ঢাকা, ২৯ জুন ২০২৪, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২ জিলহজ্জ ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

ভারতের সঙ্গে চুক্তিতে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার
২৬ জুন ২০২৪, বুধবারmzamin

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে দেশটির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি-সমঝোতাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সমপ্রতি শেখ হাসিনা ভারত সফরে দেশটির সঙ্গে ২টি চুক্তি, ৫টি নতুন সমঝোতা ও ৩টি চুক্তি নবায়নসহ ১০টি চুক্তি সমঝোতা স্বাক্ষর হওয়ায় বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সম্পাদিত চুক্তিগুলোতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। চুক্তিগুলো বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী হওয়ায় বিএনপি এই চুক্তিগুলো প্রত্যাখ্যান করছে। আমি স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, বিএনপি সৃষ্টি হয়েছে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে। বিএনপি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, আমাদের কথা পরিষ্কার, আমাদের এই যে বক্তব্য এটা কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে নয়, এটা সরকারের বিরুদ্ধে। সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হচ্ছে ভারতের কাছ থেকে দাবিগুলো আদায় করে নিয়ে আসতে। আপনি (সরকার) অভিন্ন নদীগুলোর পানির হিস্যা না পেয়ে চুক্তি সই করতে চাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন
তিস্তার পানি আমাদের সবচেয়ে আগে দরকার। কিন্তু তিস্তা প্রকল্পের কাজ করতে চায় সরকার। কারণ প্রকল্প হলে অনেক টাকা। সেই টাকাই তাদের (সরকার) আসলে উদ্দেশ্য। ফখরুল ইসলাম বলেন, আজকে পত্রিকায় দেখলাম, পরিষ্কার করেই মমতা ব্যানার্জি বলে দিয়েছেন যে, পশ্চিম বাংলাকে বাদ দিয়ে এটা করা যাবে না, তারা দেবে না। এজন্য আপনাকে তো অবশ্যই চাপ প্রয়োগ করা দরকার। ফারাক্কা তো একদিনে হয়নি, যতটুকু পাওয়া গেছে, সেটা আন্দোলন করেই পাওয়া গেছে, ফারাক্কার ইস্যুটি দেশে-বিদেশে-ইউনাইটেড ন্যাশনসে তোলা হয়েছিল। এই সরকার এসব বিষয়ে (অভিন্ন নদী-তিস্তার পানির হিস্যা) জাতিসংঘে উত্থাপন করে নাই। আমরা অভিন্ন নদীর পানি পাচ্ছি না। এটাতে সমগ্র দেশের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে তাদের জীবন-জীবিকা থেকে, তাদের সবকিছু নির্ভর করে এসব নদীর উপরে। কোটি কোটি মানুষ এই পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-তিস্তা এসব নদীর অববাহিকায় বাস করে। তাদের মাছ ধরা, পানি আনা সবকিছু নির্ভর করে এই নদীগুলোর ওপরে, সেখানে এসব নদীর হিস্যার ব্যাপারে কোনো কথাই নাই। দেখবেন এসব চুক্তিতে কোথাও এই হিস্যা নিয়ে একটা কথাও নাই। এটা থেকে বুঝা যায় আসলে এই সরকার দেশপ্রেমিক সরকার নয়, বাংলাদেশবিরোধী একটা সরকার।

চুক্তিতে বাংলাদেশের লাভ কী-এমন প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনার চিকেন নেটটাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে করিডোর তৈরি করা এটাতে বাংলাদেশের লাভ কী? কোথায় বলতে পারেন? সম্পূর্ণ লাভ তার (ভারতের)। এটা ভারতবিরোধী নয়। আমাদের প্রশ্ন আমাদের স্বার্থে। দরকার কখনো বন্ধ হবে না, খোলা থাকবে। কানেকটিভিটি আমার স্বার্থে হতে হবে, আমার স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে হবে না। আমার নদীর পানির ন্যায্য হিস্যাকে বাদ দিয়ে কোনো চুক্তি হবে না। সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনি অভিন্ন নদীর পানির ব্যাপারে কোনো কিছুই করছেন না। সীমান্তে মানুষ হত্যা করছে, আপনি কিছুই বলছেন না। আপনি কী করেছেন? চুক্তি করছে। এই চুক্তিতে এসব বিষয়ে একটা কথা আছে, একটাও নাই। আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে, একজন দেশপ্রেমিক সে তার দেশের স্বার্থ আগে দেখতে হবে। উনি নিজেই বলেছেন যে, আমি সব কিছু উজাড় করে দিয়ে দিয়েছি। উজাড় করে দিয়ে তো রেজাল্ট পেয়েছেন। এবারো উজাড় করে দিয়ে এসেছেন, আবার রেজাল্ট পাবেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা, সীমান্ত হত্যা, কানেকটিভিটির নামে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত রেল যোগাযোগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগের সমঝোতা, কৌশলগত ও অপারেশনাল খাতে সামরিক শিক্ষা সহযোগিতা, ওষুধ সংক্রান্ত সমঝোতা, বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতের অবাধ বিচরণ এবং ভারতের ইনস্পেস ও বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা, রেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা, সমুদ্র বিষয়ক গবেষণায় দুই দেশের সমঝোতাগুলোতে দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে। ভারতকে সকল প্রকার সুবিধা প্রদানের বিনিময়ে ভারতের কাছে বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ আদায় করতে শেখ হাসিনা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এটা ম্যান্ডেটবিহীন অবৈধ সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বহিঃপ্রকাশ। এই সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে ভারতের উপর নির্ভরশীল করে ফেলেছে।

