ঢাকা, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার, ৫ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শাবান ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

আজিজের ওপর নিষেধাজ্ঞায় খুশি হওয়ার কিছু নেই

স্টাফ রিপোর্টার
২২ মে ২০২৪, বুধবারmzamin

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় খুশি হওয়ার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, অনেকেই খুশি হবেন যে, আজিজের স্যাংশন এসেছে, আমি মনে করি যে, ওটা হচ্ছে আরেকটা বিভ্রান্তি। এরকম বিভ্রান্ত আমরা সব সময় হচ্ছি, তখন র‌্যাবের বিরুদ্ধে হয়েছে, পুলিশের ৯ জন কর্মকর্তা র‌্যাবে ছিলেন- তাদের বিরুদ্ধেও স্যাংশন হয়েছিল। এতে করে কি তাদের (সরকার) সেই ভয়ঙ্কর যাত্রা বন্ধ হয়েছে? বন্ধ হয় নাই। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) একাংশের উদ্যোগে দলটির প্রতিষ্ঠাতা শফিউল আলম প্রধানের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা হাজার বার বলছি, সব সময় বলছি, গোটা দুনিয়া বলছে যে, বর্তমান শাসকগোষ্ঠী আকুণ্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে আছে। এখন তারা (সরকার) অস্বীকার করে, তারা দুর্নীতি করে না। এখন দেখেন এই যে, আজকেই খবর এসেছে যে, সাবেক সেনাপ্রধান (অব.) জেনারেল আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তার পরিবারসহ। কেন? দুর্নীতি এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রভাবিত করা এবং জনগণের বিশ্বাস ক্ষুণ্ন করা- এটা হচ্ছে একটা কেস। একথা কিন্তু আমরা বারবার বলেছি, আপনারা (সরকার) ব্যবহার করেছেন রাষ্ট্রযন্ত্রকে, আপনারা ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন সেনাবাহিনীকে, ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন বিচারবিভাগকে, প্রশাসনকে এবং আজকে এমন একটা ত্রাস ও ভয়ের রাজত্ব তৈরি করেছেন- সাংবাদিকরাও কিন্তু মন এবং প্রাণ খুলে কিছু লিখতে পারেন না। প্রতিটি শব্দ চয়ন লিখতে চিন্তা করতে হয়, এ জন্য জেলে যেতে হবে কিনা? এজন্য মামলা খেতে হবে কিনা- এই হচ্ছে দেশের বর্তমান অবস্থা।
নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমার নিজের ঘর যদি নিজে সামলাতে না পারি, অন্য কেউ ঘর সামলিয়ে দেবে না। সেজন্য বলছি, নিজেদের পায়ে নিজেদের দাঁড়াতে হবে, নিজেদের শক্তি নিয়ে দাঁড়াতে হবে এবং নিজের শক্তি নিয়েই এদেরকে (সরকার) পরাজিত করতে হবে।  

তিনি আরও বলেন, অনেক সময় ভুল ব্যাখ্যা করা হয় যে, আমরা নাকি উৎখাত করতে চাই। আমরা উৎখাতের কথা বলিনি, উৎখাত করতে যাবো কেন? আমরা ভোটের অধিকার চাই, সেই ভোটের মধ্যদিয়ে আমরা তোমাদেরকে পরাজিত করবো। সেই ভোটের অধিকার অর্জন করার জন্য আমাদের সবাইকে আরও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি সব সময় বলি, আমরা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, আমরা কোনো রেডিকেল পার্টি বা রেভ্যুলুশনারি পার্টি না। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি হচ্ছে যে, একটা নির্বাচন, সেই নির্বাচনটা যেন সুষ্ঠু হয়, অবাধ হয়, সরকার যেন কোনো প্রভাব বিস্তার করতে না পারে- সেই জায়গাটা আমাদেরকে যেতে হবে। কেউ আমাদেরকে সেটা করে দেবে না, আমাদেরকে সেটা অর্জন করতে হবে। এজন্য জনগণকে আরও ঐক্যবদ্ধ করে আমাদেরকে রাস্তায় নেমে সোচ্চার হতে হবে। রাস্তায় নামা ছাড়া কোনো বিকল্প নাই। আমরা অন্য কোনো পথ চিনি না। আমাদেরকে প্রকাশ্যে সামনে এসেই লড়াইটা করতে হবে।

