ঢাকা, ২ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবার, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫ জিলহজ্জ ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

সরজমিন

বন্যায় হাকালুকি হাওরের বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ

স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার থেকে
১ জুলাই ২০২৪, সোমবারmzamin

জেলার হাকালুকি হাওর তীরবর্তী তিনটি উপজেলায় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে জলাবদ্ধতায় রূপ নিচ্ছে। জেলার নদী তীরবর্তী বন্যাকবলিত এলাকায় কিছুটা উন্নতি হলেও অনেকটাই অপরিবর্তিত রয়েছে হাওর তীরবর্তী এলাকা। চলমান পরিস্থিতিতে রান্না করা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন, পানিবাহিত রোগবালাই ও গবাদিপশুর খাবার ও বাসস্থান সংকটে চরম দুর্ভোগে বানভাসিরা। বন্যার শুরু থেকে একের পর এক উপদ্রব আর সমস্যায় নাকাল বানভাসিরা। ভারী বৃষ্টি ও উজানের নেমে আসা পানিতে ১৬ই জুন থেকে শুরু হওয়া বন্যায় জেলার ৭টি উপজেলার প্রায় ৪ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েন। ওই সময় জেলার সবক’টি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আর হাওরগুলো পানিতে টইটম্বুর হয়ে তীরবর্তী একের পর এক এলাকা প্লাবিত হয়। এখন জেলার নদীগুলোর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও তেমন দৃশ্যমান উন্নতি নেই হাওর এলাকার। বিশেষ করে জেলার হাকালুকি হাওর পাড়ের মানুষের দুশ্চিন্তা আর দুর্ভোগের অন্ত নেই।

 চলমান বন্যা দীর্ঘ জলাবদ্ধতায় রূপ নেয়ায় এখন তাদের নতুন দুর্ভোগ। আর এই সমস্যা মোকাবিলায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় এখন তাদের রাত-দিন একাকার।

বিজ্ঞাপন
কারণ নতুন উপদ্রব ‘আফাল’ আর ‘বলন’। এই দু’টি উপদ্রবই হাকালুকি হাওর এলাকার মানুষের নতুন আতঙ্ক। এমন শঙ্কায় দিশাহারা হাওর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। রাক্ষুসে হাওরের উত্তাল এই উপদ্রবের কবল থেকে রক্ষায় চলছে তাদের জীবনযুদ্ধ। নিজস্ব নানা কৌশলে বসতভিটা রক্ষার এ সংগ্রামে শক্তিশালী হাওরের ধকল সামলাতে গিয়ে নিস্তেজ হচ্ছেন তারা। আফাল (বড় ঢেউ) ও বলনের (ঘূর্ণয়মান ঢেউ) তোড়ে চোখের সামনে ঘরবাড়ি বিলীন হচ্ছে। কেড়ে নিচ্ছে তাদের যক্ষের ধন। কিছুতেই রক্ষা করা যাচ্ছে না ঘরবাড়ি। তাদের শেষ ভরসাস্থল মাথা গোঁজার ঠাঁইটিও এখন কেড়ে নিতে চায় আফাল আর বলন। তাই নানাভাবে বলন ও আফালের কবল থেকে রক্ষা পেতে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা। কিন্তু সব চেষ্টাই যেন ব্যর্থ হওয়ার উপক্রম। ইতিমধ্যে আফাল আর বলন গিলে খেয়েছে তাদের আশপাশের অনেক ঘরবাড়ি। হঠাৎ এমন দুর্ভোগে ভিটে মাটি হারানোর দুশ্চিন্তায় তারা নির্বাক। সরজমিন হাকালুকি হাওর তীরের জালালপুর, মদনগৌরি, মীরশংকর, সাদিপুর, ভূকশিমইল, বাদে ভূকশিমইল, কালেশার, কানেহাত, উত্তর সাদিপুর, কাইয়ারচর, শশারকান্দি, বেড়কুড়ি, শাহপুর, বেলাগাঁও ও তালিমপুর এলাকায় গেলে চোখে পড়ে মানুষের এমন দুর্দশার চিত্র। ওই এলাকার অধিকাংশ লোকজনই ঘরবাড়ির ফেলে আশ্রয়কেন্দ্রে যাননি।

