ঢাকা, ৪ মে ২০২৪, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

সনদ জালিয়াতি

সংশ্লিষ্টতা থাকলে বোর্ড চেয়ারম্যানকেও গ্রেপ্তার

স্টাফ রিপোর্টার
২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার
mzamin

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ জালিয়াতির ঘটনায় ডিবি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন প্রতিষ্ঠানটির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর খান। তিনি তার ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, অধীনস্থদের সনদ জালিয়াতির বিষয়টি কখনো নজরে আসেনি তার। এমনকি সনদ জালিয়াতি করা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে স্ত্রী শেহেলা পারভীনের টাকা নেয়ার বিষয়টিও তার জানা নেই। তবে তিনি এ ধরনের ঘটনার জন্য লজ্জিত ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তবে ডিবি বলছে, তিনি দায় এড়াতে পারেন না। দু’দিনের ভেতরে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে হবে। আর অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

এদিকে বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রীর সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রমাণ পেয়েছেন ডিবি’র তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে গতকাল সকালে ডিবিতে তলব করা হয়েছিল। প্রায় তিন ঘণ্টা তাকে ডিবি’র তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি।

বিজ্ঞাপন
সদ্য ওএসডি হওয়া আলী আকবর খানের কাছে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা বের করেছে, এর বেশি কিছু জানি না। সার্টিফিকেটের কাগজ ওয়েবসাইটে পাইনি। আমি ভেতরে ভেতরে এসব বিষয়ে জানার চেষ্টা করেছিলাম। তার বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকার ঘুষের অভিযোগ রয়েছে, এ বিষয়ে তদন্তও চলছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। কী পরিমাণ সার্টিফিকেট বাণিজ্য হয়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিডিয়াতে শুনতে পেয়েছি পাঁচ কি সাড়ে পাঁচ হাজার। তবে এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই, কতোগুলো হয়েছে। তার স্ত্রীর বিষয়ে তিনি বলেন, আমার স্ত্রী কোনো ভুল করেছে কিনা আমি জানি না। আমি তার বিষয়ে কিছুই জানি না। গোয়েন্দা সংস্থা তার কাছে কী তথ্য পেয়েছে সেটিও জানি না। আমি মনে করি বিনা অপরাধেই জেল খাটছে। ডিবি বানোয়াট বলছে বলেও দাবি করেন তিনি। তাহলে আপনাকে ওএসডি করা হয়েছে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আলী আকবর বলেন, মিডিয়ায় একটি সংবাদ চলে আসছে এবং ডিবি’র কাছে তথ্য আছে, সেজন্য দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। প্রকৃত ঘটনা উদ্‌ঘাটন করে শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত। এক্ষেত্রে আমরা লজ্জিত ও দুঃখিত। 

এদিকে এ বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ জালিয়াতির ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন প্রতিষ্ঠানটির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর খান। ডিবি পুলিশ তাকে দুইদিনের সময় দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। এরমধ্যে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেয়ার সুযোগ পাবেন তিনি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি তিনি সেটা না করেন এবং পরবর্তীতে সনদ জালিয়াতির সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধেও আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনিও স্বীকার করেছেন। তিনি যে সিস্টেম অ্যানালিস্ট শামসুজ্জামানের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন, সেটাও স্বীকার করেছেন। শামসুজ্জামান ও কারিগরির চেয়ারম্যানের স্ত্রী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। 

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও চেয়ারম্যান জানার পরও ব্যবস্থা না নেয়ার বিষয়ে ডিবি প্রধান বলেন, আমরা আরেকটু তদন্ত করবো। এটা ইচ্ছাকৃত নাকি জেনেও ব্যবস্থা নেননি তা জানার চেষ্টা করবো। দায় এড়ানোর তো সুযোগই নেই। তিনি ইতিমধ্যে ওএসডি হয়েছেন। সার্টিফিকেটগুলো কারা কিনেছেন, কোথায় কোথায় বিক্রি হয়েছে। সেটা দেখা হবে। বুয়েটের একটা পরীক্ষক দল আসবে। বিশ্লেষণ করে দেখা হবে- আসলে কী পরিমাণ সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছিল। কী পরিমাণ টাকা লেনদেন করা হয়েছে। তদন্ত আরও চলবে। কারা টাকা দিয়েছে, কারা সনদ নিয়েছে। তারা কখন কাকে কী পরিমাণ টাকা দিয়েছেন, সেসব বিষয় দেখা হবে। আর্থিকভাবে চেয়ারম্যান জড়িত কিনা তা খুঁজে বের করা হবে। সবকিছু তদন্ত করা হবে। তাকে ছেড়ে দেয়া হলেও ডিবির নজরদারিতে থাকবেন। যারা অন্যায় করেছে, রক্ষক হয়ে যদি এখন ভক্ষকের ভূমিকা পালন করে তাহলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।  

গত ১লা এপ্রিল কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ জালিয়াতির অভিযোগে প্রথমে গ্রেপ্তার হন সিস্টেম অ্যানালিস্ট প্রকৌশলী এ কে এম শামসুজ্জামান। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে একে একে উঠে আসে এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত বোর্ড সংশ্লিষ্ট অনেক ছোট-বড় কর্মকর্তা ও দেশের কয়েকটি কারিগরি স্কুল ও কলেজের প্রধান আর অধ্যক্ষদের নাম। গ্রেপ্তার করা হয়েছে চেয়ারম্যানের স্ত্রীকেও। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছ। এরমধ্যে ৫ জন দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। তবে কি পরিমাণ সনদ জালিয়াতি করা হয়েছে, সেটি এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি ডিবি। তা জানার চেষ্টা চলছে। তবে গ্রেপ্তারকৃতরা কয়েক বছর ধরে সনদ জালিয়াতি করে আসছিল বলে জানিয়েছে ডিবি। 
 

পাঠকের মতামত

আওমীলীগ সরকারের প্রধান টার্গেট শিক্ষা ধংস করে দেওয়া, তাই BSC engineering পাশ করেও আজ তিন বছর বেকার।

Faiz Ahmed
২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ৮:১৯ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status