ঢাকা, ২৬ জুন ২০২৪, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯ জিলহজ্জ ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

ঝক্কি নিয়েই ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার
১৫ জুন ২০২৪, শনিবারmzamin

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা ছাড়ছে ঘরমুখো মানুষ। সড়ক, রেল ও নৌপথে মানুষের ভিড় বাড়ছে। গতকাল ঢাকার বাইরের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের বাড়তি চাপে যানজট ও যান চলাচলে ছিল ধীরগতি। এ ছাড়া বিভিন্ন রুটের সেতুর টোলপ্লাজা ঘিরেও চাপ থাকায় দীর্ঘ জটলা লাগে পরিবহনের। এদিন সকাল থেকেই ঢাকার রেলওয়ে স্টেশন, বাস টার্মিনাল ও লঞ্চ  ঘাটে যাত্রীদের চাপ ছিল। বাস টার্মিনালগুলোতে টিকিট সংকট ও বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগও ছিল যাত্রীদের। এসব কারণে ঝক্কি নিয়েই ঢাকা ছাড়তে হয়েছে ঘরমুখো মানুষকে। তারপরও বাড়ি ফিরে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করার অপেক্ষায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।

গতকাল সকাল থেকেই ঢাকা (কমলাপুর) রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় ছিল। প্ল্যাটফর্ম থেকে একের পর এক ট্রেন ছেড়ে গেছে। অনেক যাত্রী আগেভাগেই এসে প্ল্যাটফর্মে বসে ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলেন।

বিজ্ঞাপন
এদিন দু-একটি ছাড়া অধিকাংশ ট্রেনই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ছেড়েছে। এজন্য কমলাপুর থেকে যেসব যাত্রীরা ভ্রমণ করেছেন তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া এবার শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হওয়ায় কমলাপুর স্টেশনে এখনো পর্যন্ত বাড়তি কোনো চাপ পড়েনি। টিকিট ছাড়া স্টেশনের ভেতরে কেউ যেন প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া দাঁড়িয়ে যাওয়ার জন্য ১ থেকে ৬ নাম্বার কাউন্টারে স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিমানবন্দর ও টঙ্গি স্টেশনে যাত্রীদের চাপ কিছুটা বেশি ছিল। কমলাপুর ও বিমানবন্দরে কড়াকটি থাকলেও টঙ্গী স্টেশন থেকে ট্রেনের ছাদেও ভ্রমণ করতে দেখা গেছে যাত্রীদের। ঈদের ছুটিতে রাজশাহী যাওয়ার জন্য কমলাপুর স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন সিয়াম আহমেদ। অনলাইনে সিল্ক সিটি ট্রেনের টিকিট কেটেছেন তিনি। সিয়াম বলেন, গত ঈদ থেকে কমলাপুরে ভোগান্তি পোহাতে হয় না। শুধু টিকিট পেলেই নির্বিঘ্নে যাওয়া যায়। স্টেশনে হুড়োহুড়ি নেই। পরিবেশটা সুন্দর। চট্টলা এক্সপ্রেসের যাত্রী সোহেল হোসেন বলেন, অনলাইনে টিকিট পাওয়া কঠিন। অনেক চাপ থাকে সার্ভারে। আমি ৩টা টিকিট পেয়েছি। তবে স্টেশনে অতিরিক্ত যাত্রীদের চাপ নেই তাই ভালো লাগছে।  ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, সকাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে। এখন আর প্রথমদিনের মতো ট্রেনে কোনো বিলম্ব নেই।

