বাংলারজমিন
পাইপ লাইনে জমে আছে প্রাকৃতিক গ্যাস
ঝিনাইদহে ১০ বছরে একটি সংযোগও দেয়া হয়নি
আমিনুল ইসলাম লিটন, ঝিনাইদহ থেকে
১৫ মে ২০২৪, বুধবারঝিনাইদহের শিল্পকারখানা ও বাসাবাড়িতে রান্নার কাজে গ্যাস ব্যবহারের জন্য আন্দোলন করে এক সময় রাজপথ কাঁপিয়ে ছিল সাধারণ মানুষ। আন্দোলনের চাপে সেই প্রাকৃতিক গ্যাস, পাইপ লাইনের মাধ্যমে ঝিনাইদহে এসেছে ২০১৪ সালে। অথচ সেই গ্যাস লাইন আসার পর আর কোনো জনপ্রতিনিধিই শিল্পকারখানা ও বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহের জন্য আজ পর্যন্ত সংসদে কথা বলেননি, রাজপথেও করা হয়নি কোনো আন্দোলন বা মানববন্ধন। ইতিমধ্যে একই লাইনের গ্যাস কুষ্টিয়ার কয়েকটি শিল্পকারখানায় সংযোগ প্রদান করা হয়েছে কিন্তু ঝিনাইদহের বিসিকে একটি শিল্পকারখানায়ও কোনো সংযোগ দেয়া হয়নি। অথচ একটি সংযোগ না থাকলেও বছরের পর বছর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বেতন ভাতা নিচ্ছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের ঝিনাইদহ টাউন বর্ডার স্টেশনের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারী ব্যবস্থাপক মীর মোবাশ্বের আলী মিন্টু জানান, ২০০৯ সালে গোটা দক্ষিণাঞ্চলে গ্যাস লাইন স্থাপনের প্রস্তাব পাস হয়। ২০১১ সাল থেকে এ অঞ্চলে জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়। জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের ৪১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। শৈলকুপা, ঝিনাইদহ ও কালীগঞ্জে মোট ৫২টি মৌজা থেকে ২৬ ফুট চওড়া জায়গা নিয়ে মোট ১১৭ একর জমি অধিগ্রহণ করে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড। তিনি জানান, ঝিনাইদহ জেলার উপর দিয়ে ৫২ কিলোমিটার গ্যাস লাইন তৈরি করা হয় এবং ২০১৪ সালেই গ্যাস পাইপ লাইন তৈরি শেষে পাইপে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এখনো এই পাইপের মধ্যেই পর্যাপ্ত গ্যাস মজুত রয়েছে।
গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের একটি সূত্র জানায় ঝিনাইদহের ব্যবসায়ীদের মধ্যে গ্যাস সংযোগ নেয়ার কোনো ইচ্ছা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তবে কুষ্টিয়ার বিআরবি কেবল ও খুলনার কিছু ব্যবসায়ী তাদের কলকারখানায় গ্যাস লাইন নিয়ে কাজ করছেন বলে ওই সূত্র জানায়। জানা গেছে, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী শুধু শিল্প কলকারখানায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ দেয়ার নিয়ম রয়েছে। সেই সঙ্গে টাউন বর্ডার স্টেশনের পাশে একটি সিএনজি স্টেশনে গ্যাস সংযোগ প্রদানেরও নিয়ম রয়েছে। সেখান থেকে সাধারণ মানুষ কম টাকায় সিলিন্ডারে গ্যাস ভরে বাসাবাড়িতে ব্যবহার করতে পারবেন।
ঝিনাইদহে গ্যাস সংযোগের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের খুলনা ও ভেড়ামারার ইনচার্জ সুমন মল্লিক জানান, গ্যাস সরবরাহ করা আমাদের দায়িত্ব না, এই কাজটি করে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (এসজিসিএল)। আমার জানামতে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি ঝিনাইদহে কাজ শুরু করেছে। তারা ঝিনাইদহ বিসিক, যশোর অভয়নগর, নড়াইল অর্থনৈতিক অঞ্চল ও খুলনা বিসিক এলাকায় গ্যাস সংযোগ প্রদানের জন্য কাজ শুরু করেছে। বিষয়টি নিয়ে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির কোনো কর্মকর্তা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
ঝিনাইদহ বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক সেলিনা রহমান জানান, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির কর্মকর্তারা ঝিনাইদহে এসেছিলেন। তারা ডিপো করতে চায় ঝিনাইদহ বিসিকের এরিয়া থেকে অনেক দূরে। সেখান থেকে গ্যাস লাইন বিসিক পর্যন্ত টেনে আনতে ব্যবসায়ীদের নিজেদের প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হবে। যে কারণে ব্যবসায়ীরা গ্যাস সংযোগ নিতে রাজি হচ্ছেন না। সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানিকে বলেছি ডিপোটা বিসিকের আশেপাশেই স্থাপন করতে।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের মডেল পৌরসভার মেয়র কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজল বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঝিনাইদহে স্থাপিত বিসিক শিল্পকারখানাসহ বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে বিদ্যুতের ওপর যেমন চাপ কমতো, তেমনি মানুষের জীবনমানও আরও উন্নত হতো। ঝিনাইদহে যে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ লাইন আছে তা আমার পৌর এলাকার সাধারণ মানুষ অনেকেই জানেন না। এ বিষয়ে গুরুত্বসহকারে আমার বড় ভাই ঝিনাইদহ-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুলকে বলবো।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে গ্যাস সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ফেজ-২-এর আওতায় খুলনাঞ্চলে গ্যাস সঞ্চালন লাইন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এর প্রথম অংশে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পয়েন্ট থেকে সিরাজগঞ্জ, নাটোরের বনপাড়া ও পাবনার ঈশ্বরদী হয়ে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পর্যন্ত ১৪১ কিলোমিটার এবং এর দ্বিতীয় অংশে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে ঝিনাইদহ-যশোর হয়ে খুলনা পর্যন্ত ১৬৫ কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণ করা হয়।