প্রথম পাতা
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আক্রান্ত তথ্য উপদেষ্টা
স্টাফ রিপোর্টার
১৫ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার সময় আক্রান্ত হয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। বুধবার রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাসভবন যমুনার অদূরে কাকরাইলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দিনভর অবস্থান করে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। দিনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ে রাতে শিক্ষকদের সঙ্গে যমুনায় কথা বলেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে যান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কথা বলার পর মাহফুজ আলম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কথা বলছিলেন। এসময় ভিড়ের মধ্য থেকে তার দিকে একটি বোতল ছোড়া হয়। এটি সরাসরি উপদেষ্টার মাথায় এসে লাগে। ভিডিওতে দেখা যায়, মাথায় বোতল পড়ার পর উপদেষ্টা কাত হয়ে মাথায় হাত দেন। এসময় শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে কথা শেষ না করেই উপদেষ্টা সেখান থেকে সরে এসে কিছুটা দূরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ওদিকে শিক্ষার্থীদের ভিড় থেকে মাহফুজ আলমের উপর বোতল ছোড়ার ঘটনায় আন্দোলনরতদের সমালোচনা করেছেন অনেকে। তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মূখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহসহ জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া অনেকে। একইসঙ্গে ছাত্রদের যৌক্তিক দাবি দ্রুত মেনে নেয়ারও আহবান জানান তারা।
সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে মাহফুজ আলম বলেন, আমরা শুনতে পেয়েছি আজকে সকাল থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি আন্দোলন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সমস্যাসহ ৩টি দাবি দিয়েছেন। তিনটি দাবির যৌক্তিকতা আছে কি নেই তা শিক্ষা মন্ত্রাণলয় বিচার করে দেখবে। আমরা মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেই আবাসন সংকট রয়েছে তা আমাদের সরকার সুনজরে দেখবে। তারা বলার চেষ্টা করেছে আগামী বাজেটে তাদের আবাসন ভাতা ৭০% করা হোক, সেটা কত পার্সেন্ট করা যায় তা আলোচনা সাপেক্ষ। এরপর তারা বলছে তাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের যেই কাজ চলছে সেই কাজ যেন তরান্বিত করা হয়। আমরাও আশাকরি দ্রুত যেন তাদের কাজগুলো হয়। তাদের আরেকটা দাবি আছে, তাদের বাজেট না কমানোর জন্য। তারা মনে করছেন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের বাজেট অপ্রতুল। আমরা মনে করি সরকার এই জিনিসগুলো দেখবেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আছে, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় আছে, ইউজিসি আছে, অনেকগুলো মিনিস্ট্রি রিলেটেড এই ক্ষেত্রে এদের মধ্যে সমন্বয় করে আমাদের কাজ করতে হবে। তারা বলার চেষ্টা করেছেন, তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করবেন। এখানে প্রধান উপদেষ্টার সহকারী রয়েছেন। আমরা মনে করি খুব শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও স্টেকহোল্ডারদের আলোচনা হবে। এবং দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান হবে। আমি শুধু দুঃখ জানাতে চাই, এরা আমাদের সঙ্গেই আন্দোলন করেছেন। যারা আন্দোলন করেছেন জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে তারা আমার ওপর হামলা করেনি। হামলা করেছেন এই আন্দোলনের নামে যারা সাবোটেজ করতে চেয়েছেন তারা।
