কে অবস্থান নেয়। ব্যানার হাতে থাকা শিক্ষার্থীরা বসে যান সড়কে। উভয় পাশে দেন ব্যারিকেড। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে শুরু হয় সড়কে ব্লকেড। এমন সময় মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। তবুও থামেনি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। বৃষ্টিতে ভিজে তারা সড়কে অবস্থান নিয়ে স্লোগানের পর স্লোগান দিচ্ছিলো। পাশে দাঁড়িয়ে ছিল পুলিশের একটি টিম। তারা নীরবতা পালন করে। রাস্তা ব্যারিকেড দেয়ায় ব্যস্ততম সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের উভয় পাশে হাজারো যানবাহন আটকা পড়ে। রোগীবাহী এম্বুলেন্সও আটকা পড়েছিল। তবে শিক্ষার্থীদের কয়েকজন গিয়ে ওই এম্বুলেন্সকে রাস্তা পার করে দিয়েছেন। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন- আমরা জরুরি সেবায় কোনো ব্যাঘাত ঘটাচ্ছি না। বরং জরুরি সেবার যানবাহনগুলোকে ছেড়ে দিচ্ছি। ব্যারিকেডের সময় কয়েকজন সিএনজি অটোরিকশা চালক গাড়ি নিয়ে ব্যারিকেড পার হতে চাইলে শিক্ষার্থীরা বাধা দেয়। এ সময় পরিবহন শ্রমিকদের কেউ কেউ তর্কে জড়াতে চাইলেও শিক্ষার্থীরা নীরব থাকেন। ব্যারিকেডের ফলে বিশ্ববিদ্যালয় ফটক থেকে টুকের বাজার এবং বিশ্ববিদ্যালয় ফটক থেকে মদিনা মার্কেট পর্যন্ত এলাকায় যানবাহন আটকা পড়ে। অনেকেই আবার গাড়ি ঘুরিয়ে অন্যদিকে চলে যান। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে গতকাল শাবি’র কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা প্রায় ৫ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। অবরোধের ছাপ এসে পড়ে নগরেও। আম্বরখানা, সুবিদবাজার, পাঠানটুলা সহ কয়েকটি এলাকায়ও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বলতে গেলে পুরো দিনই ওই এলাকায় যাতায়াতকারী যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। এটি শুধু গতকালই নয়। গত চারদিন ধরে সিলেটে একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। জানিয়েছেন- প্রতিদিনই শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিচ্ছে, ব্যারিকেড দিচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে থাকা শাবি’র শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন- ঢাকার আন্দোলনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তারা সিলেটে এ কর্মসূচি পালন করছেন। প্রথম দিন তারা ক্যাম্পাসের ভেতরেই এ কর্মসূচি পালন করেন। পরদিন থেকে তারা বিশ্ববিদ্যালয় ফটকের সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে অবস্থান নিচ্ছেন। এ নিয়ে তারা চারদিন ধরে অবরোধ করছেন। গতকাল যেহেতু দিনভর কর্মসূচি ছিল; এ কারণে দুপুর থেকে তারা কর্মসূচি পালন করছেন। তবে; বিশ্ববিদ্যালয় ফটক ছাড়া অন্য কোথাও তারা অবরোধ করছেন না বলে জানান। পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছেন; প্রতিদিন ব্লকেড’র কারণে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে যানবাহন চলাচল দায় হয়ে পড়েছে। অবরোধস্থল থেকে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানবাহনের জট হয়। যখন ব্যারিকেড তুলে নেয়া হয়, এরপর স্বাভাবিক হতে সময় লাগে কয়েক ঘণ্টা। সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে অবস্থান করে ছাত্র বিক্ষোভের কারণে গত চারদিন ধরে সীমাহীন ভোগান্তি হচ্ছে। চালকদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এতে করে চরম ভোগান্তি হচ্ছে। তিনি জানান- সুনামগঞ্জের সঙ্গে প্রবেশের একমাত্র সড়ক এটি। ব্যারিকেডের কারণে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। জরুরি কাজে যাতায়াতকারী লোকজনের সমস্যা হচ্ছে। এ ব্যাপারে তিনি সিলেটের প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের (প্রতিবন্ধী) জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করার দাবিতে এ আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবি- কোটা স্পষ্ট বৈষম্য। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শাবি’র সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব জানিয়েছেন- দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। একটি স্বাধীন দেশে কোটা প্রথা চালু মেধাবীদের অবমূল্যায়ন করা। সরকারি চাকরিতে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক যে কোটা রাখা হয়েছে তা বাতিল করতে হবে। অনগ্রসর ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ন্যূনতম কোটা রেখে সংসদে আইন পাস করতে হবে।
পাঠকের মতামত
সর্ব ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতির বিলুপ্তি চাই ।