প্রথম পাতা
নিয়তির লেখা কি পাল্টাবে?
সৌরভ কুমার দাস
২৯ জুন ২০২৪, শনিবারপ্রোটিয়ারা এর আগে সব ফরম্যাট মিলিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলেছে সাত সাতবার। কিন্তু শেষ চারের বাধা টপকে কখনোই ফাইনালে পা রাখতে পারেনি। বড় মঞ্চে চাপের মুখে ভেঙে পড়ার অভ্যাস নিয়ে ‘চোকার’ তকমাও জুটেছে তাদের। তবে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চিত্র ভিন্ন। প্রথমবারের মতো আইসিসি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এবার কি নিয়তি পাল্টাবে?
২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বসে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসর। মহেন্দ্র সিং ধোনির অধিনায়কত্বে প্রথম আসরেই শিরোপা জেতে ভারত। সেখানেই শেষ, এরপর গত ৮ আসরে একবারো শিরোপার স্বাদ পায়নি তারা। অন্যদিকে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে এবারই প্রথম কোনো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সবমিলিয়ে ভারত সর্বশেষ আইসিসি’র কোনো ট্রফি জিতেছে ১৩ বছর আগে।
দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলোতে সারা বছরই দাপট দেখায় ভারত। তার সৌজন্যে র্যাঙ্কিংয়েও থাকে উপরের দিকে। কিন্তু আইসিসি ইভেন্টের নকআউট ম্যাচ এলেই যেন আর পেরে ওঠে না তারা। সর্বশেষ গত অক্টোবরে টানা ১০ ম্যাচ জিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে ভারত। ওই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরে শিরোপা বঞ্চিত হয় দলটি। এর আগে ২০২২ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারে ১০ উইকেটে। তার আগে ২০১৯ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সবমিলিয়ে আইসিসি ট্রফি যেন অধরাই থাকে তাদের জন্য।
২০১৩ সালে ধোনির নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা জেতে ভারত। এর আগে ২০১১তে ওয়ানডে ও ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ৬ বছরের মধ্যে ৩টি শিরোপা জেতা ভারত এরপর গত ১১ বছরে প্রতি আসর থেকেই ফিরেছে খালি হাতে। এবার আরও একবার সেই খরা কাটানোর সুযোগ তাদের সামনে।
ফাইনালের আগে নিজেদের শান্ত রাখতে চান ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তিনি বলেন, ‘আমরা টিম হিসেবে খুবই শান্ত। ম্যাচটির (ফাইনাল) মর্মার্থটা আমরা বুঝি। তবে আমাদের জন্য শান্ত থাকা গুরুত্বপূর্ণ। শান্ত থাকলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া যায়।’
এই বিশ্বকাপে ভারতের জন্য সবচেয়ে স্বস্তির জায়গা অধিনায়ক নিজেই। ২৫৫ রান করে এবারের আসরের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান করেছেন রোহিত। কিন্তু তার চেয়ে বড় বিষয়, আগ্রাসী শুরু এনে দিচ্ছেন দলকে। পরের ব্যাটারদের জন্য সেটা বড় সংগ্রহ গড়তে সাহায্য করছে। সূর্যকুমার যাদব, ঋষভ পান্তরা ভরসা দিচ্ছেন মিডল অর্ডারে। আর হার্দিক পান্ডিয়া প্রায় প্রতি ম্যাচে খেলছেন ব্যবধান গড়ে দেয়া ইনিংস। বোলিংয়ে স্পিন ত্রয়ী রবীন্দ্র জাদেজা, অক্ষর প্যাটেল ও কুলদীপ যাদব হয়ে উঠেছেন প্রতিপক্ষের আতঙ্ক। পেস বিভাগে জাসপ্রীত বুমরাহর মতো সময়ের সেরা বোলার আছেন। বাঁহাতি পেসার আর্শদীপ সিং সুইং দিয়ে নাচাতে পারেন প্রতিপক্ষের টপ অর্ডার। তবে বিরাট কোহলির ফর্ম দলটির মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে।
অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা এবার ফাইনালে উঠেই ঘুচিয়েছে আজন্মের আক্ষেপ। প্রতি আসরেই ফেভারিটের তকমা নিয়ে দাপট দেখিয়ে শুরু করে তারা। কিন্তু সেমিফাইনালে গেলেই যেন ক্রিকেটটাকেই ভুলে যায় দলটি। সর্বশেষ গত নভেম্বরে গ্রুপ পর্বে দাপট দেখিয়ে সেমিতে আটকে যায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। নকআউট ম্যাচে জেতা ম্যাচ হারার জন্য তো চোকার্স তকমা অনেক আগে থেকেই সঙ্গী তাদের। তবে এবার পরিস্থিতিটা ভিন্ন!
