ঢাকা, ১৭ মে ২০২৪, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

যে ‘দ্বন্দ্ব’ শেষ হয়েও হলো না

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
৩ মে ২০২৪, শুক্রবার
mzamin

স্বাধীনতার পর থেকে এক ওসমানী ছাড়াও আর কেউ-ই সিলেট-২ আসন থেকে তেমন আলোকিত হতে পারেননি। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী কিংবা মেয়র; এসব ছিল স্বপ্নেরও বাইরে। কিন্তু এবার স্বপ্নের ষোলকলা পূর্ণ শুধু হয়নি, সিলেটের কর্তৃত্ব এলো এ আসনের মানুষের কাছে। সিলেট-২ আসনের এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী হলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী। এখন পর্যন্ত সিলেট জেলায় মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তিনি একক নেতা। আর এক সময় সিলেট-২ আসন থেকে এমপি হওয়ার দৌড়ে থাকা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এখন সিলেটের মেয়র। এ আসনের দুই নেতাই সিলেটের দায়িত্বে। তাদের ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে সিলেটের রাজনীতি সহ সবকিছু। কিন্তু কোথায় যেন গলদ থেকেই যাচ্ছে। সিটি ও জাতীয় নির্বাচন চলাকালে দু’জনের ঘাটতি থাকা সম্পর্কে যেন নতুন করে জোড়া লেগেছে।

বিজ্ঞাপন
গত বছর জুনে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যুক্তরাজ্য থাকাকালে মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য ডাক পড়েছিল আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর। ওই নির্বাচনে আনোয়ারের পক্ষে মাঠে একাট্টা ছিলেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। তখন তিনি এমপি কিংবা মন্ত্রী না, কেবল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এরপরও  মেয়র পদে আনোয়ারকে জয়ী করতে তিনি ভুল করেননি। দৌড়েছেন নগরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। জয়ী হয়েছেন আনোয়ার। এমপি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর থাকা আনোয়ার হলেন সিলেটের মেয়র। সেক্ষেত্রে দলের অবদানই বেশি। দল থেকে তাকে মনোনয়ন দেয়ার পর সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়েই মাঠে ছিলেন। মেয়র আনোয়ারও এর প্রতিদান দিতে ভুল করেননি। জাতীয় নির্বাচনে সিলেট আওয়ামী লীগ থেকে জেলার দু’টি আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন দু’জন। এর মধ্যে জেলার সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী সিলেট-২ ও নগর সভাপতি মাসুক উদ্দিন সিলেট-৫ আসন থেকে প্রার্থী হন। মেয়র আনোয়ার দুই নির্বাচনী আসনে গিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি এক্টিভ ছিলেন সিলেট-২ আসনে। বলেছিলেন; শফিক চৌধুরী এমপি হলে মন্ত্রীও হবেন। তার কথার সত্যতা মিলেছে। এমপি হওয়ার পর শফিকুর রহমান প্রতিমন্ত্রীও হলেন। কিন্তু মেয়র হলেও এখনো প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এর জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। সিলেট আওয়ামী লীগ দু’ধারায় বিভক্ত। এক অংশে আছেন জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকরা এবং অপর অংশে আছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও তিন এমপি। এ দ্বন্দ্ব এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। এ দ্বন্দ্বের কারণে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান আয়োজিত অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেলেও যান না জেলা ও নগর নেতারা। এমনকি সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এখনো সংবর্ধনা পাননি সিলেট জেলার একমাত্র প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীও। মূলত: সিলেট আওয়ামী লীগের বিভক্তির কারণে প্রতিমন্ত্রী ও মেয়রের অবস্থান দু’দিকে। সেটি এখন ক্রমশ আরও স্পষ্ট হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের  নেতাদের নিয়েই সিলেটে তার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তার সঙ্গে রয়েছেন নগর সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলার সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান ও নগর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন। আর মেয়র আনোয়ার বলয় গড়েছেন; আওয়ামী লীগের  কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, মৌলভীবাজার-২ আসনের এমপি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান ও সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি রঞ্জিত সরকারের সঙ্গে। সম্প্রতি সিলেটে মেয়র আয়োজিত অনুষ্ঠানে তার বলয়ের নেতারা উপস্থিত থাকলেও জেলা কিংবা নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এতে উপস্থিত হননি। এই অবস্থায় প্রতিমন্ত্রী ও মেয়রের বর্তমান এ দ্বন্দ্বের ‘হটস্পটে’- পরিণত হয়েছে বিশ্বনাথ। সেখানে বর্তমান মেয়র মহিবুর রহমান চৌধুরীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। পূর্ব থেকে চলমান থাকা দ্বন্দ্ব গত সংসদ নির্বাচনের পর থেকে প্রকট হয়েছে। মেয়র মুহিবুর রহমান পদে থেকেই জাতীয় নির্বাচনে শফিকুর রহমান চৌধুরীর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে লড়াই করেন। তবে নির্বাচনের দিন ভোটে টিকতে পারেননি মুহিবুর রহমান। ঘোষণা দিয়ে মাঠ থেকে সরে যান। শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রতিমন্ত্রীও হন। এরপর থেকে বিশ্বনাথে মেয়র মুহিবুর রহমানের বিপক্ষে একজোট হয়েছেন আওয়ামী লীগ দলীয় কাউন্সিলররা। সম্প্রতি তারা মেয়র মুহিবুর রহমানের নানা অনিয়ম তুলে ধরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অনাস্থাও জানিয়েছে। মামলা হয়েছে পাল্টাপাল্টি। বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন- বিশ্বনাথে মেয়রের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগপন্থি কাউন্সিলররা অনাস্থা প্রস্তাব দিয়ে যখন মাঠে সরব হয়েছেন তখন মেয়র মুহিবুর রহমান সিলেটের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর আনুকূল্য পাচ্ছেন। ইতিমধ্যে মেয়র মুহিবুর রহমান সহ সকল আসামি মামলা থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে আওয়ামী লীগপন্থি কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এ নিয়ে বিশ্বনাথে উত্তেজনা চলছে। সিলেটের মেয়রের হস্তক্ষেপে নাখোশ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীও। বছরখানেক আগেও ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগ দু’ধারায় বিভক্ত ছিল। কেউ ছিলেন শফিকুর রহমান চৌধুরীর পক্ষে, আবার কেউ ছিলেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পক্ষে। পরবর্তীতে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সিলেটে মেয়র হওয়ার পর নেতারা বিভক্তি ভুলে এক হয়েছিলেন। কিন্তু নতুন করে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী হস্তক্ষেপ করায় এবার প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে সিলেটের রাজনীতিতে দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা। তারাও বিশ্বনাথে দু’নেতার বিভক্তির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানিয়েছেন। 
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

রাস্তায় রাস্তায় ট্যাংক/ হামাস-ইসরাইল তীব্র লড়াই

সমমনাদের সঙ্গে বিএনপি’র বৈঠক/ যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতকে নেয়ার পরামর্শ

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status