প্রথম পাতা
জবি শাটডাউন
স্টাফ রিপোর্টার
১৬ মে ২০২৫, শুক্রবার
দ্বিতীয় দিনেও কাকরাইল মসজিদের সামনে জবি শিক্ষার্থীদের অবস্থান -নিজস্ব ছবি
দাবি আদায়ে অবস্থান কর্মসূচিতে অনড় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। অবস্থান চলাকালে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ‘শাটডাউন’ ঘোষণা করা হয়েছে। ওদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে গতকালও কাকরাইল এবং আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন বহু মানুষ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বাসে করে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেন। বুধবার সকাল থেকে শুরু হওয়া কর্মসূচি রাতেও কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থানের মাধ্যমে অব্যাহত থাকে। অবস্থান চলাকালে শিক্ষার্থীদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাস শাটডাউন ঘোষণা করেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন। গতকাল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে চলমান আন্দোলনে এ ঘোষণা দেন তিনি।
অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন বলেন, আমরা এখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার নিয়ে এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি আদায়ের জন্য এসেছি। আমাদের ওপরে নির্বিচারে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। এটি সম্পূর্ণ অরাজকতা এবং অন্যায়। আমরা কারও বিরুদ্ধে এখানে কথা বলতে আসিনি। কোনো ষড়যন্ত্র করতে আসেনি। দাবি আদায় না করে আমরা ঘরে ফিরবো না। দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউন চলবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষা ও পরীক্ষা কার্যক্রম চলবে না। তিনি বলেন, আমাদেরকে এখান থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য যদি কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়, তাহলে ভালো হবে না। পুলিশ যদি গুলি করে প্রথম গুলি আমার বুকের উপর পড়বে, আমার চোখের সামনে আমার কোনো শিক্ষার্থীকে কেউ আঘাত করতে পারবে না। একটা খালি বোতল যদি আপনাদের গায়ে লাগে তাহলে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের যে রক্ত ঝরেছে সেটা আপনাদের গায়ে লাগে না?
কাকরাইল মসজিদ মোড়ে সরজমিন দেখা যায়, আন্দোলনকারীরা কেউ সড়কে শুয়ে, কেউ বসে স্লোগান দিচ্ছেন- আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম, দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ, লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই, চুপ কেন যমুনা, খালি হাতে ফিরবো না, আবাসন চাই বাঞ্চনা নয়। সকাল নয়টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্যের সামনে দিয়ে প্রায় ২৪টি বাসে শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মোড়ে আসেন। আন্দোলনকারীদের অবস্থানের কারণে কাকরাইল মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এতে কাকরাইল মোড় থেকে পল্টনের দিকে তীব্র যানজট দেখা যায়। দুপুর ১২টার দিকে ঝুম বৃষ্টি নামলেও আন্দোলনকারীরা অবস্থান ত্যাগ করেননি। তাদের অনেকে ছাতা মাথায় অবস্থান নেন, অনেকে বৃষ্টিতে ভিজেই দাবি আদায়ের স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী গান ও কবিতা আবৃত্তি করতে দেখা যায়।
ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সমপাদক রাকিব হাসান বলেন, আমাদের দাবি আদায়ে আমাদের বড় ভাইরাও এসেছেন, দেশের অন্যান্য স্থান থেকে ঢাকায় আসা বড় ভাইরাও আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুরাদ হাসান বলেন, সামান্য খালি বোতল তাদের গায়ে লাগে। অথচ নির্বিচারে গতকাল আমাদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে এটা তাদের গায়ে লাগে না। আমরা যে এত বছর ধরে কষ্ট করছি সেটা যাবে কোথায়? সংঘর্ষ করা আমাদের উদ্দেশ্য নয় আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে এখানে এসেছি।
উল্লেখ্য, চার দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। দাবির মধ্যে রয়েছে আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে আবাসন বৃত্তি কার্যকর করা, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কোনো কাটছাঁট না করে অনুমোদন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের প্রকল্প পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন এবং ১৪ই মে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের অতর্কিত হামলার বিচার নিশ্চিত করা। শিক্ষার্থীদের এই দাবির প্রতি শিক্ষকরাও সংহতি জানিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।