ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৪, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪ জিলহজ্জ ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

মাঠে ফেরার চেষ্টায় বিএনপি

কিরণ শেখ
২৯ জুন ২০২৪, শনিবার

রাজপথে আবারো সক্রিয় হতে চাইছে বিএনপি। আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে ফের মাঠের তৎপরতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে দলটি। এরই অংশ হিসেবে প্রথম দফায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এরপর আবার নতুন কর্মসূচি দেয়া হবে। তবে সেই কর্মসূচি এখনো নির্ধারিত হয়নি। ঘোষিত তিনদিনের কর্মসূচি সফল করতে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন নেতারা। এজন্য নেয়া হয়েছে নানা পরিকল্পনা ও কর্ম-কৌশল। ঢাকায় বিভিন্ন ওয়ার্ড এবং থানায় থানায় যৌথসভা এবং কর্মিসভার পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগেও নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কাছে বার্তা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোকেও আজ নয়াপল্টনে সমাবেশে সর্বোচ্চ কর্মী নিয়ে অংশগ্রহণ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা বিএনপি ওয়ার্ড ও থানার নেতাকর্মীদের যৌথসভা এবং বৈঠকও করেছেন।

বিজ্ঞাপন
এদিন শুধু নয়াপল্টন নয় এর আশপাশের এলাকায়ও লোকসমাগম করার চিন্তা রয়েছে। সমাবেশে ব্যাপক লোকসমাগমের মাধ্যমে বড় শোডাউন করতে চাইছেন দলের সর্বোচ্চ হাইকমান্ড। এর মধ্যদিয়ে দেশে-বিদেশে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দিতে চায় দলটি। 

গত ২৮শে অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপি’র মহাসমাবেশ এবং নির্বাচনকে ঘিরে আন্দোলনে গতি হারানোর পর এক ধরনের হতাশা তৈরি হয় নেতাকর্মীদের মাঝে। এই অবস্থায় তৃৃণমূলের নেতাকর্মীদের আবারো উজ্জীবিত করে মাঠে ফেরানোর জন্য নানা তৎপরতা শুরু করেছেন বিএনপি’র হাইকমান্ড। 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন জোরদার করা হবে। এই দাবি জনগণকে সঙ্গে নিয়েই করছি। আর আন্দোলন হবে জনগণকে সঙ্গে নিয়েই। খালেদা জিয়াকে তার প্রাণরক্ষা করা, তাকে মুক্ত বাতাসে রাজনীতি করার সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য জনগণ আপ্রাণ চেষ্টা করবে এবং আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। এই মুক্তির আন্দোলনের সঙ্গে আপামর জনসাধারণ একাত্ম হবেন। আর যারা যুগপৎ আন্দোলন করেছেন, তারাও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলেছেন।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গত বুধবার ৩ দিনের সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। কর্মসূচিগুলোর মধ্যে রয়েছে: বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আজ রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ, ১লা জুলাই সারা দেশের মহানগরগুলোতে এবং ৩রা জুলাই জেলা সদরগুলোতে সমাবেশ করবে দলটি।

বিএনপি’র সিনিয়র পাঁচ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার ইস্যুতে কর্মসূচির মধ্যদিয়ে সারা দেশের দলের নেতাকর্মীদের আবারো চাঙ্গা করতে চায় বিএনপি। এরমধ্যে দিয়ে দলের নিস্ক্রিয় ও হতাশাগ্রস্ত নেতাকর্মীদের রাজপথে ফিরিয়ে আনতে চায় তারা। এর বাইরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতিসহ জনসম্পৃক্ততামূলক ইস্যুতে কর্মসূচির চিন্তা রয়েছে দলটির। পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের হওয়া ১০টি চুক্তিকে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী বলছে দলটি। ইতিমধ্যে এই চুক্তিগুলো প্রত্যাখ্যানও করছে বিএনপি। এর প্রতিবাদেও কর্মসূচির দেয়ার চিন্তা রয়েছে তাদের। তবে এ বিষয়ে আগে সংবাদ সম্মেলন করে দলের অবস্থান তুলে ধরবে। পরবর্তীতে এই ইস্যুতেও কর্মসূচি দেবে। এই লক্ষ্যে গত সোমবার রাতে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়াল বৈঠক হয়। বৈঠকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই লক্ষে কর্মসূচি দেয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এসব কমসূচিতে একদফা আন্দোলনে শরিক দল এবং জোটগুলোকেও সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। আগামী ৫ই জুলাই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই কর্মসূচি পালন করবে মঞ্চ।

বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সমাবেশ সফল করার জন্য বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে সমন্বয়ক করে পর্যায়ক্রমে নানা প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইতিমধ্যে সমাবেশ সফল করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, আজ একটি ঐতিহাসিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

গাজীপুর জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। কেন্দ্র থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি এবং বিদেশে তার সুচিকিৎসার দাবিতে রাজপথে আন্দোলন জোরদার করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ শুরু করেছি। আজকেও ঢাকায় সমাবেশে আমাদের যোগ দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকেই আমরা সভা করে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা সর্বোচ্চ নেতাকর্মীদের নিয়েই সমাবেশে অংশগ্রহণ করবো।

এদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি এবং কেন্দ্রীয় যুবদলের কমিটি ভেঙে দেয়া হয়েছে। এতে ঢাকার কর্মসূচিতে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তবে একথা মানতে নারাজ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এতে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। কারণ নেতাকর্মীরা যার যার জায়গা থেকে কাজ করছেন। জানা গেছে, আজকের সমাবেশকে ঘিরে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি’র নেতাকর্মীরা এবং পদপ্রত্যাশীরা যার যার অবস্থান থেকে কাজ করছেন। তাদের মতো করে ঢাকায় বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানায় যৌথসভা এবং বৈঠকও করেছেন। একই কাজ করেছেন বিলুপ্ত যুবদলের নেতাকর্মী এবং পদপ্রত্যাশীরা। পাশাপাশি ঢাকা বিভাগের জেলাগুলো খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন জোরদার করার ম্যাসেজ দেয়া হয়েছে কেন্দ্রে থেকে। তারা সেই অনুযায়ী ইতিমধ্যে কাজও শুরু করেছেন। প্রস্তুতি সভা, যৌথসভাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করছে। এ ছাড়া আজকের কর্মসূচি বিএনপি’র অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও আসবেন।

মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এসএ জিন্নাহ কবীর মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আগামী ৩রা জুলাই জেলা সমাবেশের জন্য আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছি। আর আজকে ঢাকায় সমাবেশে যাওয়ার জন্য কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা আজ সর্বোচ্চ নেতাকর্মীদের নিয়ে নয়াপল্টনে সমাবেশে যোগ দেয়ার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করেছি। এজন্য আমরা প্রতিনিয়তই যৌথসভাসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সভাও করেছি।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র সাবেক সদস্য সচিব আমিনুল হক মানবজমিনকে বলেন, কমিটি না থাকলেও কোনো সমস্যা হবে না। কারণ ওয়ার্ড এবং থানা কমিটি রয়েছে। আর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমাদের সঙ্গে যৌথসভা করেছেন। সেখানে বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। যার যার ব্যক্তি উদ্যোগেও সমাবেশে যোগ দেবেন নেতাকর্মীরা। আর আমরা ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি সর্বোচ্চ নেতাকর্মীদের নিয়ে সমাবেশে অংশগ্রহণ করবো।

যুবদলের সাবেক নেতা গোলাম মাওলা শাহীন মানবজমিনকে বলেন, আমরা আজকের সমাবেশে বড় শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছি। সভা করে কর্মীদের বিভিন্ন দিক-নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। আর যুবদলের সর্বোচ্চ নেতাকর্মী আজকের সমাবেশে আসবে। সেই প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।

ওদিকে আজ নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি’র পূর্বঘোষিত সমাবেশের বিষয়ে প্রশাসনকে অবহিত করতে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) গিয়েছিলেন বিএনপি’র একটি প্রতিনিধিদল। সেখানে প্রতিনিধিদলটি অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তারের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ বিষয়ে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী মানবজমিনকে বলেন, আমরা সহযোগিতা চেয়েছি। তারা (পুলিশ) আমাদেরকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা আমাদের নেত্রীর মুক্তির দাবিতে সমাবেশ করতে অটল আছি। আজ ঢাকাসহ এর আশপাশের জেলাগুলো থেকে আমাদের নেতাকর্মীরা আসবেন। আমরা সফল একটি সমাবেশ করবো।

পাঠকের মতামত

বিএনপি ৬ মাসে দল গোছায়ে আন্দোলন শুরু করে আর সরকার লাঠির এক কোপে তা তছনছ করে দেয় আর ৬ মাস পিছিয়ে দেয় এভাবেই চলছে।

A R Sarker
২৯ জুন ২০২৪, শনিবার, ৭:৪৬ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status