গণতান্ত্রিক পুনরুদ্ধার থেকে বিএনপি সরে যায়নি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা কোনো আন্দোলন থেকে সরে যাইনি। বিএনপি গত ১৫/১৬ বছরে যে আন্দোলন করেছে, এই আন্দোলনগুলোকে খাটো করে দেখার কোনো কারণ নেই। আমাদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে কয়েক শ’ মানুষ প্রাণ দিয়েছে, এই আন্দোলনে ২২/২৩ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে, ২৭ হাজার লোককে দু’দিনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এই ভয়াবহ সরকারের যে নিবর্তনমূলক, নির্যাতনমূলক দমননীতি এটার কারণেই হয়তোবা সাফল্য আসেনি এখন পর্যন্ত। কিন্তু কোনো দিনই ন্যায়ের পথে আন্দোলন ব্যর্থ হয় না, আমাদের এটাতেও অবশ্যই সাফল্য আসবে। আমরা কখনো ওই আন্দোলন থেকে সরে যাইনি। বেগম খালেদা জিয়া হচ্ছেন গণতন্ত্রের প্রতীক। তাকে মুক্তি করার অর্থ প্রাথমিকভাবে গণতন্ত্র মুক্ত করার মতোই। আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন থেকে সরে যাইনি, বেগম জিয়া মুক্তির আন্দোলন থেকে আমরা সরে যাইনি, এটা বাস্তবতা। সি ইজ সিম্বল অব ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট, দুই আন্দোলনকে আলাদা করে দেখা যাবে না।

খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, হৃদপিণ্ডে পেসমেকার বসার পরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল। মঙ্গলবার পর্যন্ত আমি যতটুকু জানি, গত সোমবার তাকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে, তা করার কথা না। তিনি সিসিইউতে ব্যক্তিগতভাবে কিছুটা এডজাস্ট করতে পারেন না যে কারণে সিসিইউর ফ্যাসিলিটিজগুলো কেবিনে নিয়ে তাকে শিফট করা হয়েছে। সেখানে তিনি এখন পর্যন্ত স্ট্যাবেল আছেন। তিনি বলেন, এই সরকারের মূল লক্ষ্যটা হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়া। সেই কারণেই তাকে একেবারে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে, তার এতে কোনো সম্পৃক্ততা নেই, তাকে সাজা দিয়ে এবং পরবর্তীকালে হাইকোর্টে আরও বেশি সাজার মেয়াদ বাড়িয়ে তাকে নির্যাতন করা হচ্ছে। আপনারা জানেন, দুই বছর একটা পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে ছিলেন; সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বার বার চেষ্টা করার পরেও সেখানে ভালো চিকিৎসক পাঠানো হয়নি। বহু চেষ্টার পর যখন তাকে পিজি হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো সেখানেও তিনি সুষ্ঠু চিকিৎসা পাননি। এরপর যখন তাকে বাসা (গুলশানের ফিরোজা) নিয়ে আসা হলো, সেটাও আবার শর্ত সাপেক্ষে যে, তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না, দেশেই চিকিৎসা নিতে হবে। তখনই তার ধরা পড়লো লিভার সিরোসিস। এটা ছোটখাটো রোগ নয়, সিরোসিস ইটস এ মেজর ডিজিজ। তখন ডাক্তাররা আমাদেরকে বলেছিলেন যে, লিভার ট্রান্সপ্লান্ট ছাড়া তার কোনো পথ নেই। এটা বাংলাদেশে সম্ভব নয়।

ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, আমরা কম চেষ্টা করিনি। সরকারের এখানে কোনো কৃতিত্ব নাই। আমরা এখন পর্যন্ত যেটুকু করেছি, সেটুকু হচ্ছে তার পরিবার এবং দলের চেষ্টাতেই সেটা হয়েছে। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিংস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক্তারদের নিয়ে এসেছি। তারা যে প্রসিডিউর করেছেন, সেই প্রসিডিউরে তিনি এখন পর্যন্ত টিকে আছেন। এটা কোনো সমাধান নয়। একমাত্র সমাধান হচ্ছে তার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা। তার যে অনেকগুলো অসুখ আছে, সেই অসুখের জন্য তাকে এমন চিকিৎসা সেন্টারে পাঠাতে হবে, সেখানে তার সঠিক চিকিৎসা করতে হবে। অন্যান্য অসুখগুলো কন্ট্রোল করে, এটাই আমরা বার বার করে বলছি।

প্রধানমন্ত্রীর কারণে খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, তাকে (খালেদা জিয়া) বাইরে পাঠানোর জন্য সব ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছিল। তার পরিবার আবেদন করেছিল। ফাইনালি যখন এটা (আবেদন) প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেছে, প্রধানমন্ত্রী এটা রিজেক্ট করেছেন। শুধু এটা নয়, আমরা বিভিন্ন মিশনগুলোর কাছেও চিঠি দিয়েছিলাম। তারা চেষ্টা করেছেন, তারা বার বার চেষ্টা করেছেন, ফেরত এসেছেন। তারা বলেছেন যে, সরি ভাই, উনি শুনলেন না, সি ইজ ভেরি ভিনডিক্টিভ, এই উচ্চারণটা করেছেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এর উদ্দেশ্যটা কী? উদ্দেশ্যটা হচ্ছে, রাজনীতি থেকে তাকে দূরে সরিয়ে রাখা। দেখেন ২০১৮ সালের নির্বাচনের ঠিক আগে আগে তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হলো এবং তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হলো। এই যে বিষয়টা, তারপর থেকে তিনি যাতে কোনো মতেই মুক্তি না পান তা চলছে এখন পর্যন্ত।
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status