এদিকে গতকালও সড়ক পথে ঘরমুখো হয়েছে মানুষ। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, জনপদ মোড় ও যাত্রাবাড়ীর কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের চাপ ছিল অনেক। এসব জায়গায় শ্যামলী, এনা, হানিফ, একুশে এক্সপ্রেস, ইকোনোসহ বিভিন্ন এসি-ননএসি বাসে যাত্রীদের ভিড় ছিল। এ ছাড়া গাবতলী বাস টার্মিনালেও উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরা যাত্রা করেছেন। গাবতলী বাস টার্মিনালের অধিকাংশ কাউন্টারের টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়ে গেছে। যারা অগ্রিম টিকিট কিনে রেখেছেন তারা নির্ধারিত সময়ে বাসে উঠতে পারছেন। কিন্তু অগ্রিম টিকিট না কেনা যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। তারা অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ারও অভিযোগ করছেন। শহিদুল নামের এক যাত্রী বলেন, কাউন্টারে আসার পর শুনি টিকিট নেই। সব নাকি অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে। যেই বাসের টিকিট পাচ্ছি সেখানেও ভাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে। সোহাগ পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার নয়ন বলেন, ঈদের আগেরদিন পর্যন্ত টিকিটগুলো অনলাইনেই বিক্রি হয়ে গেছে। এজন্য এখন যারা আসছেন তাদের টিকিট দিতে পারছি না। আরেক কাউন্টার ম্যানেজার বলেন, শুক্রবার দেখে যাত্রীর চাপ অনেক। ঈগের আগ মূহুর্ত পর্যন্ত চাপ থাকবে। সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, ভোর থেকে ভিড় বেড়েছে। আশা করছি সামনে যাত্রী আরও বাড়বে। যারা অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন। 

সড়ক ও রেলপথের পাশাপাশি নৌপথেও বেড়েছে ঘরমুখো মানুষের ভিড়। কিছুটা মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকলেও মানুষ নৌপথে বাড়ি ফিরছেন। বিশেষ করে সদরঘাটে বরিশাল, চাঁদপুরের মানুষের ভিড় ছিল বেশি। প্রতিটি লঞ্চেই যাত্রীদের ভিড় ছিল। লঞ্চের কেবিন ও ডেকগুলোর চাহিদাও ছিল অনেক। হাঁকডাক করে লঞ্চে যাত্রী তুলতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন শ্রমিকরা। যাত্রীদের চলাচলের সুবিধার্থে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের আওতায় এবার সদরঘাট টার্মিনাল থেকে মোট ১৮০টি লঞ্চ ছাড়বে। এসব নৌপরিবহনের মধ্যে ঢাকা থেকে ছাড়বে ৯০টি, বিভিন্ন স্থান থেকে ৯০টি ঢাকায় আসবে। এদিকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌরুটে লঞ্চে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। মোতাহার হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, আমাদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে আবার সঙ্গে ভারি কিছু নিয়ে যেতে চাইলে তার জন্য অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে।  বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক (পোর্ট অফিসার) মো. মামুনুর রশীদ বলেন, উল্লেখিত নির্দেশনায় ডেকের ভাড়া ২৯ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে যেহেতু চেয়ার ও উপরের ডেস্কে বসিয়ে যাত্রী নেয়, তারা একটু ভাড়া বেশি নেয়। তবে পাটুরিয়া অঞ্চলের লঞ্চঘাটের কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা ৩৬ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা করে নেয়।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের ২০ কিলোমিটার দীর্ঘলাইন
গতকাল ঢাকা-টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। এদিন ভোর থেকেই কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যানবাহনের জট বাঁধে। এতে করে সকাল ১১টা পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব পাড় থেকে মহাসড়কের টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রাবনা বাইপাস পর্যন্ত এই যানজট সৃষ্টি হয়। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ভোরে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পুংলি ও সদর উপজেলার রসুলপুরের মাঝামাঝি এলাকায় একটি সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক উল্টে গেলে যানবাহনের জট বাধে, সেখান থেকেই যানজট সৃষ্টি হয়। এদিকে মহাসড়কে গণপরিবহন সংকট ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণে অনেককেই খোলা ট্রাক ও পিক-আপে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। এ ছাড়াও ক্ষণে ক্ষণে বৃষ্টি এই যাত্রায় আরও ভোগান্তি বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। এ ছাড়াও মহাসড়কে ব্যক্তিগত যানবাহন, মোটরসাইকেল ও পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল করেছে। 

পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় চাপ, এক্সপ্রেসওয়েতে যানজট
পদ্মা সেতু হওয়ার পর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য সড়ক পথের সবচেয়ে ব্যস্ত রুট এখন ঢাকা-মাওয়া। এক্সপ্রেসওয়ের কারণে যানজটহীন দ্রুতগতিতে যানবাহন ছুটে চললেও সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজায় এদিন গাড়ির দীর্ঘ চাপ ছিল। এতে টোল প্লাজা থেকে শ্রীনগর ছনবাড়ি এলাকা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়েতে অন্তত ৭ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানজট তৈরি হয়। দুপুরের পর যানজট কিছুটা কমলেও বিকাল ৩টায় এক্সপ্রেসওয়ের দোগাছি এলাকায় দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত ঘরমুখী যাত্রীদের গাড়ির জট ছিল। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, এই ঈদে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দক্ষিণমুখী যানবাহনের চাপ কয়েকগুণ বেড়েছে। এ ছাড়া রাতে সেতুর টোল প্লাজার ওজন স্কেলে কয়েকটি ট্রাক অপেক্ষমাণ ছিল। রাতের তুলনায় ভোরে ট্রাকের লেন আরও বড় হয়। ভোর থেকে ট্রাক, গণপরিবহন ও ছোট গাড়ির চাপ বাড়তে থাকে। সেতুর টোল প্লাজায় যানবাহনগুলোকে টোল দিতে অপেক্ষা করতে হয়। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা থেকে যানবাহনের সারি বাড়তে বাড়তে শ্রীনগরের ছনবাড়ি এলাকা পর্যন্ত চলে যায়। 

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেড়েছে চাপ, যান চলাচলে ধীরগতি
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে। গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। বিশেষ করে মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে থেমে থেমে চলছে গাড়িগুলো। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। গতকাল সকালের দিকে গাড়ির চাপ কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বেড়েছে। জুমার নামাজের পর গাড়ির চাপ তীব্র আকার ধারণ করেছে। মহাসড়কের উভয় লেনে একই দৃশ্য দেখা গেছে। কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে শুরু করে পদুয়ার বাজার পর্যন্ত বেশ থেমে থেমে চলছে গাড়িগুলো। বেলা ১১টার দিকে চান্দিনা অংশে বেতন বোনাসের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে গার্মেন্টস শ্রমিকরা। ফলে ১০-১২ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে ঘণ্টা দুয়েক পর অবরোধ তুলে নিলে যানজট কমতে থাকে। দাউদকান্দি হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুল আলম বলেন, জুমার নামাজের পর মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেড়েছে। চান্দিনায় শ্রমিকদের অবরোধের ফলে সৃষ্ট জটলা না থাকলেও গাড়ি ধীরগতিতে চলেছে। হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, যান চলাচল স্বাভাবিক করতে পুলিশের সমন্বিত ইউনিট কাজ করছে। 

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজট
পরিবহনের চাপ বাড়ায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেও যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এ সড়কটি দিয়ে সিলেট, ভৈরব, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, গাজীপুরসহ দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল করে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জ অংশের বরাবো, ভুলতাসহ বেশকয়েকটি স্থানে গরুর হাট বসানো হয়েছে। এতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে। ঈদযাত্রায় গত কয়েকদিন ধরেই ঢাকা-সিলেট, এশিয়ান বাইপাস ও রূপসী-কাঞ্চন সড়কে দীর্ঘ যানজট ছিল। গতকাল ছুটির দিনে এ দুই মহাসড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটার যানবাহনের ধীরগতি ছিল। এতে ভোগান্তি পোহাতে হয় ঘরমুখো মানুষকে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান বাইপাস সড়কের রূপগঞ্জের অংশ পার হতেই কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে। হাইওয়ে পুলিশ জানায়, ঈদ যাত্রায় গাড়ির চাপ বেশি থাকায় ধীরগতি হয়েছে। তারপরও যেন নির্বিঘ্নে গাড়ি চলাচল করতে পারে তারা সেই চেষ্টা করছে।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status