ঢাকা, ১৬ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৭ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

রাজনৈতিক সংলাপ

সৌদি যাচ্ছে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল

মিজানুর রহমান
২৭ জুন ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সৌদি সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনায় বাংলাদেশ সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল রিয়াদ যাচ্ছেন। আগামী ১লা জুলাই সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পলিটিক্যাল কনসালটেশন (রাজনৈতিক সংলাপ)-এর আওতায় ওই আলোচনা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ  রহমান এমপি, অতিরিক্ত পররাষ্ট্রসচিব ড. নজরুল ইসলাম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম ও মধ্য এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক শফিকুর রহমানসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ডেলিগেশনে অন্তর্ভুক্ত বলে নিশ্চিত করেছে সেগুনবাগিচা। কূটনৈতিক এবং সরকারি সূত্রগুলো বলছে প্যালেস্টাইন সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়া, বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর চাপ প্রলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা, রোহিঙ্গা সমস্যাসহ বৈশ্বিক, আঞ্চলিক এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের  নানা বিষয়ে সেখানে আলোচনা হবে। গাল্‌ফ রিজিওনের অস্থিরতা, নিরাপত্তা, ইয়েমেন সংকট, বিশেষত: মুসলমানদের আবেগ-অনুভূতির স্থান পবিত্র মক্কা-মদিনাকে টার্গেট করে প্রায়শ: হুতি আক্রমণ বিষয়েও আলোচনা হতে পারে। কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২২ সালের মার্চে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম রাজনৈতিক সংলাপে বাংলাদেশের সঙ্গে সমন্বিত অংশীদারিত্বে নীতিগতভাবে সম্মত হয় সৌদি আরব। সেই সংলাপে সৌদি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন- দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ। আসন্ন সংলাপেও তিনিই সৌদি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। ঢাকা-রিয়াদ সমন্বিত অংশীদারিত্বকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানে চলতি বছরে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহম্মদ বিন সালমানের বাংলাদেশ সফরের কথা। আসন্ন সংলাপে সেই সফরের সময়সূচি নিয়ে কথা হতে পারে। দু’বছর আগে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম রাজনৈতিক সংলাপে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে একটি রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদের যৌথ সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেই আলোচনায় উভয়পক্ষই দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সকল ক্ষেত্র পর্যালোচনা এবং আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় ক্ষেত্রে পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়ে মতবিনিময় করে। আলোচনা-পর্যালোচনায় যেসব বিষয় উঠেছিল তার অন্যতম ছিল দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দক্ষ জনবল নিয়োগ, হজ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, আইসিটি ও পর্যটন খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো। ঢাকা সংলাপের পর সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, দুই দেশের অংশীদারিত্ব কীভাবে আরও বিস্তৃত করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা শক্তিশালী ভিত্তির ওপর গড়ে ওঠা এই সম্পর্ককে আরও ব্যাপকতর অংশীদারিত্বে নিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নির্দিষ্ট সময়সীমা ধরে সহযোগিতা এগিয়ে নেয়ার কথা বলেছেন। আমি তার এ প্রস্তাবের সঙ্গে একমত। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাণিজ্য ও বিনিয়োগে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে সেদিন বলেছিলেন, কিছু সৌদি কোম্পানি ইতিমধ্যে বাংলাদেশে সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে বিনিয়োগ করেছে এবং কিছু কোম্পানি বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও বেশি সম্পৃক্ততার কথা ভাবছে। সেদিন তিনি বাংলাদেশের তরফে নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা কামনা করেন। