শেষের পাতা
২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন, বিদেশি ঋণের রেকর্ড লক্ষ্যমাত্রা
স্টাফ রিপোর্টার
১৭ মে ২০২৪, শুক্রবারআগামী অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) চূড়ান্ত করেছে সরকার। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে রেকর্ড ১ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে। পরিবহন অবকাঠামো সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোতে এবারো সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে এডিপি অনুমোদন করা হয়। বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সচিব সত্যজিৎ কর্মকার।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নতুন এডিপি’র আকার চলতি অর্থবছরের মূল এডিপি’র তুলনায় ২ হাজার কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) তুলনায় ২০ হাজার কোটি টাকা। মূল এডিপি’র সঙ্গে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের প্রায় ১৩ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার এডিপিও অনুমোদিত হয়েছে।
এদিকে এডিপিতে পরিবহন ও যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে সর্বাধিক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের প্রায় ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বা ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৫ এবং পদ্মা রেল সংযোগের মতো প্রকল্পের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প এবং মাতারবাড়ি ১,২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪০ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা বা ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার ৭৫১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বা ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। শিক্ষা খাত তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা বা ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ।
আবাসন ও কমিউনিটি সুবিধাবলী খাতে প্রায় ২৪ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা মোট প্রস্তাবিত এডিপি বরাদ্দের ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২০ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। এর পরে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাত প্রস্তাবিত এডিপি বরাদ্দের ৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ, কৃষি খাত ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং পরিবেশ ও জলবায়ু খাত ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ পেয়েছে। শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা পেয়েছে ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং তথ্য প্রযুক্তি খাত পেয়েছে ১ দশমিক ৮১ শতাংশ।
অন্যদিকে এডিপিতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে, যা মোট বরাদ্দের প্রায় ৩৮ হাজার ৮০৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বা ১৫ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, যা মোট বরাদ্দের ১২ দশমিক ৩৯ শতাংশ বা ৩২ হাজার ৪২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৯ হাজার ১৭৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা পাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ ছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রায় ১৬ হাজার ১৩৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ১৩ হাজার ৭৪১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১৩ হাজার ৭২৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১২ হাজার ৮৮৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে। এর বাইরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ১১ হাজার ৩৮৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ১০ হাজার ৩৭৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ৮ হাজার ৬৮৭ কোটি ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম বলেন, এবার গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্প নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়াতে প্রতি তিন মাস পরপর প্রকল্প মূল্যায়ন করে দেখতে। এখন থেকে তিন মাস পরপর মূল্যায়ন করে দেখা হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা নিয়ে আসা কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে নিয়োজিত করার। এখন থেকে তাদের সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে পদায়ন করতে সচিবদের নিদের্শনা দেয়া হবে।
নতুন বরাদ্দে স্বাস্থ্য খাতের সেবার মানে কোনো ধরনের পরিবর্তন আসবে কিনা এবং এ খাতে নৈরাজ্য বন্ধে তা ভূমিকা রাখবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, বরাদ্দ বাড়ানোর মূল সমস্যা হচ্ছে স্বাস্থ্য খাত তা বাস্তবায়ন করতে পারে না। বাস্তবায়ন সক্ষমতা কম হওয়ায় অর্থ বরাদ্দ সেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে না। শিক্ষা খাতেও বাস্তবায়ন সক্ষমতা বৃদ্ধি না পাওয়ায় যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ বেশি যাচ্ছে। যোগাযোগ খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়নটি করতে চায়। বাস্তবায়নের হার কমে যাওয়া প্রসঙ্গে সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, বিষয়টি এনইসি সভায় আলোচনা হয়েছে। কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ পথে রয়েছে। চলতি অর্থবছর বাস্তবায়নের হার বাড়বে আশা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।