শেষের পাতা
বাংলাদেশ কি জিততে চেয়েছিল?
সৌরভ কুমার দাস
২৪ জুন ২০২৪, সোমবার
ভারতের বিপক্ষে ৫০ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। খেলায় যে কেউ হারতে পারে আবার জিততে পারে। তবে ভারতের বিপক্ষে হারের পর সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্ন হচ্ছে, ‘বাংলাদেশ আদৌ জিততে চেয়েছিল কিনা।’ একটা টেস্ট খেলুড়ে দেশের জন্য এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে। প্রশ্নটা কিন্তু এমনি এমনি ওঠেনি, বাংলাদেশ দলই এটা উঠতে বাধ্য করেছে। শনিবার টাইগারদের লক্ষ্য ছিল ১৯৭। লক্ষ্য বড় হলেও উইকেট বিবেচনায় অন্তত লড়াই করার কথা ছিল! কিন্তু বাংলাদেশ সেটা পারেনি, বলা ভালো পারার চেষ্টাও করেনি।
সাধারণত বড় লক্ষ্য তাড়া করতে আগ্রাসী শুরুর দরকার হয়। বাংলাদেশ কী করেছে? প্রথম পাওয়ার প্লেতে তারা করে মোটে ৪২ রান। এর মধ্যে হারায় লিটন কুমার দাসকে। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে হার্দিক পান্ডিয়াকে দারুণ পুল শটে মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছক্কা হাঁকান তিনি। পরের বলে অফ স্টাম্পের একটু বাইরে, আর লেন্থটাকে একটু খাটো করে দিলেন হার্দিক, মিড উইকেটে ফিল্ডার রাখলেন দুটো! লিটন তখন অফ স্টাম্পের বাইরে গিয়ে সেই বল তুলে মারলেন! অবশ্য তার শট দেখে বোঝার উপায় নেই আদৌ ছক্কা মারতে গিয়েছিলেন কিনা! ফলাফল? বাউন্ডারি থেকে দৌড়ে এসে ক্যাচ নিলেন সূর্যকুমার যাদব।
ম্যাচ শেষে রোহিত বলছিলেন প্ল্যান করেই দুটো ডেলিভারি করা হয়েছে! আর লিটন তো প্রতিপক্ষের ফাঁদে পা দিতে বরাবরই ওস্তাদ! এদিনও সেটাই করলেন। করলেন ১০ বলে ১৩ রান, এর মধ্যে আউট হওয়ার আগের দুই বলে করেন ১০! শেষ ৭ ইনিংসে ৮৫ রান করা এই ওপেনারকে বিকল্প কিপার নেই বলে নাকি বাদ দিতে পারছে না টিম ম্যানেজমেন্ট! একটা ওপেনারকে খেলাতে হচ্ছে কিপার কোটায়! ১৯৭ রান তাড়া করা দলের আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ৩১ বল খেলে করলেন ২৯ রান! গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ব্যর্থ এই ওপেনারের ভবিষ্যৎ কী হবে সেটা সময়ই বলে দেবে! কিন্তু তাকে নিয়ে যে হাইপ তোলা হয়েছে তিনি তার ধারে কাছেও নেই। দুই বিশ্বকাপে এখনো একজন ক্রিকেট বোদ্ধাকেও দেখা যায়নি তার ন্যূনতম প্রশংসা করতে! চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছয় ম্যাচে এই ওপেনার করেছেন মাত্র ৭৬ রান। এদিন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত অবশ্য শুরু থেকে আগ্রাসী খেলতে চেয়েছেন। তবে তাতে বোঝা গেছে তার সামর্থ্যের সীমাও। ভারতীয় স্পিনারদের করা পায়ের উপর শর্ট বলগুলোকে ব্যাটেই লাগাতে পারেননি বেশ কয়েকবার। তাওহীদ হৃদয়ও এদিন ব্যর্থ। শান্ত হৃদয়ের আউটের পরে পাঁচে সাকিব আল হাসান আর ছয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দুজনেই চরম ব্যর্থ! সাকিব তো পুরো আসরেই ব্যর্থ। এদিনও করেন মাত্র ১১ রান। এর আগে বোলিংয়েও খেয়েছেন বেদম মার! রিয়াদকে দেখে বোঝাই যায়নি তার আদৌ জয়ের ইচ্ছা আছে! লক্ষ্যটা বড়, এক পর্যায়ে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়! রিয়াদ যখন ব্যাটিংয়ে নামেন দলের প্রয়োজন ৩৯ বলে ৯৯ রান। এখান থেকে তিনি যখন আউট হলেন দলের প্রয়োজন ১ বলে ৫২ রান। এর মধ্যে ১৫ বল খেলে করলেন মাত্র ১৩ রান। একটা দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ, ফিনিশিংয়ে যাকে দেশসেরা বলা হয় এই তার পারফর্মেন্স! এর আগে ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও এমন ব্যাটিং করেন রিয়াদ। যেখানে জয় না পেলেও চেষ্টা করলে অন্তত কাছাকাছি যেতে পারতো টাইগাররা। এ নিয়ে ড্রেসিংরুমে বাকিদের সঙ্গে তার মনোমালিন্যের খবর পাওয়া যায় তখন!
অবশ্য বাংলাদেশ গতকাল মাঠে নামার আগেই হয়তো হার মেনে নিয়েছিল। আর না হয় চেয়েছিল সম্মানজনক পরাজয়। না হলে ভারতের বিপক্ষে কেন স্পিনারদের দিয়ে বোলিং আক্রমণ সাজানো হবে। ধারণা করা হচ্ছিল এই উইকেটে ৪ পেসারও খেলানো হতে পারে। সেটা না হলেও অন্তত শরিফুল ইসলাম ঢুকবেন একাদশে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে তাসকিন আহমেদকে বসিয়ে নেয়া হলো ব্যাটার জাকের আলীকে। আর টস জিতে নেয়া হলো ফিল্ডিং! যেটা দেখে ক্রিকেট বোদ্ধাদের বিস্ময়ের শেষ নেই! মাইকেল ভন তো বলেই বসলেন কী অদ্ভুত সিদ্ধান্ত! এরপর দুই পাশ দিয়েই স্পিনার দিয়ে বোলিং শুরু করান অধিনায়ক শান্ত। অথচ প্রতিপক্ষ বিশ্বে স্পিন ভালো খেলার দিকে শীর্ষে থাকা দেশগুলোর একটি। ফল যা হবার তাই হলো!। শুরুতেই টাইগার বোলিং লাইনআপ গুঁড়িয়ে দিলেন ভারতীয় ওপেনাররা। একমাত্র তানজিম সাকিব ছাড়া আর কেউই সুবিধা করতে পারেননি, করেছেন একের পর এক বাজে বল। মোস্তাফিজুর রহমান যে স্পোর্টিং উইকেটে কতোটা সাদামাটা, আবারো তার প্রমাণ মিললো। সুপার এইটে ওঠার পর হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বলেছিলেন প্রথম লক্ষ্য ছিল সুপার এইটে ওঠা। এখন যা পাবেন সবই বোনাস! টেস্ট খেলুড়ে কোনো দেশের কোচ এমন কথা বলতে পারেন এটাই বিব্রতকর।