ঢাকা, ৫ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮ জিলহজ্জ ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

জুয়ার সাজা ২০০ টাকা!

রাশিম মোল্লা
২ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবারmzamin

১৫৭ বছর আগের জুয়া আইনেই চলছে জুয়া প্রতিরোধ কার্যক্রম। এই আইনে সর্বোচ্চ জরিমানা রয়েছে মাত্র ২০০ টাকা। ২০১৯ সালে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় এই আইনটির অকার্যকারিতার বিষয়টি সামনে আসে। তখন সারা দেশে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়। অনেককে আটক করা হয়। তবে তাদের বিরুদ্ধে জুয়া আইনে মামলা করা হয়নি। করা হয়েছে অন্য আইনে। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে দেড়শ’ বছরের অধিক পুরনো জুয়া আইনের সংশোধন অথবা জুয়া প্রতিরোধে নতুন আইন করার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরা হয়। কিন্তু অদ্যাবধি তা আমলে নেয়া হয়নি। 
এ বিষয়ে ডিএমপি’র সাইবার ক্রাইম ইউনিটের এসপি মো. নাজমুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, জুয়া প্রতিরোধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে অভিযান পরিচালনা করা গেলেও তাদেরকে শাস্তির মুখোমুখি করা যাচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন
কারণ জুয়া আইন অনুযায়ী সাজা মাত্র ২০০ টাকা। বাধ্য হয়ে অন্য আইনে তাদের মামলা দিতে হয়। এ কারণে অনেক সময় জুয়াড়িরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এখন তো জুয়ার ধরনও পাল্টেছে। এখন অফ লাইনের চেয়ে অনলাইনে জুয়া খেলায় মত্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ১৮৬৭ সালের জুয়া আইনে অনলাইন জুয়া ও ক্যাসিনোর বিষয়টি উল্লেখ নেই। এটা আরেকটি সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য জুয়া আইনে অনলাইন জুয়া ও ক্যাসিনোর বিষয়টি যুক্ত করতে হবে। একইসঙ্গে সাজা ও জরিমানার পরিমাণ যুগোপযোগী করতে হবে। জুয়া আইনে কার্যকর ধারা না থাকায় জুয়াড়িরা এই সুযোগে বিভিন্ন প্ল্যাটফরমে বিজ্ঞাপনও দিচ্ছেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। 
২০২৩ সালে জুয়া আইনটিকে যুগোপযোগী করার জন্য একটি উদ্যোগ নেয়া হয়। উদ্যোগের অংশ হিসেবে ‘জুয়া আইন ২০২৩’ এর খসড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ করলেও এখনো আলোর মুখ দেখেনি আইনটি। 
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী জেড আই খান পান্না মানবজমিনকে বলেন, জুয়া খেলা বন্ধে বিদ্যমান আইনটি দ্রুত সংশোধন করা প্রয়োজন। অপরাধের ধরন অনুযায়ী জরিমানা ও শাস্তির বিধান করা দরকার। সম্পত্তি ক্রোক, বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতাও রাখতে হবে। হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজী মানবজমিনকে বলেন, জুয়া আইনটি অনেক পুরনো। এখনকার প্রজন্ম অনলাইন জুয়া, ক্যাসিনো খেলায় জড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু বিদ্যমান জুয়া আইনে এসব জুয়া খেলার কথা নেই। সে কারণে বিদ্যমান জুয়া আইন সংশোধন করার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। বর্তমান সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে আইনটি যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। সাবেক জেলা জজ ড. শাহজাহান সাজু মানবজমিনকে বলেন, বিদ্যমান জুয়া আইন সংশোধন করে অনলাইন জুয়া, ক্যাসিনো জুয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। একইসঙ্গে এই আইনে যে সাজা রাখা হয়েছে তা যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। বিশেষ করে অনলাইন জুয়া, ক্যাসিনোর মতো জুয়ার ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির বিধান করা প্রয়োজন। কারণ অনলাইন জুয়া মূলত অ্যাপসভিত্তিক। আর এসব অ্যাপসের কারিগর মূলত বিদেশিরা। ইদানীং পত্রিকায় প্রায়ই দেখা যাচ্ছে অনলাইন জুয়ার ফাঁদে পড়ে কোটি কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। 
কী আছে বঙ্গীয় প্রকাশ্য জুয়া আইনে? এই আইনের ১ ধারায় সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, এই আইন প্রকাশ্য জুয়া আইন, ১৮৬৭ নামে অভিহিত হবে এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকা ছাড়া সমগ্র বাংলাদেশে প্রযোজ্য হবে। ‘জুয়া’ খেলা শব্দ দ্বারা জুয়া বা বাজি ধরা বোঝাবে (কেবল ঘোড়দৌড়ের জন্য ধরা বা জুয়া খেলা ব্যতীত)। খেলার কাজে ব্যবহৃত যেকোনো হাতিয়ার বা সামগ্রী ‘ক্রীড়াসামগ্রী’ শব্দের অন্তর্গত। ৩ ধারায় বলা আছে, এ ধরনের জুয়া খেলা দণ্ডনীয় অপরাধ। যেকোনো ঘর, স্থান বা তাঁবু জুয়ার আসর হিসেবে ব্যবহৃত হলে তার মালিক বা রক্ষণাবেক্ষণকারী, জুয়ার ব্যবস্থাপক বা এতে কোনো সাহায্যকারী তিন মাসের কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ২০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। এ রকম কোনো ঘরে তাস, পাশা, কাউন্টার বা যেকোনো সরঞ্জামসহ কোনো ব্যক্তিকে জুয়ারত বা উপস্থিত দেখতে পাওয়া গেলে তিনি এক মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১০০ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।

 

 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status