প্রথম পাতা
প্রধান দুই বাজারে পোশাক রপ্তানি আরও কমেছে
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২৮ জুন ২০২৪, শুক্রবারইউরোপে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার জার্মানি। এই বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ধস নেমেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, আগের অর্থবছরের ১১ মাসের (২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-মে) তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই ১১ মাসে দেশটিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ১০.১২ শতাংশ। জার্মানির পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রেও পোশাক রপ্তানি পরিস্থিতি ভালো নয়। এমনকি ভারতেও পোশাক রপ্তানি কমে গেছে। এতে কিছুটা উদ্বিগ্ন পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা।
তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ইউরোপে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার জার্মানির অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি চাপে আছে। এ কারণে দেশটি এখন আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে আমাদের পোশাক রপ্তানিতে। দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো হলে আমাদের পোশাক রপ্তানিও বাড়বে। তিনি জানান, মূল্যস্ফীতির কারণে ইউরোপীয় জোটভুক্ত দেশগুলোতে গত কয়েক বছরে ধীরে ধীরে তৈরি পোশাকের বাজার সংকুচিত হচ্ছে।
ইপিবি’র হিসাবে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসে জার্মানির বাজারে ৫৪২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে জার্মানিতে পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৬০৩ কোটি ডলারের। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় ১০১ কোটি ডলারের। এই অর্থবছরের (জুলাই-মে) ১১ মাসে মাসে রপ্তানি হয়েছে ৭২ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ভারতে পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৯৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার।
ইপিবি’র তথ্যে দেখা গেছে, শুধু জার্মানি নয়, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসের হিসাব বলছে ইতালিতেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে ৬.১০ শতাংশ, ভারতে কমেছে ২৩.১১ শতাংশ। বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বর্তমান বাজার মন্দার কারণে ক্রেতারা আমাদের এখানে অর্ডার কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, শুধু ইউরোপ নয়, সার্বিকভাবে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে একটা নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে পোশাক রপ্তানি ৩.৪৩ শতাংশ কমে ৭.৪৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্য ও কানাডায় পোশাক রপ্তানি হয়েছে যথাক্রমে ৫.১৫ বিলিয়ন ডলার এবং ১.৩ বিলিয়ন ডলার।
ইপিবি’র তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে মাসে অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭.৬৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ৬.৪৭ শতাংশ বেড়ে ৮.১৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। প্রধান অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি যথাক্রমে ১.৮৩ শতাংশ, ১১.৭৬ শতাংশ এবং ১৪.৩৪ শতাংশ বেড়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে এই ১২ মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২১.৬৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি। এই ১১ মাসে স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড ও ডেনমার্কে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যথাক্রমে ৬.২৩ শতাংশ, ১.০২ শতাংশ, ১৬.২৭ শতাংশ, ১৭.২৮ শতাংশ এবং ২৬.৯৬ শতাংশ বেড়েছে।
ইপিবি’র তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসে মোট পণ্য রপ্তানির ৮৫ শতাংশ আয় তৈরি পোশাক খাত থেকে এসেছে। এ সময় ৪ হাজার ৩৮৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২.৮৬ শতাংশ বেড়েছে। এই ১১ মাসে নিট পণ্য (সোয়েটার, টি-শার্ট) রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৪৭০ কোটি ডলারের। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৬.১৫ শতাংশ। অন্যদিকে ওভেন পোশাক (শার্ট, প্যান্ট) রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৯১৪ কোটি ডলারের, যা আগের বছরের থেকে ১.০৯ শতাংশ কম। ইপিবি’র তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩৩৫ কোটি ডলারের, যা আগের বছরের থেকে ১৭.১৯ শতাংশ কম।
ইইউ’র পরিসংখ্যান অফিস ইউরোস্ট্যাট প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানের তথ্য বলছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের তুলনায় এ বছরের একই সময়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আমদানি প্রায় ৯.৮৫ শতাংশ কমিয়েছে ইইউ। ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে বাংলাদেশ থেকে ইইউ’র দেশগুলো পোশাক আমদানি করে ৭১৩ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৯২৫ ইউএস ডলারের, যা ২০২৪ সালের একই সময়ে হয় ৬৪৩ কোটি ২ লাখ ৫৫ হাজার ৬৫০ ইউএস ডলার। অর্থাৎ ইইউ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি কমিয়েছে ৭০ কোটি ৩৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৭৫ ইউএস ডলার। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৯.৮৫ শতাংশ কম।