গ্রুপ পর্বে ৪ ম্যাচের দুটিতে হারের কাছে গিয়েও জয় নিয়ে ফিরেছে প্রোটিয়ারা। বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪ রানে ও নেপালের বিপক্ষে জিতেছে ১ রানে। এরপর সুপার এইটে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এবং অঘোষিত নকআউট ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে স্নায়ুচাপ সামলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে তারা। ফলে চোকার্স তকমা ঘোচানোর এটাই সেরা সুযোগ তাদের। ক্রিকেট বোদ্ধাদের অনেকের মতে, দক্ষিণ আফ্রিকা এখন স্নায়ুচাপ সামলানো শিখেছে।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ফাইনালে নেতৃত্ব দিবেন এইডেন মার্করাম। এই ডানহাতি ব্যাটারের অধিনায়কত্বেই ২০১৪ সালে যুব বিশ্বকাপ জিতেছে প্রোটিয়ারা। ফলে এবার জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবেও একই ইতিহাস পুনরাবৃত্তি করতে চাইবেন তিনি।
দলটিতে আছেন অন্যতম বিধ্বংসী ওপেনার কুইন্টন ডি কক। তরুণ রেজা হেন্ড্রিকস, তিনে মার্করাম টপ অর্ডারের ভরসা। মিডল অর্ডারে হেনরি ক্লাসেন সময়ের অন্যতম সেরা আগ্রাসী ব্যাটার। যেকোনো উইকেটে প্রতিপক্ষের বোলারদের লাইন এলেমেলো করে দিতে পারেন। বোলিংয়ে যেমন দক্ষ, তেমনি ব্যাট হাতেও দারুণ ক্যামিও খেলতে পারেন মার্কো ইয়ানসেন। এ ছাড়া কাগিসো রাবাদা, স্পিনার কেশব মহারাজ ও তাবরিজ শামসি দলটির ভরসার জায়গা।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২৬ বারের দেখায় ভারতের জয় ১৪ ম্যাচে। ১১ ম্যাচে জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এরমধ্যে ভারত আগে ব্যাটিং করে জিতেছে ১০ ম্যাচে আর প্রোটিয়ারা ৩ ম্যাচে। লক্ষ্য তাড়ায় সফল আফ্রিকা জিতেছে ৮ ম্যাচে, ভারতের জয় ৪টিতে। ভারত সর্বোচ্চ ১৭৬ রান তাড়া করে জিতেছে। আর দক্ষিণ আফ্রিকা ২১২ রান। ১৫২ রান করে সেটা ডিফেন্ড করেছে ভারত, এক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বনিম্ন ১৩০।
আজ যে মাঠে ম্যাচ হবে, সেই কেনসিংটোন ওভালে ৩২ ম্যাচের মধ্যে ১৯ বার আগে ব্যাটিং করা দল জিতেছে। প্রথম ইনিংসে গড় সংগ্রহ ১৫৩। সর্বোচ্চ ১৭২ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড আছে এই মাঠে। ভারত এই মাঠে ৩ ম্যাচ খেলে জয় পেয়েছে ১টিতে। আর সমান ম্যাচ খেলে প্রোটিয়াদের জয় ২ ম্যাচে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভারতের সেরা ব্যাটার রোহিত শর্মা। ১৭ ম্যাচে করেছেন ৪২০ রান। একটি সেঞ্চুরি ও দুটি ফিফটি আছে তার। আর ভারতের বিপক্ষে ৪৩১ রান নিয়ে প্রোটিয়াদের সেরা ডেভিড মিলার। একে অপরের বিপক্ষে দু’জনেরই ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ সংগ্রহ ১০৬ রান।
বোলিংয়ে ভারতের সেরা ভুবনেশ্বর কুমার। তবে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ১৪ উইকেট নেয়া এই পেসার এবার দলে নেই। আফ্রিকার সেরা কেশব মহারাজ নিয়েছেন ১০ উইকেট।