খেলা
সেই লুনিন এখন রিয়ালের ‘নায়ক’
স্পোর্টস ডেস্ক
১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবারমাঠ জুড়ে পরিশ্রমী ফুটবল খেলে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পেলেন ফেদে ভালভের্দে। তবে ম্যাচসেরার ট্রফিটি উঠতে পারতো আন্দ্রি লুনিনের হাতেও। ১২০ মিনিট ধরে রিয়াল মাদ্রিদের দেয়াল হয়েছিলেন তিনি গোলবারের নিচে। পরে টাইব্রেকারের রোমাঞ্চেও তিনিই জয়ের নায়ক।
মৌসুমজুড়েই অসাধারণ পারফর্ম করে চলেছেন ২৫ বছর বয়সী এই ইউক্রেনিয়ান গোলকিপার। তবে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ কোয়ার্টার-ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে বুধবার তিনি দেখালেন ক্যারিয়ারের সেরা পারফরম্যান্স। মূলত রিয়ালের রিজার্ভ গোলকিপার ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে রিয়ালে আসার পর ধারে বিভিন্ন ক্লাবে খেলানো হয় তাকে তিন মৌসুম। পরে মূল স্কোয়াডে রাখা হলেও বিকল্প গোলকিপার হয়েই ছিলেন। এই মৌসুমের আগেও দলের খুব একটা ভরসা আদায় করে নিতে পারেননি তিনি। গুরুতর চোটে থিবো কোর্তোয়া লম্বা সময়ের জন্য ছিটকে যাওয়ার পর উদ্বিগ্ন রিয়াল মাদ্রিদ তাই ধারে এই মৌসুমের জন্য নিয়ে আসে গোলকিপার কেপা আরিসাবালাগাকে। লুনিনকে তখন তৃতীয় পছন্দের গোলকিপার বললেও ভুল হয় না। তবে এটিকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন লুনিন। তাকে ও কেপাকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলাচ্ছিলেন কোচ কার্লো আনচেলত্তি। সেই সুযোগটাই দুহাত ভরে গ্রহণ করে এমনভাবে নিজেকে মেলে ধরেন যে, দলের প্রথম পছন্দের গোলকিপার হয়ে ওঠেন। কোর্তোয়ার মতো অসাধারণ একজনের অভাব তিনি বুঝতেই দেননি এই মৌসুমে।
প্রচণ্ড চাপ, প্রতিপক্ষের মাঠ ও দর্শক, দলের রক্ষণাত্মক কৌশল, এত বড় ম্যাচে ক্যারিয়ারে প্রথমবার ১২০ মিনিট ধরে খেলা এবং এরপর টাইব্রেকারের পরীক্ষা, সবকিছু মিলিয়ে এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি লুনিনের। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ দুর্দান্তভাবে জয় করে লুনিন বার্তাটা দিয়ে রাখলেন, তিনি খুব একটা পিছিয়ে থাকবেন না কোর্তোয়া ফেরার পরও। বলেন, “আমার জন্য এটা ছিল অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা। ক্লান্তিতে প্রায় নিঃশেষিত হয়ে গেছি আমি। ক্যারিয়ারের প্রথমবার এরকম ম্যাচ খেললাম- ১২০ মিনিট মাঠে থাকা, এরপর টাইব্রেকার, এত এত চাপ আর এরকম দায়িত্ব- সবকিছু ভালোভাবে করতে পারার অনুভূতি ব্যাখ্যা করার মতো নয়।” ম্যাচজুড়ে দলকে বারবার রক্ষা করার পর টাইব্রেকারে বারনার্দো সিলভা ও মাতেও কোভাচিচের শট ঠেকান লুনিন। সিলভার শটটি ছিল বিস্ময়কর। আগের লেগে দুর্দান্ত গোল করা ফুটবলার এবার টাইব্রেকারে অতি দুর্বল এক শট নেন লুনিনের সোজাসুজি। জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকেই অনায়াসে বল ঠেকিয়ে দেন রেয়াল গোলকিপার। লুনিন জানালেন, কোচিং স্টাফের পরামর্শে সিলভার শটের ক্ষেত্রেই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। লুনিন বলেন, “কোনো একটি শটের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকিটা আমাকে নিতেই হতো (মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা)। আমরা এটিকেই বেছে নেই (সিলভার শট) এবং স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা, এটি আমাদের পক্ষে চলে আসে।” সিটির ঝড় সামলে নিজে নায়ক হলেও ম্যাচ শেষে সতীর্থদেরকে কৃতিত্ব দিলেন লুনিন। বলেন, “অনেক খেলা আছে, যেগুলোতে লড়াইয়ের পথ বেছে নিতে হয়, অনেক চ্যালেঞ্জ জিততে হয়। সবসময় তো বল পায়ে খেলা যায় না এবং মাঠে সেরা দল হওয়া যায় না। আজকের রাতটি ছিল সেরকমই। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে প্রতিপক্ষের মাঠে খেলার চ্যালেঞ্জ এটি- অনেক লড়াই করতে হয়েছে আমাদের এবং আমরা তৈরিই ছিলাম। সতীর্থদের প্রতি কৃতজ্ঞ আমি, মাঠে যেভাবে সবকিছুর জন্য নিজেদের উজাড় করে দিয়েছে তারা। আমার সতীর্থরা যেভাবে ১২০ মিনিট ধরে মাঠে ছুটে বেরিয়েছে, নিজেকে দিয়ে এমন কিছু চিন্তাও করতে পারি না আমি।”