ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শরীর ও মন

এ সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্য ও পরিত্রাণ যেভাবে

ডা. মোহাম্মদ তানভীর জালাল
১৫ জুলাই ২০২২, শুক্রবার
mzamin

কোষ্ঠকাঠিন্য  ঈদুল আজহা চলে গেলেও কিন্তু গোশত খাওয়ার আমেজ এখনো চলছে।  বিশেষ করে ঈদে হঠাৎই খাওয়ার পরিবর্তন, শক্ত মাংস খাওয়া ইত্যাদি কারণে অনেকেরই এখন কোষ্ঠকাঠিন্য বা শক্ত মলত্যাগ হচ্ছে। কারও অবস্থা খুবই খারাপ। কিন্তু বিষয়টিকে একদম অবহেলা করবেন না। কোষ্ঠকাঠিন্য হলো পর্যাপ্ত আঁশ যুক্ত খাবার খাওয়ার পরও স্বাভাবিকের  চেয়ে বেশি সময় পর পর শক্ত মলত্যাগের নামই কোষ্ঠকাঠিন্য। টয়লেটে অনেক সময় কাটার পরও মলত্যাগ ঠিকমতো সম্পূর্ণ হয় না। মনে হয় আরেকটু যেন হবে। সাধারণত তিন দিনের বেশি সময় ধরে পায়খানা না হলে মল শক্ত হয়ে শুরু হয় কোষ্ঠকাঠিন্য। তবে সময়ের এ হিসাব সবার জন্য একইরকম নাও হতে পারে। 

উপসর্গ বা লক্ষণসমূহ  স্বাভাবিক লক্ষণ

 ১.    মল শক্ত ও অল্প পরিমাণে হয়। ২. শক্ত মল আঙ্গুল, গ্লিসারিন সাপোজিটরি কিংবা অন্য কোনো ভাবে পায়খানা বের করা।

বিজ্ঞাপন
৩. স্বাভাবিকের চেয়ে তলপেট ভারী, শক্ত ও ফোলা মনে হয়। ৪. মলত্যাগ করতে বেশি সময় লাগে। ৫. মলত্যাগের পর মলত্যাগ সম্পূর্ণ হয়নি। ৬. তলপেটে অস্বস্তি। ৭. খাওয়া-দাওয়ায় অনীহা বা ক্ষুধামন্দা ভাব। ৮. পায়খানার জন্য বেশি কোৎ বা চাপ দিতে দেখা যায়।

 সিরিয়াস লক্ষণ: 

 তলপেটে ব্যথা, বমি বা বমি বমি ভাব থাকতে পারে, চেষ্টা ছাড়াই ওজন কমা, পায়খানার সঙ্গে রক্ত বা সাদা মিউকাস যাওয়া, নিজ চেষ্টায়  কোনোভাবেই পায়খানা করতে না পারা- কোষ্ঠকাঠিন্যের সঙ্গে আরও কিছু সমস্যা দেখা দেয় যেমন- মুখে দুর্গন্ধ হওয়া, জিহ্বায় সাদা আস্তরণ পড়া, মাথা ধরা, খাবারে অরুচি, পেট ব্যথা ইত্যাদি। 

প্রকারভেদ:

 কোষ্ঠকাঠিন্যকে দুই ভাগে ভাগ করা  হয়। ১. একুইট এবং (সাময়িক এবং সহজে ভালো হয়ে যায়) এবং ২. ক্রনিক (দীর্ঘস্থায়ী এবং সহজে ভালো হতে চায় না)