মাহফুজ বলেন, প্রথম থেকে কথা ছিলো গতকালে (মঙ্গলবার) মিটিং হবে। সেই মিটিং তারা করেননি। কথা ছিলো আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে তাদের মিটিং হবে, সেটাও তারা করেননি। বরং তারা ন্যায্য মনে করেছেন, তারা এখানে চলে এসেছেন। শুধু এটাই বলতে চাই-চল চল যমুনায় যাই, এই রাজনীতি, এই মুভমেন্ট আমরা আর হতে দিবো না। আমরা এই বিষয়ে স্ট্রিক ভূমিকা নিবো। যথেষ্ঠ হয়েছে।
তার ওপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে যারা এই কর্মকাণ্ড করেছেন তারা অনেক বড় ভুল করেছেন। শিক্ষার্থীদের উচিৎ তাদেরকে আলাদা করে রাখা ও তাদেরকে চিহ্নিত করা। তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে সরকার ও প্রশাসনকে সাহায্য করা। কারণ এটি যদি তাদের সঠিক দাবি হয়েও থাকে, আমরা এই দাবির ন্যয্যতা অস্বীকার করছি না। কিন্তু আপনাদের দাবি এবং আপনাদের ওপর আজকের এই পুলিশের যেই অবস্থান সেই অবস্থানকে আপনারা ন্যয্যতা দিলেন আপনাদের অপকর্মের মাধ্যমে। এটা আপনাদের করা উচিৎ হয়নি। আমি এখানে আসার পরে যেটা হয়েছে, আমি মনে করি এরা সাবোটুর। এরা সাবোটাজ করার জন্যই বিভিন্ন আন্দোলনে প্রবেশ করে। আমি তাদের নাম উল্লেখ করবো না। মিডিয়ার দায়িত্ব, প্রশাসনের দায়িত্ব তাদের এবং তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা খুঁজে বের করা। আমি বলবো না। আপনারা খুঁজে বের করুন, দেখবেন একটি গ্রুপকেই পাওয়া যাবে। এবং গত ৮ মাস ধরে একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তির ওপর তাদের যেই আক্রোশ রয়েছে, যা অনলাইনে দেখা যায় তারা আজ এখানে দেখিয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে অনুরোধ, আপনাদের ন্যয্য দাবি সরকার শুনতে রাজি কিন্তু আপনারা সাবোটাজকারীদের আলাদা করুন। কীভাবে পুরান ঢাকা থেকে মিছিল নিয়ে তারা মৎস্য ভবন মোড়ে পৌঁছেন তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন উপদেষ্টা।
এসময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলন করবেন তখন অবশ্যই আপনারা তাদের সঙ্গে আগে সংলাপের চেষ্টা করুন। যদিও আজকে আমি দেখলাম শিক্ষকরা তাদের কাছে পরাজিত হয়েছেন। শিক্ষকরা তাদের কাছে অসহায়। এটা দেখা আমার জন্য দুঃখজন ছিলো। তারপরও তারা আমাদের শিক্ষক। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলবো, কয়েকজন শিক্ষক আহত হয়েছেন তার জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। শিক্ষার্থীদেরকে আমি বলবো, আপনাদের যেকোন ন্যায্য আন্দোলনের ক্ষেত্রে সরকার আপনাদের কথা শুনতে রাজি আছে। আপনারা দেখেন আমি কিন্তু সামনে এগিয়ে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছি কিন্তু তারা সেই মর্যাদা রাখেননি। আশাকরি তারা সেটা বুঝতে পারবে। এরপরও বলবো, আমরা বসতে চাই। আমরা এটাই জানাতে চাই, এই সরকার সবার কথা শোনে। এবং শুনে যেটা ন্যয্য মনে করে সেটাই করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। আর আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলবো, যে যাই দাবি নিয়ে আন্দোলন করুন না কেনো শুরুতেই শাহবাগ, যমুনায় না এসে আগে অথরিটির সঙ্গে আলাপ করুন। আন্দোলনকারী জবি শিক্ষার্থীদের প্রতি আহবান করে তিনি বলেন, আপনারা ক্যাম্পাসে ফিরে যান। শিক্ষকেরা যেনো তাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যান। তাদের দাবি যদি পুরণ না হয় তারা আবারো আমাদেরকে জানাতে পারবেন। আমরা বলতে চাই আমরা খুব দ্রুতই তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করবো।
এদিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর হামলার পর জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে লিখেছেন-‘একজন রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে মাহফুজ আলম সমস্যা সমাধানে গিয়েছিলেন, তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা কোনভাবেই প্রত্যাশিত নয়। এ কথা স্পষ্টভাবে মনে রাখা প্রয়োজন। আপনাদের প্রতিনিধিত্বের দাবি বলেই তিনি আপনাদের কাছে এসেছেন। কিন্তু এ ধরনের উগ্র ও হঠকারী আচরণ ভবিষ্যতে কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না, বরং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের গ্রহণযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে। মাহফুজ আলম আইনি পথে হাঁটবে কি না জানি না, তবে আন্দোলনের নেতৃত্বের উচিত প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করা এবং ভবিষ্যতে এমন ন্যক্কারজনক আচরণ পুনরাবৃত্তি না হওয়ার নিশ্চয়তা দেয়া।
তিনি লিখেন, সমালোচনা গণতান্ত্রিক অধিকার কিন্তু শারীরিক লাঞ্ছনা বর্বরতা, এবং সেটির কোনো যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা নেই। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের আচরণও সন্দেহজনক। সকল জনদাবির সম্মুখে ছাত্র উপদেষ্টাদের ঠেলে দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা স্পষ্ট। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বারবার আশ্বাস দেয়া হলেও সেটির বিষয়ে কেন এখনও যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়নি, সেটিও এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্পষ্ট করতে হবে।
পাঠকের মতামত
সরকারের স্থিতিশীলতা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি করা, উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করার জন্য সরকারের উচিত অনতিবিলম্বে, এই মুহূর্তে এবং এখনই দেশে সকল ধরনের, সভা-সমাবেশ, মিটিং, মিছিল, প্রতিবাদ বন্ধ করে দেয়া। বন্ধ না করলে পতিত হাছিনা সরকারের দোসর ও ভারতের এজেন্টরা এর সুযোগ নিয়ে যে কোনো সময় সরকারের উপর চরম আঘাত আনতে পারে। যা দেশ ও জাতির জন্য কঠিন বিপদের কারণ হতে পারে।
পাবলিকের মনে কস্ট দিয়ে, পাবলিক অপিনিয়নের বাইরে যেয়ে ডিল করা যায় না। বসে বসে ফেসবুকে স্ট্যাটাস মারানো অনেক সহজ, বাস্তবতা ভিন্ন।
এর সাথে কারা জড়িত তদন্ত করে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন। এ সংস্কৃতি সমূলে উচ্ছেদ করতে হবে। বর্তমানে যারা দেশ পরিচালনা করছেন তারা হয়ত নির্বাচিত প্রতিনিধি নন, কিন্তু তারা যে কোন সময়ের চেয়ে জনকল্যাণ করার চেষ্টা করছেন, জনগণের সমস্যাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাই এ ধরণের কাজ অত্যন্ত নিন্দনীয়।
মাহফুজ আলম এর উপর হামলার তীব্র নিন্দা জানাই সাথে সাথে মাহফুজ আলমরা মব পাঠিয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের ভয় দেখিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করেন সে কথাও মনে করে তার তীব্র নিন্দা জানাই। সবার শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।
NCP নেতার মাথায় পানির বোতল নিক্ষেপ - এই শারীরিক লাঞ্ছনা ভীষণ অপমান জনক, যা কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। ভাগ্যিস কাচের বোতল বা পাথর নিক্ষিপ্ত হয় নাই। আল্লাহ বাঁচিয়েছেন। কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন, এই NCP/বৈষম্য সদস্যরাই কলেজের সম্মানিত প্রিন্সিপাল কে, বিদ্যালয়ের সম্মানিত প্রধান শিক্ষককে এবং এমনকি মহিলা শিক্ষককেও গলা ধাক্কা দিয়ে, টেনেহিঁচড়ে তারা বের করে দিয়েছেন। এরূপ জঘন্য ঘটনা ২০২৪ এর পূর্বে যখন so called বৈষম্য ছিল তখনও ঘটে নাই। এরাই এখন আবার সামান্য পানির বোতল নিক্ষেপে অপমান বোধ করছেন