প্রথম পাতা
জুনে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ আরও বেড়েছে
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২৮ জুন ২০২৪, শুক্রবার২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ব্যাংক খাত থেকে সরকার নিট (প্রকৃত) ঋণ করেছে ৬৬ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। এ সময়ে ব্যাংক থেকে অর্থ ধারের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৪০ শতাংশ নেয় সরকার। বেসরকারি খাতে ঋণের সহজলভ্যতা তখনো পর্যন্ত ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা না দেয়ায়- এটা হয়তো ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারদের সন্তুষ্ট করতে পারতো। তবে কিছুদিনের ব্যবধানেই বদলে যায় পরিস্থিতি, যখন চলতি জুনের প্রথম ১৩ দিনেই ব্যাংকগুলো থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ধার করে সরকার। আগের ১১ মাসে নেয়া ধারের চেয়ে যা অর্ধেকের বেশি। এর মধ্যে আবার ১৫ হাজার কোটি টাকাই দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন সরাসরি সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ড কিনছে না, ফলে এখানে নতুন করে ডেভলপমেন্ট বাড়ছে না। বরং বাংলাদেশ ব্যাংক অ্যাডভান্স ও ওভারড্রাফটের মাধ্যমে সরকারকে ধার দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের টাকা ধারের ৩টি উপায়ের একটি হচ্ছে ওয়েজ অ্যান্ড মিনস অ্যাডভান্স। অন্য দু’টি হচ্ছে ওভার ড্রাফট ও ডেভলপমেন্ট। সরকারের রাজস্ব ও ব্যয়ের স্বল্পমেয়াদি ঘাটতি পূরণের জন্য নেয়া সাময়িক ঋণ হচ্ছে ওয়েজ অ্যান্ড মিনস অ্যাডভান্স।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংক খাত থেকে ধার করার ধারবাহিকতা অব্যাহত থাকলে লেন্ডিং রেট (বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর অর্থ ধারে সুদের হার) আরও বাড়তে পারে। এতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো চাপের মধ্যে পড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, সরকারকে ধার দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে পদ্ধতি বা উপায়ই ব্যবহার করুক না কেন, তাতে অর্থনীতিতে তারল্য চলে আসে, ফলে সেটা সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির পরিপন্থি হয়ে ওঠে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতির ওপর এর প্রভাব পড়ে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ১১ মাসে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে ৮১ হাজার ৭০২ কোটি টাকা ঋণ করে ১৪ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সরকার। এতে নিট বা প্রকৃত ধারের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৬ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ২৭ শতাংশ কম। তবে সংশোধিত বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, জুনে ৮৯ হাজার ২১১ কোটি টাকা ধার করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ নেয়া তুলনামূলকভাবে কম ছিল, তবে জুনের শুরু থেকে তা অনেকটা বেড়েছে। এ পর্যন্ত ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ধার ১ লাখ কোটি টাকা পার করেছে। কেবলমাত্র জুন মাসের প্রথম ১৩ দিনেই ব্যাংক খাত থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ধার বাড়িয়েছে সরকার। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকা নেয়া হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অনুযায়ী, ব্যাংক খাত থেকে ধার করার লক্ষ্যমাত্রা ২৩ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মে মাস শেষের ব্যালেন্স অনুযায়ী সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধার কিছুটা পরিশোধ করেছে। তবে জুন মাসের শুরু থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার বাড়তে শুরু করেছে। পরিশোধ করা টাকা তুলে নেয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নতুন ধারও নিচ্ছে সরকার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলো বেশি সুদের হার দাবি করায় সরকারকে ব্যাংক খাত থেকে ধার দেয়ার অন্যতম মাধ্যম ট্রেজারি বিল ও বন্ডের একটা অংশ অবিক্রিত থাকছে। যেমন- ১০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে গত ২৩শে জুন ৩ বছর থেকে এক বছর ম্যাচুরিটির ট্রেজারি বিল নিলামে তোলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, তবে অংশগ্রহণকারী ব্যাংকগুলো আরও উচ্চ সুদ দাবি করায়, শেষপর্যন্ত নিলাম থেকে সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৫ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের শুরুর দিকে ট্রেজারি বিলের সুদের হার ছিল সর্বোচ্চ ৮.৬০ শতাংশ, এখন সেটি বেড়ে ১২ শতাংশ হয়েছে। ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার ছিল ৯.১০ শতাংশ, যেটি এখন বেড়ে হয়েছে ১২.৭৫ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম বলেন, এক মাসেই যদি সরকার ব্যাংক খাত থেকে এত বেশি ধার করে তাহলে ‘ক্রাউডিং আউট’ হবে। অর্থাৎ, বেসরকারি খাত ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত ঋণ পাবে না। এটা জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমিয়ে দেবে।