 কারণসমূহ 

 সাধারণত ব্যক্তিবিশেষে পায়খানা কষা হওয়ার এক বা একাধিক কারণ থাকতে পারে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ১. জীবনধারণ ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের কারণে। ২. পর্যাপ্ত পানি ও আঁশযুক্ত খাবার না খেলে। ৩. প্রচুর দুগ্ধজাতীয় খাবার খেলে। ৪. শারীরিক বা কায়িক পরিশ্রম না করলে। ৫. পায়খানা আটকে রাখলে। ৬. ওষুধ খেয়ে পায়খানা করতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে। ৭. অতিরিক্ত চা, কফি, পান  খেলে। ৮. চর্বি জাতীয় ও আমিষ জাতীয় খাবার বেশি খেলে। ৯. বিভিন্ন রোগবালাই ও শারীরিক অবস্থার কারণে। ১০. গর্ভাবস্থা। ১১. শক্ত খাবার খেতে শুরু করা। বাচ্চাদের যথেষ্ট আঁশযুক্ত খাবার না খেলে। ১২. মানসিক চাপে। ১৩. অটোনোমিক নিওরোপ্যাথি।  ১৪. মাল্টিপল স্কেলেরোসিস। ১৫. পারকিনসনস ডিজিজ।  ১৬. স্নায়ুরজ্জুতে আঘাত।  ১৭. স্ট্রোক।  ১৮. পরিপাকতন্ত্রের কোনো সমস্যায় ১৯. কোলন ক্যান্সার। ২০. ডায়াবেটিস। ২১. হাইপারথাইরয়েডিজম। ২২. বিভিন্ন ওষুধের কারণে। ২৩. কিছু মল নরম করার ওষুধের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হলে।  

কোষ্ঠকাঠিন্যে যে জটিলতা দেখা দিতে পারে: 

 মলদ্বারের ভেতর শিরা ফুলে ওঠা, পায়ুপথে ক্ষত হওয়া, কোনোভাবেই নিজে নিজে পায়খানা করতে না পারা, মলদ্বারের ভেতরের ফোলা অংশ বাইরে  বের হয়ে আসা, পায়ুপথ দিয়ে পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া এবং ফলে রক্তশূন্যতা, মানসিক অবসাদ ইত্যাদি। 

পায়খানা ক্লিয়ার হওয়ার সহজ উপায়গুলো: 

 নিয়মিত আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া: যেমন- শিম, শাকসবজি, ফল, লাল রুটি, কলা, গাজর, টকদই, পাকা বরই, বেলের শরবত, কাঠ বাদামের  তেল, শসা, খোসাসহ আপেল, পালংশাক, লাল চাল, লাল আটা, পপ কর্ন, কমলা, কিসমিস প্রভৃতি। 

কম আঁশযুক্ত খাবার: 

 যেমন- প্রক্রিয়াজাত খাবার, দুগ্ধজাতীয় ও মাংসজাত খাবার কম খান। এ ছাড়া প্রচুর পানি বা তরল জাতীয় খাবার খান, কায়িক শ্রম ও নিয়মিত ব্যায়াম করুণ, মানসিক চাপ পরিহার করুন, পায়খানা চেপে  রাখবেন না, নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত মলত্যাগের অভ্যাস গড়ে তোলা। শিশুদের ক্ষেত্রে যারা শক্ত খাবার থেতে শুরু করেছে তাদের পর্যাপ্ত আঁশযুক্ত খাবার দেয়া। 

কখন  চিকিৎসক দেখাবেন  

যদি দেখা যায় নরম খাবার খাওয়া, প্রচুর পানি খাওয়া বা প্রাথমিক করণীয়গুলো পালন করলেও পায়খানা নরম হচ্ছে না অবস্থা আরও জটিল হচ্ছে তখন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এর সঠিক চিকিৎসা না করলে মলাশয়ের বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে অনেকদিন যাবৎ নিজে নিজে বা ওষুধের দোকানের সেলসম্যান বা হাতুড়ে ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ ব্যবহার করে পায়খানা করলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে  কোষ্ঠকাঠিন্যের সঠিক কারণ বের করে তার চিকিৎসা মতো ওষুধ নেয়াই সবচেয়ে ভালো সমাধান। সাধারণত চিকিৎসকরা রোগের অবস্থা বুঝে ট্রিটম্যান্ট করে থাকেন। অনেক সময় সার্জারিও করতে হয়। মনে রাখবেন,  কোষ্ঠকাঠিন্য যে কারোরই হতে পারে। এটি কোনো লজ্জার বিষয় নয়। এসব রোগ মনে মনে পুষে রাখা মানে বিষয়টি রোগের বংশ বৃদ্ধি করার মতোই। 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক (কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ)  কলোরেক্টাল, লেপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।  চেম্বার: ১৯ গ্রীন রোড, এ. কে. কমপ্লেক্স, লিফট-৪, ঢাকা।  ফোন-০১৭১২৯৬৫০০৯

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

   

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status