তথ্য প্রযুক্তি
কারো মৃত্যুর পর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের কী করতে হয়?
(৭ মাস আগে) ১২ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১২:০৬ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ২:১৯ অপরাহ্ন
“কিছু মানুষ জানেই না যে ম্যাথিউ মারা গেছে, তারা এখনও জন্মদিনের নোটিফিকেশন পায়, তার ফেসবুক ওয়ালে গিয়ে ‘শুভ জন্মদিন’ লেখে। এটা খুব একটা ভালো লাগে না”।
হেইলি স্মিথের স্বামী ম্যাথিউ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দুই বছর আগে মারা যান। সেসময় তার বয়স হয়েছিল ৩৩ বছর। হেইলি এখনো ভাবছে ম্যাথিউয়ের সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট নিয়ে কী করা যায়।
“আমি ম্যাথিউয়ের ফেসবুক অ্যাকাউন্টকে মেমোরিয়ালাইজড করতে চেষ্টা করেছি। আর করতে এটিতে তার মৃত্যুর সনদপত্র আপলোড করতে হয়,” বলেন যুক্তরাজ্যে বসবাসরত এই দাতব্য কর্মী।
“আমি ২০ বারের ওপরে সেটা করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু এটি নিচ্ছেই না- ফলে কিছুই হচ্ছে না। ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ করে এর সমাধান করার মতো শক্তি আমার আর নেই”।
মেমোরিয়ালাইজড অ্যাকাউন্ট কী?
প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষ সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করছে। ফলে মৃত্যুর পর কারো অনলাইনে উপস্থিতির কী হয় সেটি বেশ বড়সড় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কোনো স্বজন সামাজিক মাধ্যমকে ব্যক্তির মৃত্যু সম্পর্কে না জানানো পর্যন্ত তার অ্যাকাউন্ট সক্রিয় থাকে।
ঘনিষ্ঠ আত্মীয় মৃত্যুর খবর জানালে কিছু সামাজিক মাধ্যম প্রোফাইল বন্ধ করে দেয়ার সুযোগ দেয়। আবার কিছু সামাজিক মাধ্যম দেয় ভিন্ন বিকল্প।
যেমন- মেটার মালিকানাধীন ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামে ব্যক্তির মৃত্যু সনদপত্র দিলে হয় অ্যাকাউন্টটি ডিলিট করে দেয়া হয়, অথবা মেমোরিয়ালাইজড করে দেয়া হয়- অর্থাৎ অ্যাকাউন্টটি একটি সময়ে আটকে যাবে এবং ব্যবহারকারীকে স্মরণ করবে। এসময় অন্যরা অ্যাকাউন্টটিতে ছবি ও স্মৃতি পোস্ট করতে পারবে।
মৃত ব্যক্তির অ্যাকাউন্টের নামের পাশে ‘ইন মেমোরিয়াম’ বা ‘স্মরণে’ লেখা থাকবে। কেউই ওই অ্যাকাউন্টে লগ ইন করতে বা চালাতে পারবে না, যদি না ব্যবহারকারী মৃত্যুর আগে কোনো ‘লিগ্যাসি কন্টাক্ট’ দিয়ে যায়।
সাধারণত পরিবারের কোনো সদস্য বা বন্ধুকে ‘লিগ্যাসি কন্টাক্ট’ হিসেবে দেয়া যায়। তারা মৃত ব্যক্তির একাউন্টের কন্টেন্ট পরিচালনা কিংবা ডিএক্টিভেটের (নিষ্ক্রিয়) অনুরোধ করতে পারে।
ফেসবুকে ‘পিপল ইউ মে নো’ বা ‘যাদের হয়তো আপনি চেনেন’ তালিকায় সম্ভাব্য ভার্চুয়াল বন্ধুদের কাছে মেমোরিয়ালাইজড অ্যাকাউন্ট দেখানো হয় না। আর মৃত ব্যক্তির বন্ধুদের কাছে তার জন্মদিনের কোনো নোটিফিকেশনও যায় না।
গুগলের মালিকানাধীন ইউটিউব, জিমেইল ও গুগল ফটোসের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিষ্ক্রিয় থাকা অ্যাকাউন্ট ও এর উপাত্তের কী হবে তা ‘ইনএক্টিভ একাউন্ট’ সেটিংসে গিয়ে পরিবর্তনের সুযোগ থাকে ব্যবহারকারীদের।
এক্স (সাবেক টুইটার) একাউন্টের ক্ষেত্রে কারো প্রোফাইল মেমোরিয়ালাইজড করার সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে ব্যক্তির মৃত্যু হলে কিংবা একাউন্টের মালিক তা ব্যবহারে অক্ষম হলে অ্যাকাউন্টটি কেবল ডিএক্টিভেট করা যাবে।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের প্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদদাতা জো টিডি বলেন, “বিভিন্ন পন্থা রয়েছে, কিন্তু সব কোম্পানিই মৃত ব্যক্তির গোপনীয়তাকে অগ্রাধিকার দেয়”।
“লগইন বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়া হবে না আর সুনির্দিষ্ট অনুরোধের ভিত্তিতে আপনি কেবল নির্দিষ্ট কিছু জিনিস যেমন ছবি এবং ভিডিও দেখতে পারবেন। সেখানেও কখনো কখনো আদালতের আদেশের প্রয়োজন হয়”।
টিকটক এবং স্ন্যাপচ্যাটের মতো নতুন সামাজিক মাধ্যমগুলোতে অবশ্য এমন কোনো শর্ত নেই, বলেন তিনি।
আমাদের কি ডিজিটাল লিগ্যাসি উইল প্রস্তুত করা উচিত?
