শেষের পাতা
মন্ত্রী অতিশীর অভিযোগ
আম আদমি পার্টি ভেঙে দিতে চায় বিজেপি, দলে যোগ দেয়ার প্রস্তাব
মানবজমিন ডেস্ক
৩ এপ্রিল ২০২৪, বুধবারআসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দিল্লিতে ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টিকে ভেঙে দিতে চায় কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার। এ অভিযোগ করেছেন আম আদমি পার্টির নেত্রী ও দিল্লির মন্ত্রী অতিশী। তিনি বলেছেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে আম আদমি পার্টির সিনিয়র আরও চারজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোকে ব্যবহার করে এই দমনপীড়ন চালাবে বিজেপি। গ্রেপ্তার করা হতে পারে অতিশী, সৌরভ ভারাদওয়াজ, আম আদমি পার্টির এমপি রাঘব চাডা এবং দলীয় এমএলএ দুর্গেশ পাঠককে। গত ২১শে মার্চ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তারপর বিরোধী কংগ্রেসের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়। এসবকে দেখা হচ্ছে বিরোধীদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন হিসেবে। ২০১৯ সালে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন পাস হলেও তা করোনাভাইরাস সংক্রমণের অজুহাতে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। অবশেষে গত মাসের মাঝামাঝি তা কার্যকর করা হয়। এক্ষেত্রে বলা হয়, করোনা সংক্রমণের কারণে আইনটি কার্যকরে বিলম্ব হয়েছে। এর সঙ্গে রাজনীতির সংশ্লিষ্টতা নেই। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছিল ২০২০, ২০২১ সালে। এখন ২০২৪ সাল। মাঝে ২০২২, ২০২৩ সাল ছিল। তখন এই আইন কার্যকর করা হয়নি। নির্বাচনকে সামনে রেখে সব সক্রিয় করা হচ্ছে। অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে জেলে নেয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদের ঝাণ্ডা তুলে ধরেছেন তার স্ত্রী সুনীতা কেজরিওয়াল। বিরোধী জোট ইন্ডিয়া বুঝতে পেরেছে, কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার, কংগ্রেসের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ, নাগরিকত্ব সংশোধন আইন কার্যকর কোনো সাধারণ বিষয় নয়। ফলে তারাও সুনীতা কেজরিওয়ালের সঙ্গে দিল্লির ঐতিহাসিক রামলীলা ময়দানের মঞ্চে ক্ষোভ ঝেরেছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি।
এবার দিল্লিতে আম আদমি পার্টির মন্ত্রী অতিশী সাংবাদিকদের বলেছেন, খুব কাছের একজনের মাধ্যমে আমার দিকে অগ্রসর হচ্ছে বিজেপি। তারা আমাকে বিজেপিতে যোগ দেয়ার টোপ দিয়েছে। বলেছে, এতে আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার রক্ষা হবে। তারা আমাকে হুমকি দিয়েছে। বলেছে, যদি আমি বিজেপিতে যোগ না দিই, তাহলে ইডি আমাকে এক মাসের মধ্যে গ্রেপ্তার করবে। অতিশী বলেন, যে ব্যক্তি বিজেপি’র হয়ে এই প্রস্তাব আমার কাছে এনেছেন, তিনি বলেছেন- আম আদমি পার্টির সবাইকে শেষ করে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। প্রথমে তারা আম আদমি পার্টির সবাইকে জেলে নেবে। এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সত্যেন্দ্র জৈন, মানিশ সিসোদিয়া, সঞ্জয় সিং এবং এখন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। আগামী দুই মাসের মধ্যে তারা আম আদমি পার্টির আরও কমপক্ষে চার নেতাকে গ্রেপ্তার করবে। তারা আমাকে গ্রেপ্তার করবে। আরও গ্রেপ্তার করবে সৌরভ ভারাদওয়াজ, দুর্গেশ পাঠক এবং রাঘব চাডা’কে।
মিস অতিশী বলেন, বিজেপি ভেবেছিল অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করার পর দল ভেঙে যাবে। কিন্তু রোববার রামলীলা ময়দানে র্যালির পর বিজেপি ভেবেছে ওই চার নেতাকে গ্রেপ্তারই যথেষ্ট নয়। দিল্লির এই মন্ত্রী আরও দাবি করেন, তিনি তথ্য পেয়েছেন যে, সামনের দিনগুলোতে তার ও তার আত্মীয়দের বাড়িতে হানা দিতে পারে ইডি। তিনি বলেন, আমরা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সৈনিক। বিজেপির হুমকিতে মাথানত করবো না। আদালতের কাছে ইডির দেয়া রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে মিস অতিশী বলেন, ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে- কেজরিওয়াল নাকি বলেছেন আম আদমি পার্টির যোগাযোগ বিষয়ক সাবেক বস বিজয় নায়ার রিপোর্ট করেছেন মিস অতিশী এবং ভারাদওয়াজের কাছে। এসব তথ্য এরই মধ্যে ইডি এবং সিবিআইয়ের চার্জশিটে যুক্ত হয়েছে। ইডি আমাদের নাম ব্যবহার করে আম আদমি পার্টির অন্য নেতাদের গ্রেপ্তার করতে পারে।
ওদিকে আম আদমি পার্টির নেতাদের এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি। দলের নেতা আর পি সিং বলেন, আমিও বলতে পারি সৌরভ ভারাদওয়াজ আমাকে ফোন করেছিলেন। অনুরোধ করেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কবল থেকে তাদের রক্ষা করতে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল তাদেরকে জেলে রেখে সুনীতা কেজরিওয়ালকে মুখ্যমন্ত্রী বানাতে চান। এটা তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। বিভিন্ন রূপে তা বার বার বাইরে প্রকাশ পেয়েছে। প্রকৃত সত্য হলো, যাদের নাম জড়িত হিসেবে পাওয়া যাবে তাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এটা পরিষ্কার যে, মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে আম আদমি পার্টির মধ্যে লড়াই শুরু হয়ে গেছে। এর একদিকে আছেন সৌরভ ভারাদওয়াজ এবং অতিশী। অন্যদিকে আছেন সুনীতা কেজরিওয়াল, অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও অন্যরা।