শেষের পাতা
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১৪ দলের বৈঠক আজ
কর্মসূচি ও অংশীদারিত্ব ইস্যুতে আলোচনা হতে পারে
কাজী সোহাগ
২৩ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার
১৪ দলীয় জোট নেতাদের সঙ্গে আজ বৈঠকে বসছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস পরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই বৈঠকে বেশ কিছু ইস্যুতে আলোচনা হবে বলে নেতারা জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রাজপথের আন্দোলন ও কর্মসূচিতে ১৪ দলকে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়ার অনুরোধ জানানো হবে। অন্যদিকে ১৪ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে সরকারে নিজেদের অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার দাবি তোলা হবে বলে নেতারা জানিয়েছেন। এর বাইরে বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ভবিষ্যতে রাজপথে কীভাবে দুই পক্ষ অংশগ্রহণ করতে পারে তা নিয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা ও ১৪ দলীয় শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে আওয়ামী লীগ ও জোটের নেতারা সরাসরি বৈঠকের আলোচনার বিষয় সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। জোটের নেতারা মানবজমিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও ১৪ দলীয় জোটের প্রধান হিসেবে তিনি আমাদেরকে বৈঠকে ডেকেছেন। আমরা তার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বৈঠকে উপস্থিত থাকবো। সেখানে জোট নেত্রী কী বলেন বা নির্দেশনা দেন সেটা আমরা জানবো। এ প্রসঙ্গে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া মানবজমিনকে বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের চালিকাশক্তি। তিনি যেভাবে যে নির্দেশনা দেবেন আমরা সেভাবে চলবো। তিনি আমাদের ডেকেছেন, আমরা যাবো এবং তার কথা ও নির্দেশনা শুনবো। জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন ও ক্ষমতার অংশীদারিত্ব নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে একটা দূরত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। সেসব বিষয়গুলো নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হবে।
আমাদেরকে বলা হয়, আমরা জোটের শরিক। কিন্তু সরকারের অংশীদারিত্বে আমাদের ভূমিকা অনেক কম। আমরা আশা করি বর্তমান সরকার তাদের ক্ষমতার অংশীদারিত্বে আমাদের আরও হিস্যা দেবে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, নির্বাচনের কয়েক মাস পর হঠাৎ করে রাজপথে কর্মসূচি বাড়িয়েছে বিএনপি। সামনে তাদের আরও কর্মসূচি রয়েছে। বিএনপি তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথ উত্তপ্ত রাখতে পারে। এজন্য আমরা চাইÑ ১৪ দলীয় জোট আরও শত্তিশালী হোক। পাশাপাশি আদর্শিক জোট হিসেবে রাজপথে একসঙ্গে বিরোধী শক্তির মোকাবিলা করুক। এর আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসন বণ্টন প্রশ্নে গত বছরের ৪ঠা ডিসেম্বর বৈঠকে বসেছিল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে। গত ৭ই জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ১৪ দলের আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক হয়নি। গত নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে ছয়টি আসনে সমঝোতা করে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কেন্দ্রীয় নেতা একেএম রেজাউল করিম জয়ী হয়েছেন।
অন্য সবাই হেরে গেছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকেরা তাদের ছেড়ে দেয়া ছয়টি আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বসিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেছিল। কিন্তু তা আমলে নেয়নি আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে জোটের মধ্যে একধরনের তিক্ততা তৈরি হয়। এরপর থেকেই ১৪ দলীয় জোটের ভবিষ্যৎ ঠিক করতে জোটের প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের অনুরোধ জানিয়ে আসছিল শরিকেরা। ২০১৮ সালের নির্বাচনে শরিকদের ১৩টি আসনে ছাড় দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে সাতটিতে জয়ী হন তারা। পরে উপনির্বাচনে আরেকটি আসন পায় ১৪ দলের শরিকেরা। গত সংসদে ১৪ দলের শরিকদের দুজন নারী সংসদ সদস্যও ছিলেন। এবার সংরক্ষিত নারী সদস্য একজন। এদিকে জোট প্রধানের সঙ্গে বৈঠকের আগে মঙ্গলবার ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের রাজধানীর বাসভবনে বৈঠক করেন শরিক দলগুলোর নেতারা। সেখানে রাশেদ খান মেনন ছাড়াও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, তরীকত ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মোহাম্মদ আলী ফারুকসহ জোটের আরও কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে জোট নিয়ে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে পরিষ্কার অবস্থানের কথা জানতে চাওয়ার দাবি জানানো হয়।