শেষের পাতা
ঘুষ না দেয়ায় অর্ধকোটি টাকার কাজ বাতিল
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
২৪ জুন ২০২৪, সোমবারটাঙ্গাইলে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা ঘুষ না দেয়ায় অর্ধকোটি টাকার কার্যাদেশ বাতিলের অভিযোগ উঠেছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সিনথিয়া আজমিরী খানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ঠিকাদার। অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ১৭ই এপ্রিল টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এলেঙ্গা-ভূঞাপুর-চানগাবসারা ৫০০ মিটার প্যালাসাইডিংয়ের (এলটিএম) পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করে। যার দরপত্র আইডি নং-৯৭৪৪৪৫। কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার ৬০৫ টাকা। পিপিআরের সব শর্ত অনুযায়ী, গত ১৬ই মে মেসার্স এসএফ এন্টারপ্রাইজ দরপত্রে অংশগ্রহণ করে। পরে যাচাই-বাছাই করে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ৮১ জন দরদাতার মধ্যে লটারি করা হয়। লটারিতে মেসার্স এসএফ এন্টারপ্রাইজ বিজয়ী হওয়ায় তাকে মৌখিকভাবে কাজের অনুমতি দেয়া হয়।
সূত্রমতে, গত ৫ই জুন ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী সাজ্জাত হোসেন টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সিনথিয়া আজমিরী খানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এসময় নির্বাহী প্রকৌশলী ওই ঠিকাদারকে উপসহকারী প্রকৌশলী (সওজ) দিদারুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে দিদারুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ওই ঠিকাদারকে হোয়াটসঅ্যাপে কাজের ড্রইং (ডিজাইন) পাঠানো হয়। সেই ডিজাইন পেয়ে ঠিকাদার রড, সিমেন্ট এবং পাথর সংগ্রহ করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন পরও প্রাপ্ত কাজের নোটিশ অব অ্যাওয়ার্ড (নোয়া) না পাওয়ায় ঠিকাদার পুনরায় উপসহকারী প্রকৌশলী (সওজ) দিদারুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এসময় দিদারুল আলম ঠিকাদরকে জানান, নোটিশ অব অ্যাওয়ার্ড পেতে হলে জামালপুর সার্কেলের জন্য ৩ শতাংশ এবং টাঙ্গাইল অফিসে ৪ শতাংশ পিসি মানি (ঘুষ) দিয়ে সিএস অনুমোদনপূর্বক কার্যাদেশ নিতে হবে। এতে ওই ঠিকাদার পিসি মানি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে ঠিকাদার জানতে পারেন তার কাজটি বাতিল করা হয়েছে।
টাঙ্গাইল সড়ক বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানান, এ কাজের সহকারী প্রকৌশলী এনামুল এবং এস্টিমেটর উপসহকারী প্রকৌশলী খায়রুল ইসলামের নেতৃত্বে পিসি মানি ঠিকাদারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন। আর এতে সহযোগিতা করেন আরেক উপসহকারী প্রকৌশলী দিদারুল আলম। আর কোনো ঠিকাদার এই ঘুষের টাকা না দিলে কাজের সময় এবং কাজ শেষে বিল তুলতে চরম বিপাকে পড়তে হয়।
উপসহকারী প্রকৌশলী দিদারুল আলম জানান, এই কাজের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আর পিসি মানির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এটা নিয়ে কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এ বিষয়টি সম্পূর্ণ এস্টিমেটর খায়রুল বাশারের। খায়রুল ইসলাম জানান, যে কাজটি বাতিল করা হয়েছে, এ নিয়ে তিনি কিছুই বলতে পারবেন না। সহকারী প্রকৌশলী এনামুলকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সিনথিয়া আজমিরী খান বলেন, নিয়মানুযায়ী কর্তৃপক্ষ টেন্ডার বাতিলের ক্ষমতা রাখে। জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবে না বলে বাতিল করা হয়েছে। পরে আবার টেন্ডার আহ্বান করা হবে।
পাঠকের মতামত
কর্তৃপক্ষ এত নিয়ম মানে !?! তাহলে তাদের বিরুদ্ধে এমন সুস্পষ্ট অভিযোগ আছে কিভাবে!?! সেই অভিযোগ যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক পদক্ষেপ নেয়া হবে কী!?! মিথ্যা অভিযোগ করলে এজন্য যেমন দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তি কাম্য, তেমনি অভিযোগ সঠিক হলে এর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।
বাহ বাহ, এভাবেই চলছে স্বদেশ।