ঢাকা, ১৭ মে ২০২৫, শনিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, পানিবন্দি ৪ লক্ষাধিক মানুষ

ইমাদ উদ দীন, মৌলভীবাজার থেকে
২১ জুন ২০২৪, শুক্রবার
mzamin

মৌলভীবাজার জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পাহাড়ি ঢল আর টানা ভারী বৃষ্টি। চরম উত্তাল এ জেলার হাওর ও নদী। বন্যায় ডুবছে রাস্তাঘাট। বাদ যাচ্ছে না ঘরবাড়ি কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিদিনই বাড়ছে পানি। বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে স্থানীয় নদীগুলোর পানি। ইতিমধ্যে হাওর ও নদী তীরের অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে ঠাঁই নিয়েছেন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আর আশ্রয়কেন্দ্রে। গেল কয়দিনের টানা ভারী বৃষ্টিতে জেলার হাওরগুলো পানিতে টইটুম্বুর। আর নদীগুলোর পাড় ভেঙে ও উপচে প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন জেলার হাওর ও নদী তীরের প্রায় ৪ লক্ষাধিক মানুষ। বানের পানি গ্রাস করেছে বসতবাড়ি। তাই এখন মাথা গোঁজার ঠাঁইও নেই। পোল্ট্রি ফার্ম, ধান, মাছ, সবজি আর ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব কৃষি ও মৎস্যজীবী লোকজন। বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটে পড়েছেন বানভাসি মানুষ। বানের পানিতে ভেসে গেছে পুকুর ও মৎস্য খামারের মাছ। গবাদিপশুগুলোর খাদ্য সংকটও চরমে। বন্যাকবলিত জেলার ৭টি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌর শহরের অধিকাংশ মানুষ। এর মধ্যে অন্যতম বন্যাকবলিত জেলার বড়লেখা, কুলাউড়া, জুড়ী উপজেলার হাকালুকি হাওর তীরের মানুষ। মনু, ধলাই ও কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী রাজনগর, সদর উপজেলা ও কমলগঞ্জ উপজেলার লোকজনও বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন। কমলগঞ্জের ধলাই নদীর তীরবর্তী লোকজন জানালেন কিছুদিন আগের বয়ে যাওয়া বন্যায় তাদের কৃষিজমি ও মৎস্যখামার ডুবে গেলেও এখন ডুবছে তাদের ঘরবাড়ি। বড়লেখা উপজেলায় বন্যায় অন্তত শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যায় অধিকাংশ গ্রামীণ রাস্তা তলিয়ে গেছে। আঞ্চলিক সড়কের অনেক স্থানে পানি উঠেছে। ডুবেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। ফলে জনদুর্ভোগ চরমে।

 উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, হাকালুকি হাওর পাড়ের কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল, জয়চণ্ডী, কাদিপুর, কুলাউড়া, ব্রাহ্মণবাজার, ভাটেরা ও বরমচাল ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। 
জুড়ী উপজেলার ৫ ইউনিয়নের প্রায় ৪৫টি গ্রামে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। কমলগঞ্জ উপজেলায় ধলাই নদীর পাড় ভেঙে প্লাবিত হয়েছে ৪৫-৫০টি গ্রাম। একই অবস্থা জেলার রাজনগর, মৌলভীবাজার সদর ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার। স্থানীয়রা বলছেন মনু ও ধলাই নদীর বাঁধের প্রায় ২৫টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয় বলছে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ নিয়ে তাদের সতর্ক প্রস্তুতি রয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা জানালেন, স্থানীয় হাওর ও নদীগুলোর নাব্য হ্রাসে এমন দুর্যোগ। দীর্ঘদিন থেকে সংস্কারহীন নদীগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ স্থায়ীভাবে মেরামত না করায় বার বার ওই সকল বাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। জানা যায়, নতুন করে প্লাবিত হয়েছে কুলাউড়া পৌরসভার ৩টি ওয়ার্ড। এ ছাড়াও বন্যার পানি প্রবেশ করেছে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কুলাউড়া উপজেলা পরিষদ ও জুড়ী উপজেলা পরিষদে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন বৃষ্টি ও উজানের ঢল না থামলে নতুন করে অনেক এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা তাদের। এই পরিসংখ্যান ছাড়াও জেলার অনেক উপজেলার নদী ও হাওর তীরবর্তী অনেক গ্রামই আংশিক বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে মনু নদীর পানি শহরের চাঁদনীঘাট এলাকায় বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদী শেরপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ও জুড়ী নদীর পানি বিপদসীমার ২০৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বন্যায় জেলার ৭ উপজেলার ৪৭ ইউনিয়নের ৪৭৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ইতিমধ্যে ২০৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ৬২৫৩ জন বন্যার্ত মানুষ। গবাদিপশুর সংখ্যা ২শ’টি। কার্যরত মেডিকেল টিম রয়েছে ৭০টি। শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে ৪৬৫ প্যাকেট, রান্না করা খাবার ১২শ’ প্যাকেট, জিআর চাল ৪২২ টন, জিআর ক্যাশ ২৮৭৫০০ টাকা, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ৬৫ হাজার পিস। বিশুদ্ধ পানি ২৪০টি ১০ লিটারের বোতল। 

বন্যার পানিতে ডুবে দু’জনের মৃত্যু
এদিকে সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের পশ্চিম শ্যামেরকোনা এলাকায় বন্যার পানিতে ডুবে এক শিশু ও এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরের দিকে এ ঘটনাটি ঘটে। নিহত একজন হৃদয় আহমদ (১৭) সদর উপজেল পশ্চিম শ্যামের কোনা গ্রামের জমির আলীর ছেলে ও সাদি মিয়া (৮) একই গ্রামের ফয়ছল মিয়ার ছেলে। চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আকতার উদ্দিন আহমদ মানবজমিনকে জানান, ধলাই নদীর বাঁধ ভেঙে শ্যামেরকোনা গ্রামসহ আশেপাশের গ্রামের রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি পানিতে ডুবে গেছে। দুপুরের এক কিশোর ও এক শিশু সাঁতার না জানার কারণে দুজনই বানের পানিতে ডুবে যায়।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status