প্রথম পাতা
১১০০০ বাংলাদেশিকে দ্রুত ফেরত পাঠাচ্ছে বৃটেন
আরিফ মাহফুজ, লন্ডন থেকে
১৮ মে ২০২৪, শনিবার
আন্তর্জাতিক ছাত্র, ওয়ার্কার বা ভ্রমণ ভিসায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদনকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য বড় রকমের দুঃসংবাদ দিয়েছে বৃটিশ সরকার। বাংলাদেশি অ্যাসাইলাম আবেদনকারীদের ফাস্ট- ট্র্যাক রিটার্ন চুক্তির মাধ্যমে দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠাবে ইউকে হোম অফিস। বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে এমন ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্যের অবৈধ অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। চলতি সপ্তাহে ফাস্ট-ট্র্যাক রিটার্ন চুক্তির ইউকে-বাংলাদেশ যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং রিটার্ন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ।
বৃটেনের হোম অফিস জানিয়েছে, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ১১ হাজার বাংলাদেশির তালিকা করেছে হোম অফিস। যারা বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসায় বৃটেনে প্রবেশ করেছেন, এরমধ্যে যে সকল শিক্ষার্থী এসেই পড়াশোনা চলমান না রেখে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করেছেন বা ওয়ার্কার অথবা ভ্রমণ ভিসায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন করেছেন তাদের ৯৫ শতাংশ আবেদন খারিজ দিয়েছে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। তাদেরকে ফাস্ট-ট্র্যাক রিটার্ন চুক্তির অধীনে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে তারা।
হোম অফিস বলছে, অ্যাসাইলাম আবেদনকারীরা শুধুমাত্র স্থায়ীভাবে থাকার উদ্দেশ্যে আশ্রয়ের দাবি করে। বিষয়টি নিয়ে সরকার বাংলাদেশকে ভিসা ব্যবস্থার অপব্যবহারকারী বৃহত্তম দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বৃটিশ সরকার মনে করে, এ সকল অভিবাসীরা আন্তর্জাতিক ছাত্র, ওয়ার্কার বা ভ্রমণের ভিসায় এসে আশ্রয় দাবি করে বৃটেনে স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তবে এরকম বাংলাদেশিদের আশ্রয়ের দাবি প্রাথমিকভাবে মাত্র ৫ শতাংশ সফল হয়েছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে এই ফাস্ট-ট্র্যাক রিটার্ন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন বৃটেনের অবৈধ অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী মাইকেল টমলিনসন। যাতে শুধু ব্যর্থ আশ্রয়প্রার্থীই নয়, বিদেশি অপরাধী এবং ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানো সহজ হবে।
এই রিটার্ন চুক্তির ফলে বাধ্যতামূলক কোনো সাক্ষাৎকার ছাড়াই দেশে ফেরত পাঠানো হবে কারণ এ সকল অভিবাসীদের অপসারণের জন্য সহায়ক প্রমাণ পেয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এই সপ্তাহে লন্ডনে স্বরাষ্ট্র বিষয়ক প্রথম যৌথ বৃটেন-বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপে রিটার্ন চুক্তিতে সম্মত হয় বাংলাদেশ। উভয় দেশই তাদের অংশীদারিত্ব জোরদার করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিষয়ে সহযোগিতা জোরদার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
অবৈধ-অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী বলেছেন, অবৈধভাবে বৃটেনে আসা বা থাকা বন্ধের লক্ষ্যে অপসারণের কাজ ত্বরান্বিত করা আমাদের পরিকল্পনার একটি গুরুত্ব¡পূর্ণ অংশ। বাংলাদেশ আমাদের মূল্যবান অংশীদার। আমরা তাদের সঙ্গে এই বিষয় ও অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের সম্পর্ক জোরদার করছি।
ভিসা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি দেয়। এর মেয়াদ সাধারণত মাত্র কয়েক মাস হয়। কিন্তু আশ্রয়প্রার্থীরা যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে এসে থাকার আবেদন জানিয়েছে যার ৯৫ শতাংশই খারিজ করেছে বৃটেনের সরকার।
হোম অফিসে সূত্রমতে, আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে পাকিস্তান সবার উপরে রয়েছে। বৃটেনে স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য আবেদনকারী পাকিস্তানি নাগরিকের সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার ৪০০। এরপরের অবস্থানেই রয়েছে বাংলাদেশ। যুক্তরাজ্যে গত এক বছরে ছাত্র, ভ্রমণ বা কাজের ভিসায় যাওয়া প্রায় ১১ হাজার বাংলাদেশি স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আশ্রয়ের আবেদন করেন যাদের বেশির ভাগকেই দেশে ফেরত পাঠাবে বৃটেন সরকার।