মালয়েশিয়ার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, গত কয়েকদিন আগে আমি একটা নিউজ দেখছিলাম আল-জাজিরাতে। আনোয়ার ইব্রাহিমের নাম আপনারা অনেকে শুনেছেন, উনি এখন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। উনি ১৫ বছর আগে যখন মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদের যে সরকার সেটাতে ছিলেন উনি, উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে মত ভিন্নতার কারণে তিনি ছেড়েই দিলেন। তারপরে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা আরোপ করে তাকে একেবারে কারাগারে পাঠিয়ে দিলেন, দীর্ঘকাল তিনি কারাগারে ছিলেন। তখন থেকেই তিনি কাজ শুরু করেছেন, তিনি তার স্ত্রী, তার কন্যা নতুন পার্টি তৈরি করেছিলেন, এখানে নির্বাচনের মধ্যদিয়ে আস্তে আস্তে তিনি আজকে প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছেন। অর্থাৎ জনগণের আস্থাটা পুরোপুরি অর্জন করেছেন। এই যে  ধৈর্য, শুধু একটা আবেগের মধ্যে না গিয়ে বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে এগুনো, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমি মনে করি- অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আমাদেরকে আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, আন্দোলনকে তীব্র থেকে তীব্রতর করতে হবে। আমরা যুগপৎ আন্দোলনে জোট করেছি, বিভিন্ন জোট, আমরা সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমরা সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলেছি, একই সঙ্গে কাজ করেছি। আন্দোলনের প্রক্রিয়া বলতে কী? এই জোট আরও শক্তিশালী হবে এবং অদূর ভবিষ্যতে এই ভয়াবহ দানবীয় শক্তি, এই শক্তিটাকে পরাজিত করে গণতান্ত্রিক শক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করবো, এই বিশ্বাস আমাদের আছে।

তিনি বলেন, আজকে সরকার যখন বলে তারা গণতন্ত্রকে সুসংহত করছে, গণতন্ত্রকে তারা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিচ্ছে। তখন বিএনপি সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কী বলবো? মানুষ কি সব আহম্মক হয়ে গেছে। আপনারা প্রথমদিকে যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ করেছেন, সেই একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে দেশকে বহুদলীয় গণতন্ত্রে ফিরিয়ে এনেছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। আপনারা পার্লামেন্টারি গভর্মেন্ট থেকে সরে গিয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্ম অব গভর্মেন্ট করেছিলেন, আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকবেন- এটা ছিল আপনাদের উদ্দেশ্য। 

জাগপা’র সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব এসএম শাহাদাতের সঞ্চালনায় সভায় বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, এনডিপি’র চেয়ারম্যান আবু তাহের, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
 

পাঠকের মতামত

গনতন্ত্রের ঠিকাদারদের জনগণের চেনার বাকি নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
২৩ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৯:২০ পূর্বাহ্ন

সেনাবাহিনীর লোকের প্রতি এত দরদ কেন আপনার?

মিলন আজাদ
২৩ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১:১৯ পূর্বাহ্ন

বিএনপির মহাসচিব জনাব মির্জা ফখরুল সংক্ষেপে এটাই বুঝাতে চাচ্ছেন সাবেক সেনা প্রধানের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দীর্ঘকাল নির্বাসনে পাঠানো বাংলাদেশের গণতন্ত্র কে ফিরে আনা যাবে না মূলকথা কথা হচ্ছে যারা সরকারের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক প্রতিস্টান গুলো ধ্বংসের জন্য দায়ী সেই আওয়ামী লীগ সরকার কে আগে জাতিসংঘ ও আমেরিকার কঠোর নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনতে হবে যাহাতে বাংলাদেশের নির্যাতিত জনগণ আবার তাদের গণতন্ত্র মানবাধিকার ও ভোটের অধিকার যেন ফিরে পায়।

Shahid Uddin
২২ মে ২০২৪, বুধবার, ১:১৬ অপরাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status