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পরামর্শ ছিল একটি যৌথ ব্যবসায়িক ফোরাম চালু করা এবং দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক প্রতিনিধি বিনিময় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও ব্যবসা বৃদ্ধি করার। যা ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। সৌদি আরবে ১০ বিলিয়ন গাছ এবং মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ৫০ বিলিয়ন গাছ লাগানোর জন্য সৌদি ক্রাউন প্রিন্স যে গ্রিন ইনিশিয়েটিভ নিয়েছেন তাতে সমর্থন এবং অংশীদারিত্বসহ ভবিষ্যতের সহযোগিতায় সম্পৃক্ত হতে সেদিন বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল ছয়টি নতুন ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছিল। যার অন্যতম ছিল চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরীতে সৌদি বিনিয়োগ; পর্যটন ও হোটেল শিল্পের উন্নয়নে এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নেতৃস্থানীয় সৌদি কোম্পানির বিনিয়োগ, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের জন্য কৃষি উৎপাদনের জন্য তৃতীয় দেশে চুক্তিভিত্তিক চাষাবাদ এবং সৌদি উদ্যোগে বাংলাদেশে দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি চালুর বিষয়টি। সেদিনের বৈঠকে স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের প্রাধান্য এবং জাতিসংঘের সনদ সমুন্নত রাখার বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ এবং ভবিষ্যতে এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছিল উভয়পক্ষ। বাংলাদেশ বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের ১১ লাখ নাগরিককে টেকসই প্রত্যাবাসন এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সৌদির একান্ত সহযোগিতা কামনা করেছিল ঢাকা। জবাবে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট সমাধানে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেছিলেন। সেদিনের আলোচনার সমাপনীতে শুল্ক বিষয়ে সহযোগিতা ও পারস্পরিক সহায়তা চুক্তি এবং দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে পৃথক সমঝোতা সই হয়েছিল। আসন্ন রিয়াদ সংলাপে ঢাকা বৈঠকের ফলোআপ হবে বলে জানিয়েছে সেগুনবাগিচা। তারা বলছেন, সেই সফরে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছিলেন। তখন সৌদি আরবের কাছে বড় ইস্যু ছিল দেশটিতে অবস্থানরত ৬৮ হাজার রোহিঙ্গার বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রদানের দাবি। যা বাংলাদেশ মেনে নিয়েছে। যদিও এ নিয়ে নতুন করে জটিলতা দেখা দেয়ার আশঙ্কা করছেন সরকারের নীতি-নির্ধারণী মহল এবং বিশ্লেষকরা। সবচেয়ে গুরুতর বিষয় হচ্ছে এটি বাংলাদেশে অস্থায়ী আশ্রয়ে থাকা ১১ লাখ রোহিঙ্গার রাখাইনে প্রত্যাবাসনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন মনে করেন সৌদিতে থাকা রোহিঙ্গাদের পাসেপোর্ট প্রদানের সিদ্ধান্ত ঢাকাকে উভয় সংকটে ফেলবে! কোনো এক সময় তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রশ্নও উঠতে পারে! সেগুনবাগিচা বলছে, রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট প্রদানে সৌদি চাপ সামলে নেয়ার পর এবার বাংলাদেশের চাওয়ার পালা। সৌদি আরব বাংলাদেশে ৭০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগের পরিকল্পনার কথা আগেই জানিয়েছে। সৌদি বিনিয়োগকারীরা এ দেশে তেল শোধনাগার, পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্স, এলএনজি টার্মিনাল, বিদ্যুৎকেন্দ্র, খাদ্য ও ওষুধ শিল্প, সড়ক ও রেলপথ নির্মাণ, পোতাশ্রয় নির্মাণ, সামরিক ও বেসামরিক এয়ারক্রাফট রক্ষণাবেক্ষণ, যন্ত্রাংশ নির্মাণ, সার ও সৌর বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করতে চায় বলে জানানো হয়েছিল। যার অন্যতম ছিল সৌদি প্রতিষ্ঠান আকওয়া পাওয়ারের  ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ৬০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে মোট ৩৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছিল। সৌদি রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল বাংলাদেশে ১২০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাবও তখন বিবেচনাধীন ছিল। এখন দ্রুততার সঙ্গে সেগুলোর  বাস্তবায়ন চায় বাংলাদেশ। স্মরণ করা যায়, শুরু থেকেই সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটে সক্রিয় রয়েছে বাংলাদেশ। 
 

পাঠকের মতামত

ফিলিস্তিন শিশুদের হত্যার জন্য ভারত যে ক্ষেপণাস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য দিয়ে ইজরায়েলকে সহায়তা করছে, এজেন্ডায় এই বিষয়টি রাখা যেতে পারে!

Harun Rashid
২৭ জুন ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৮:৪৫ অপরাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status