ভারত
লোকসভা নির্বাচন: ব্যাটলগ্রাউন্ডগুলো নির্ধারণ করবে ভাগ্য!
মানবজমিন ডেস্ক
(৭ মাস আগে) ৪ জুন ২০২৪, মঙ্গলবার, ৯:২৮ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ২:৪২ অপরাহ্ন
ভারতজুড়ে টান টান উত্তেজনা। বিশ্ব তাকিয়ে আছে বৃহৎ গণতান্ত্রিক এ দেশটির নির্বাচনের ফলের দিকে। কে হবেন ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী- নরেন্দ মোদিই টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় থাকবেন নাকি অন্য কারো জন্য সুযোগ আসবে। এসব প্রশ্নের ফয়সালা হবে আজ। ৪৪ দিনে ৭ দফায় লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন ভারতের ৬৪ কোটি মানুষ। তাদের সেই জনরায় গণনা শুরু হয়েছে আজ সকালে। হ্যাটট্রিক জয়ের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আস্থাশীল। তিনি মনে করছেন বড় ব্যবধানে বিজয়ী হবে তার জোট। তাদের প্রচলিত সমর্থনের ঘাঁটিগুলোতে ব্যাপক বড় জয় পাবেন। অন্যদিকে বিরোধী ইন্ডিয়া ব্লক নির্বাচন শেষে বুথফেরত জরিপকে উড়িয়ে দিয়েছে। তারা ক্ষমতায় আসার বিষয়ে আস্থাশীল। বিরোধী বেশ কিছু দল মিলে গঠন করা হয়েছে ইন্ডিয়া জোট। অনলাইন এনডিটিভি এ খবর দিয়েছে।
পুরো দেশই জনগণের রায়ের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি চোখ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের দিকে। একে এবার ব্যাটলগ্রাউন্ড হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। এর মধ্যে আছে পশ্চিমবঙ্গ। বিজেপি এবার নির্বাচনে যেসব রাজ্যের দিকে বেশি নজর দিয়েছে তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ অন্যতম। এখানে আছে লোকসভার ৪২টি আসন। ২০১৯ সালের নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস এ রাজ্যে বিজয়ী হয় ২২ আসনে। ২০১৪ সালের তুলনায় এ নির্বাচনে তারা ১২টি আসন কম পায়। আর এ সময়ে বড় সফলতা অর্জন করে বিজেপি। ২০১৪ সালে তারা এ রাজ্যে মাত্র দুটি আসনে জিতেছিল। কিন্তু ২০১৯ সালে সে সংখ্যা দাঁড়ায় ১৮। এবার নির্বাচনে এই রাজ্যে বিজেপি তার উপস্থিতি আরও বাড়াতে সর্বাত্মক প্রচারণায় নামে। ২০২৬ সালে এ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। যদি এই নির্বাচনে তারা ভাল স্কোর করতে পারে, তাহলে বিধানসভা নির্বাচন তাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে। এবার নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভায় বিরোধী দলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজ্য বিজেপি প্রধান সুকান্ত মজুমদার স্থানীয় ইস্যুকে তুলে ধরে টার্গেট করেছে তৃণমূল সরকারকে। বুথফেরত জরিপ বলছে, লোকসভার মোট ৪২ আসনের মধ্যে বিজেপি পেতে পারে ২৬ আসন। এই পূর্বাভাসকে উড়িয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, বুথফেরত জরিপের কোনো মূল্য নেই।
মহারাষ্ট্র: অন্য কোনো রাজ্যে এ রাজ্যের মতো দুটি নির্বাচনে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়নি। ২০১৯ সালের নির্বাচনে এখানে বিজেপি ও শিবসেনা জোটবদ্ধ হয়েছিল। তারা মিলে রাজ্যের মোট ৪৮টি লোকসভা আসনের মধ্যে জিতেছিল ৪১টি আসন। এবার চিত্র পুরো ভিন্ন। শিবসেনা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। একভাগের নেতৃত্বে আছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে। তারা সমর্থন করছে