 তারা ঘরবাড়ি রক্ষায় ঝুঁকি নিয়ে পানিবন্দি অবস্থায় বসবাস করছেন। দুর্ভোগগ্রস্ত স্থানীয় বাসিন্দারা জানান রাত-দিন বলন আর আফালের ভয়ে তারা এখন তটস্থ থাকছেন। তারা জানালেন এতদিন পানিবন্দি হলেও এখন নতুন শঙ্কা আফাল আর বলন। আফাল আর বলনের তোড় গ্রাস করতে চায় তাদের ঘরবাড়ি। চলমান বন্যায় চরম ক্ষতিগ্রস্ত তারা। বন্যায় এখন ঘরবাড়িতে পানি। আর গেল ক’দিন থেকে আফাল আর বলন তাদের তাড়া করছে। ভয় নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোনোরকম দিনযাপন করছেন। বানের পানি না কমলে আর ঘরবাড়ি রক্ষা করা যাবে না বলেও তারা জানান। হাওর তীরবর্তী এলাকাগুলোর অধিকাংশ ঘরে হাঁটু আর উঠানে কোমর পানি। দেখা গেল ঘরের চারপাশে কচুরিপানা আর গাছের ডাল ও বাঁশের পালা (অগ্রভাগ) দিয়ে আফালের ক্ষতির কবল থেকে রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছেন। বাড়ির লোকজন জানালেন বানের পানি শরীরে লাগলে চুলকায়। তাছাড়া রয়েছে বিষাক্ত সাপ ও জোঁকের ভয়। তাই ঘরের ভেতরে থাকতে যেমন ভয় হচ্ছে। তেমনি বাড়ি ছেড়ে যেতেও মন চাচ্ছে না। কারণ বাড়ি ছেড়ে গেলে বাড়িঘরের চারপাশে কচুরিপানা দেয়া যাবে না। এমন সুযোগে আফাল আর বলনে তাদের ঘরবাড়ি নিশ্চিহ্ন করে দিবে। 

দুর্ভোগগ্রস্থরা জানান একের পর দুর্যোগের ধকলে তারা চরম ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের এলাকার লোকজন নামমাত্র সরকারি ত্রাণ সহায়তা পেলেও ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই কিছুই পায়নি। সব হারিয়ে তারা মানবেতর দিনযাপন করছেন। তারা বলেন এখন হাওর তার ভঙ্কর রূপ আমাদের দেখাচ্ছে। আফালের ভয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। ঘরের বেড়া আর ভিটার মাটি ছাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এখন বলতে গেলে পানির সঙ্গে লড়াই করে তারা ঘরবাড়িতে টিকে আছেন। বন্যার ভয়াবহতা চিন্তা করেই সমতল থেকে ১৫-২০ ফুট উচ্চতায় বাড়ির ভিটে বাঁধেন। তার আরও উপরে তৈরি করেন বসতঘর। কিন্তু তারপরও আফালের তোড় থেকে রক্ষা মিলছে না বসতভিটার। হাকালুকি হাওর তীরবর্তী মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভূকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান মনির জানান হাকালুকি হাওর এখন তার উত্তাল রূপ দেখাচ্ছে। ভয়াবহ ঢেউ তীরবর্তী এই এলাকাগুলোর রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি করছে। মানুষের বাড়িঘরও ভাঙছে। হাওর পাড়ের মানুষ এখন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ওদের এমন বিপদের দিনে পাশে দাঁড়াতে তিনি সরকারের পাশাপাশি সমাজের বৃত্তবানদেরও এগিয়ে আসার আকুল আহ্বান জানান।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status