শেষের পাতা
অনিয়মে ডুবতে বসেছে এনআরবি ইসলামিক লাইফ
স্টাফ রিপোর্টার
২২ মে ২০২৪, বুধবার
নানা অনিয়ম ও গোঁজামিলে চলছে নতুন প্রজন্মের জীবন বীমা কোম্পানি এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ক্রমাগত অর্থ তছরুপ ও আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের কারণে কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থা নড়বড়ে। মেয়াদান্তে বীমা গ্রাহকদের দাবির টাকা পরিশোধ করার সক্ষমতা হারিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বীমা খাত সংশ্লিষ্টরা।
এনআরবি লাইফের গত তিন বছরের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ক্রমান্বয়ে আয়ের চেয়ে ব্যয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ব্যয় সৃষ্টির মূলহোতা হিসেবে কাজ করেছেন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ জামাল হাওলাদার। পাশাপাশি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সঠিক তদারকি ও অবহেলায় প্রতিষ্ঠানটি এই পরিস্থিতিতে পড়েছে বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, কোম্পানির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ২০২১, ২০২২ ও বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) পাঠানো অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ২০২৩ বিশ্লেষণ করে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অনুমোদনহীন বীমা পরিকল্প বিক্রিসহ আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়, পলিসি তামাদির উচ্চহার, ক্যাশ ইন হ্যান্ডের নামে অর্থ তছরুপ, একক প্রিমিয়ামকে মেয়াদি বীমা দেখিয়ে তহবিল লোপাট, সম্পদ বিনিয়োগে অনিয়মসহ নানা দুর্নীতির চিত্র পাওয়া যায়।
আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিবছর যে পরিমাণ প্রিমিয়াম আয় হয়েছে তার অধিকাংশ এসেছে অনুমোদনহীন বীমা পরিকল্প সুরক্ষিত দ্বিগুণ প্রদান এক কিস্তি বীমা থেকে। যার মেয়াদকাল ৬, ৮, ১০, ১২ ও ১৫ বছর হলেও প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের কাছ থেকে ৬ বছর মেয়াদে একক প্রিমিয়াম গ্রহণ করে চলেছে। কোম্পানি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০২১ সালে এই পরিকল্প থেকে একক প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে ৩০ লাখ টাকা। পরবর্তী বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে ১১ কোটি ১৯ লাখ টাকা। সর্বশেষ ২০২৩ সালে এই পরিকল্প থেকে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করা হয় প্রায় ১১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। গত তিন বছরে এই পরিকল্প থেকে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করা হয় প্রায় ২৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এই বিশাল পরিমাণ প্রিমিয়ামের উপর জীবন বীমা ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণী বিধিমালা-২০২০ অনুযায়ী এক কিস্তি বীমায় ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা ৫ শতাংশ হারে ব্যয় করার কথা ছিল ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা। কিন্তু আইডিআরএ’র নির্দেশনা অমান্য করে সিইও শাহ জামাল হাওলাদারের নির্দেশনায় কৌশলে ডাটা জালিয়াতির মাধ্যমে কখনো ৪৫ শতাংশ আবার কখনো ৭৫ শতাংশ হারে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের নামে গ্রাহকের অর্থ পুরোটাই আত্মসাৎ করা হয়েছে। গত তিন বছরে ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম, নবায়ন ও গ্রুপ বীমা আয় ৮১ কোটি টাকার মধ্যে অনুমোদনহীন বীমা পরিকল্প সুরক্ষিত দ্বিগুণ প্রদান এক কিস্তি বীমা থেকে এককালীন প্রিমিয়াম সংগ্রহ করা হয়েছে প্রায় ২৪ কোটি টাকা। এনআরবি ইসলামিক লাইফ এ যাবৎ ৮১ কোটি টাকা ব্যবসা করলেও প্রতিষ্ঠানটি লাইফ ফান্ড সন্তোষজনক অবস্থায় নিতে ব্যর্থ হয়েছে। উল্টো কোম্পানি একক কিস্তি বীমা পরিকল্প থেকে এককালীন হারে যে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে তার সবটুকুই ডাটা জালিয়াতি করে ঘাটতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ফলে বর্তমানে কোম্পানি চরম তারল্য সংকটে রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সিইও শাহ জামাল হাওলাদারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তার মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা দিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।