শেষের পাতা
বাংলাদেশে নেসলের শিশুখাদ্য সেরেলাকে মাত্রাতিরিক্ত চিনি
মানবজমিন ডেস্ক
১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবারবিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমোদন ছাড়াই অধিক মাত্রায় চিনির উপস্থিতি পাওয়া গেছে সুইস কোম্পানি নেসলের বাংলাদেশে শিশুখাদ্য হিসেবে বিক্রীত দুটি পণ্য সেরেলাক ও নিডো’তে। উন্নত বিশ্বে, যেমন যুক্তরাজ্য, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড সহ বহু দেশে এসব খাদ্যে বাড়তি কোনো চিনি যোগ করা হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে সেই কাজটিই করা হচ্ছে। এই দুটি শিশুখাদ্য নিয়ে গবেষণা করেছে সুইজারল্যান্ডের অলাভজনক সংস্থা পাবলিক আই এবং ইন্টারন্যাশনাল বেবি ফুড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক। এরপর তারা এসব তথ্য প্রকাশ করেছে। উল্লেখ্য, শিশু খাদ্যে চিনি যুক্ত না করার বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সুপারিশ আছে। এসব খাদ্যে চিনি যুক্ত করা হলে তা স্থূলতা এবং দীর্ঘস্থায়ী কয়েকটি রোগের কারণ হতে পারে। এ বিষয়ে যৌথভাবে গবেষণা করেছে ওই দুটি সংগঠন। তাতে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেসব নেসলের এই দুটি পণ্য বিক্রি করা হয়, সেখানে পরীক্ষা করে বেশি মাত্রায় চিনি যুক্ত করার প্রমাণ পেয়েছে তারা। মিডিয়ার খবরে বলা হয়, পাবলিক আই তার প্রতিবেদনে বলেছে, বিশ্বের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্য কোম্পানি নেসলে বেশ কয়েকটি দেশে শিশুদের জন্য তৈরি করা দুধ ও সিরিয়াল পণ্যগুলোতে বাড়তি চিনি ও মধু যুক্ত করে। যা স্থূলতা এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধের আন্তর্জাতিক নীতিমালার লঙ্ঘন। এই ঘটনা কেবল এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে পাওয়া গেছে। প্রতিবেদন প্রকাশের পর নেসলের শিশুখাদ্য পণ্যের বিষয়ে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করছে কর্তৃপক্ষ। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বলেছে, গবেষণায় পাওয়া ফলাফল একটি বৈজ্ঞানিক প্যানেলের সামনে উপস্থাপন করা হবে। পাবলিক আই বলছে, নেসলে সুইজারল্যান্ডে বাজারজাত করা তাদের পণ্য সেরেলাকে বাড়তি কোনো চিনি ব্যবহার করে না। কিন্তু বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলোতে সেরেলাকে বাড়তি চিনি যুক্ত করে তারা।
মধ্য-আমেরিকার বেশির ভাগ দেশে ইনফ্লুয়েন্সারদের ব্যবহার করে নিডোর আক্রমণাত্মক প্রচার চালায় নেসলে। ওই অঞ্চলে এক বছর বা তার বেশি বয়সী বাচ্চাদের জন্য বাজারজাত করা ফর্মুলায় একটি শিশুকে সাধারণভাবে একবার যে পরিমাণ খাবার দেয়া হয় তাতে চিনির পরিমাণ অনেক বেশি। বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া, সেনেগাল এবং দক্ষিণ আফ্রিকাতেও নিডো ব্যাপক জনপ্রিয়। এসব দেশেও এক থেকে তিন বছর বয়সী ছোট বাচ্চাদের জন্য তৈরি করা নেসলের সব পণ্যে বাড়তি চিনি আছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে নেসলের ৯টি খাদ্যপণ্য বিক্রি করা হয়। এসব পণ্যের প্রত্যেকটিতেই বাড়তি চিনি আছে। নেসলের এসব পণ্য থেকে একজন শিশুকে একবার যে পরিমাণ খাবার পরিবেশন করা হয়, তাতে প্রায় ৩ দশমিক ৩ গ্রাম বাড়তি চিনি থাকে।
এনডিটিভি নেসলে ইন্ডিয়ার একজন মুখপাত্রের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেছে। ওই মুখপাত্র বলেছেন, তারা গত পাঁচ বছরে নেসলের শিশুখাদ্যে যোগ করা চিনির পরিমাণ প্রায় ৩০ শতাংশ কমিয়েছে। এ ছাড়া আরও কমিয়ে আনার বিষয়ে তারা পণ্যগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করছেন। বর্তমানে ভারতের বাজারে নেসলের ১৫টি পণ্য রয়েছে। এসব পণ্যের প্রত্যেকটিতেই বাড়তি চিনির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ভারতে বিক্রি করা নেসলের সব পণ্যে বাড়তি চিনির পরিমাণ গড়ে প্রায় ২ দশমিক ৭ গ্রাম। ওই মুখপাত্র বলেন, আমরা শৈশবকালের জন্য আমাদের পণ্যের পুষ্টির গুণমানে বিশ্বাস করি এবং উচ্চমানের উপাদান ব্যবহারে অগ্রাধিকার দিই। গবেষণায় দেখা যায়, ভারতে নেসলের ১৫টি সেরেলাক শিশুখাদ্য থেকে একটি শিশুকে একবার যে পরিমাণ খাবার দেয়া হয় তাতে গড়ে প্রায় ৩ গ্রাম চিনি থাকে। একই পণ্য জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যে বিক্রি করা হচ্ছে বাড়তি চিনি ছাড়াই। অন্যদিকে ইথিওপিয়া ও থাইল্যান্ডে এই চিনির পরিমাণ প্রায় ৬ গ্রাম।
বিশ্বে শিশুখাদ্যের এক নম্বর ও সর্বাধিক বিক্রীত পণ্য নেসলের সেরেলাক। ইউরোমনিটরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্ব জুড়ে নেসলের এই একটি শিশুখাদ্যের বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ১ বিলিয়ন ডলার। পাবলিক আই বলেছে, আমরা নেসলের প্রধান বাজার আফ্রিকা, এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকায় বিক্রি করা ১১৫টি পণ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। এর মধ্যে কমপক্ষে ১০৮টি (প্রায় ৯৪ শতাংশ) পণ্যে বাড়তি চিনি রয়েছে। সুইস এই অলাভজনক সংস্থা বলেছে, আমরা এসব পণ্যের মধ্যে ৬৭টিতে বাড়তি চিনির পরিমাণ নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের বিশ্লেষণে একবার পরিবেশন করা খাবারে প্রায় ৪ গ্রাম বাড়তি চিনির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে নেসলের খাদ্যপণ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ চিনির উপস্থিতি পাওয়া গেছে ফিলিপাইনে। দেশটিতে একজন শিশুকে সাধারণভাবে একবার যে পরিমাণ খাবার দেয়া হয়, তাতে গড়ে প্রায় ৭ দশমিক ৩ গ্রাম বাড়তি চিনি থাকে।