শেষের পাতা
কাল রাইসি’র দাফন
মানুষের ঢল তাবরিজে
মানবজমিন ডেস্ক
২২ মে ২০২৪, বুধবার
তাবরিজ, কোমে মানুষের বাঁধভাঙ্গা ঢল। হাজারে হাজারে মানুষ। রাস্তায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। প্রয়াত প্রিয় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে শেষ বিদায় জানাতে সব শ্রেণি পেশার মানুষ মঙ্গলবার নেমে আসেন রাস্তায়। তাদের ভেতর দিয়ে নিহত প্রেসিডেন্টের মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় একটি উন্মুক্ত ট্রাকে করে। শোকার্ত জনতার ভিড়ে ট্রাক এগিয়ে যেতে বেগ পেতে হচ্ছিল। আগামীকাল বৃহস্পতিবার তাকে দাফন করার কথা তার জন্মস্থান মাশহাদ শহরে। তার আগে গতকাল তার লাশ তাবরিজ থেকে কোম শহরের ভিতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। মাশহাদের পর এটি ইরানে দ্বিতীয় পবিত্র শহর। প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি’র মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ পুরো ইরান। ৫ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হচ্ছে ইরানে। প্রিয় নেতাকে শেষ বিদায় জানাতে তাবরিজে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। মঙ্গলবার এই শহরে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সেখান থেকে রাইসি’র মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ইরানের পবিত্র নগরী কোমে। সেখানে তার দ্বিতীয় নামাজে জানাজা হওয়ার কথা। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকারে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মহসিন মানসুরি জানিয়েছেন, রাইসি’র সঙ্গে নিহত অন্যদের জানাজাও একসঙ্গে হবে। কোমের পর আজ বুধবার ইরানের রাজধানী তেহরানে রাষ্ট্রীয় আয়োজনে রাইসিকে চিরবিদায় জানাবে ইরান। এদিন জানাজায় নেতৃত্ব দেয়ার কথা রয়েছে সুপ্রিম নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির। উপস্থিত থাকার কথা বিদেশি অতিথিদের। এই দিনটিকে ইরানে সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। মানসুরি আরও জানিয়েছেন, তেহরানে তৃতীয় জানাজা শেষে বৃহস্পতিবার সকালে রাইসি’র মৃতদেহ দক্ষিণ খোরাসান প্রদেশের বিরজান্দে নিয়ে যাওয়া হবে। ১৫ বছর বয়সে যে মাশহাদ ছেড়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি সেই মাটিতেই চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন তিনি। ওদিকে প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যু নিয়ে চলমান তদন্তের বিষয়ে ইরানের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এখনও পর্যন্ত এমন কিছু পাওয়া যায়নি, যার ওপর ভিত্তি করে বলা যায় এটা স্যাবোটাজ। এক্ষেত্রে বিরূপ আবহাওয়া ছিল। পাহাড়ি অঞ্চলে চ্যালেঞ্জ ছিল। এমনও হতে পারে যান্ত্রিক সমস্যা হয়েছিল।
হেলিকপ্টার খুঁজে পেতে ইরানের সাহায্যের আবেদন নাকচ করেছে যুক্তরাষ্ট্র
ইরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চল প্রদেশে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার পর তা খুঁজে পেতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সাহায্য চেয়েছিল তেহরান। তবে তাতে সায় দেয়নি ওয়াশিংটন। সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই তথ্য জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। তিনি বলেছেন, ইরান সরকার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সহায়তা চেয়েছিল, কিন্তু ব্যবস্থাপনাগত কারণে আমরা ইরানকে এমন সহায়তা দিতে পারিনি। এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করেনি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সোমবার সকালে ইরানের স্থানীয় গণমাধ্যমের সূত্রে বিশ্ববাসী জানতে পারে ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। রাইসি’র বহরে আরও দুইটি হেলিকপ্টার ছিল যা সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। এতে নানা নিরাপত্তা ত্রুটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ। তারা বলছেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ার পর বাকি দুই হেলিকপ্টার কোথায় ছিল? তবে এখানে বড় ধরনের কোনো নিরাপত্তা ঘাটতি নেই বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। তিনি বলেছেন, আমরা হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছি। সেখানে বড় ধরনের কোনো নিরাপত্তা ঘাটতি ছিল বলে মনে হয় না।
রাইসিকে বহনকারী ওই হেলিকপ্টারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আব্দুল্লাহিয়ান সহ ৯ জনের মৃত্যু হয়। এতে শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে পুরো ইরান। পাঁচদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন দেশটির সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ আলি খোমেনি।