বিজেপিকে। অন্যভাগের নেতৃত্বে আছেন উদ্ধব ঠাকরে। শারদ পাওয়ারের এনসিপিও বিভক্ত হয়ে গেছে। তার ভাজিতা অজিত পাওয়ার এখন বিভক্ত অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারা এনডিএ সরকারের অংশ। এনডিএ এবং ইন্ডিয়া ব্লকে একটি করে অংশ আছে শিবসেনা ও এনসিপির। উভয় দলের ভোটই এক্ষেত্রে বিভক্ত হয়ে যাবে। অনেক বুথফেরত জরিপ আভাস দিয়েছে যে, ২০১৯ সালের তুলনায় এনডিএর ভোট এখানে কমতে পারে। তবে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে। এই পূর্বাভাসকে প্রত্যাখ্যান করেছেন ইন্ডিয়া জোটের নেতারা।
ওড়িশা: পূর্বাঞ্চলীয় আরেকটি রাজ্য ওড়িশা। এখানে বিজেপি এবার বড় জয় আশা করছে। কিন্তু ওড়িশা হলো বিজু জনতা দলের (বিজেডি) ঘাঁটি। লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে এখানে বিধানসভার ভোট হয়েছে। ২০১৯ সালে এখানে নবীন পাটনায়েকের বিজেডি বিধানসভা নির্বাচনে ২১ আসনের মধ্যে ১২টিতে বিজয়ী হয়। বিজেপি জেতে ৮ আসনে। এ সময়ে বিজেপির বড় সফলতা দেখা যায়। কারণ, তারা ২০১৪ সালে মাত্র একটি আসন পেয়েছিল এ রাজ্যে। এবার ওড়িশায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আবির্ভূত হতে চায় বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও বিজেপির মিশন ইস্টের বড় একটি লক্ষ্য হলো ওড়িশা। এখানে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা। এর মধ্যে আছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
বিহার: বিজেপির পরিকল্পনার বড় প্রভাব পড়তে পারে বিহারে। বিজেপি এবং জেডিইউ মিলে এখানে এনডিএ জোট গঠিত। তারা ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এখানকার ৪০ আসনের মধ্যে ৩৯ আসনে জয় পায়। বিজেপি থেকে নীতিশ কুমার নেতৃত্বাধীন জেডিইউ আলাদা হয়ে যায়। এরপর যোগ দেয় তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী আরজেডিতে। এর সামান্য পরেই তা উল্টে যায়। আবার জেডিইউ ফিরে যায় বিজেপির কাছে। এখানে এনডিএ ব্লকে এখন আছে চিরাগ পাসওয়ানের এলজেপি, সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জিতান রাম মাঝির হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা, সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উপেন্দ্র কুশাওয়াহার রাষ্ট্রীয় লোক মোর্চা। তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান করছে ইন্ডিয়া ব্লক। এতে আছে তেজশ্বী যাদব নেতৃত্বাধীন আরজেডি, মুকেশ সাহানির বিকাশিল ইনসান পার্টি, সিপিআই, সিপিএম এবং সিপিআই-এমএল। এখানে বড় জয় আশা করছে ইন্ডিয়া ব্লক। এখানে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং তেজশ্বী যাদব একসঙ্গে প্রচারণা চালিয়েছেন।
তেলেঙ্গানা: আরেকটি ব্যাটলগ্রাউন্ড হলো তেলেঙ্গানা। গত বছর এ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে বড় ধরনের জয় পায় কংগ্রেস। ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও-এর তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (বর্তমানে ভারত রাষ্ট্র সমিতি- বিআরএস) রাজ্যের ১৭টি আসনের মধ্যে ৯টিতে জয় পায়। বিজেপি জেতে চার আসনে। কংগ্রেস জয় পায় তিন ইস্যুতে। বিআরএসের ওই নির্বাচনের ফল এবং কংগ্রেসের বিজয় এই রাজ্যকে প্রতিযোগিতার একটি উন্মুক্ত ক্ষেত্র তৈরি করেছে। এদিকে চোখ রয়েছে বিজেপি ও কংগ্রেসের।