মৃত ব্যক্তির এক্টিভ প্রোফাইলের উপাত্ত, ছবি বা অন্যান্য কন্টেন্ট ভুল হাতে পড়লে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন সাইবার-অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও সার্বিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাই-টেক অপরাধ বিভাগের সাবেক প্রধান সাসা জিভানোভিচ।
প্রোফাইলের কিছু ডেটা ডাউনলোড করে কিংবা পুরো অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়েও তা করা হতে পারে।
“একই নামে মিথ্যা অ্যাকাউন্ট তৈরির ক্ষেত্রে ছবি, তথ্য এবং ভিডিওগুলো ব্যবহৃত হতে পারে। আর যারা জানেন না যে ওই ব্যক্তি মারা গেছেন তার পরিচিত এবং বন্ধুদের কাছ থেকে অর্থও আদায় করা হতে পারে,” বলেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের ডিজিটাল লিগ্যাসি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জেমস নরিস জোর দিয়ে বলেন যে সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোতে কী আপলোড করা হচ্ছে তা নিয়ে চিন্তা করা ও সম্ভব হলে ব্যাকআপ রাখা সবার জন্যই জরুরি।
ফেসবুকের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন যে, আপনি আপনার আগের সব ছবি ও ভিডিও ডাউনলোড করতে পারেন এবং তা আপনার আত্মীয়দের পাঠাতে পারেন।
“সুতরাং যদি আমার কোনো দুরারোগ্য রোগ ধরা পড়ে আর আমার একটি ছোট বাচ্চা থাকে যে ফেসবুকে নেই, সেক্ষেত্রে আমি আমার সমস্ত ছবি ও ভিডিও ডাউনলোড করতে পারি। ইনবক্সের বার্তাগুলো সরিয়ে ফেলতে পারি কারণ আমি চাইবো না যে আমার সন্তান আমার ব্যক্তিগত বার্তা দেখুক, আমার প্রিয় ছবিগুলো পছন্দ করে প্রতিটির সঙ্গে একটি গল্প লিখে যাব,” বলেন তিনি।
তিনি মনে করেন মৃত্যুর পরে সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলোর সঙ্গে কী ঘটবে তার নিয়ে আগে থেকেই পরিকল্পনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সবাইকে একটি ডিজিটাল নিগ্যাসি উইল প্রস্তুত করারও পরামর্শ দেন।
“দিনশেষে সামাজিক নেটওয়ার্কিং একটি ব্যবসা। এই প্ল্যাটফর্মগুলো আপনার ডিজিটাল লিগ্যাসির অভিভাবক না”, বলেন তিনি। “আপনিই আপনার ডিজিটাল লিগ্যাসির অভিভাবক”।
তবে তিনি মনে করেন যে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো শোকাহত স্বজনদের জন্য প্রক্রিয়াটিকে সহজ করে তুলতে পারে।
“প্ল্যাটফর্মটি কী প্রদান করে, এতে কোন ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে সে সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর মতো বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ কারণ সবাই জানে না যে সেগুলো আছে,” বলেন তিনি।
সূত্র- বিবিসি