ঢাকা, ১৭ মে ২০২৪, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

শিক্ষার্থীপ্রতি প্রাথমিকে ২৫ ও মাধ্যমিকে ৫১ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার
৩১ মার্চ ২০২৪, রবিবার

দেশে শিক্ষার্থীপ্রতি ব্যয় বাড়ছে। গবেষণা বলছে, ২০২২ সালের তুলনায় পরের বছর প্রাথমিকে ২৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে এই ব্যয় বেড়েছে ৫১ শতাংশ। নতুন কারিকুলাম আসার পর এই ব্যয় বেড়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। কোচিং-প্রাইভেট এবং নোট গাইডের কারণে এই ব্যয় বেড়েছে বলে গণসাক্ষরতা অভিযানের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে বিদ্যালয় শিক্ষা: মহামারি উত্তর টেকসই পুনরুত্থান’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল সিরডাপ মিলনায়তনে ‘এডুকেশন ওয়াচ-২০২৩’ নামে এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন গণসাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক ও গবেষক দলের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান। গবেষণায় সারা দেশের ৮ বিভাগের ১৬টি জেলার মধ্যে থেকে ২৬টি উপজেলা ও ৫টি সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা মিলিয়ে মোট ৭ হাজার ২২৫ জনের কাছ থেকে এই তথ্য নেয়া হয়। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর জন্য বার্ষিক পারিবারিক গড় ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ৮৮২ টাকা। মফস্বল এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষার্থীপিছু বার্ষিক ব্যয় ছিল ১০ হাজার ৬৩৭ টাকা।

বিজ্ঞাপন
শহরাঞ্চলে ১৮ হাজার ১৩২ টাকা। কিন্তু পরের বছর ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসেই প্রাথমিকে এই খরচ ২৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৬৪৭ টাকা।

মাধ্যমিক স্তরে ২০২২ সালে শিক্ষার্থীর জন্য পরিবারের ব্যয় ছিল ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। মফস্বল এলাকায় এ খরচ ২২ হাজার ৯০৯ টাকা এবং শহরাঞ্চলে ৩৫ হাজার ৬৬২ টাকা। কিন্তু ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে এই খরচ ৫১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৭১২ টাকা। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় ক্ষেত্রেই প্রধানত ব্যয় হয়েছে প্রাইভেট টিউটরের বেতন ও নোট বা গাইড বই বাবদ।

গবেষণায় বলা হয়, প্রাথমিক পর্যায়ে ৪৩.৫ শতাংশ ও মাধ্যমিকে ৪৭.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী করোনা মহামারির পর পাঠ বোঝার ক্ষেত্রে অসুবিধায় ছিল। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে তিন-চতুর্থাংশের বেশি শিক্ষার্থী প্রাইভেট টিউটরের সহায়তা নিয়েছে বা কোচিং সেন্টারে গিয়েছে। গাইড বইয়ের ওপর শিক্ষার্থীরা প্রাথমিকে ৯২ ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ৯৩ শতাংশ নির্ভরশীল ছিল। আবার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষকের ‘ব্লেন্ডেড লার্নিং’ পদ্ধতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নেই।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো এমন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০২৩ সালে দ্বিতীয় শ্রেণির ৪.৫ শতাংশ এবং ষষ্ঠ শ্রেণির ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। আবার ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাথমিকের ৫৭ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে ৭৯ শতাংশ শিক্ষার্থী আর বিদ্যালয়ে ফিরতে আগ্রহী নয়। এদের মধ্যে প্রাথমিকের ৪১ শতাংশ এবং মাধ্যমিক স্তরের ৪৯ শতাংশ শিক্ষার্থী শিশুশ্রমে নিয়োজিত হয়েছে। ঝরে পড়া মেয়ে শিক্ষার্থীদের ৫০ শতাংশের বেশি বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে।
২০২০ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদ্রাসায় স্থানান্তরের একটি প্রবণতা দেখা গেছে। মাধ্যমিকের তুলনায় প্রাথমিকের ৬.৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর অভিভাবক তাদের সন্তানদের মাদ্রাসায় পড়াতে আগ্রহী। মাদ্রাসায় পাঠানোর বিষয়ে দুই-তৃতীয়াংশ অভিভাবক ধর্মীয় কারণকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

গবেষণা প্রতিবেদনে উপবৃত্তি ও পরিকল্পিত আর্থিক সহায়তা বাড়ানো, বিবাহিত মেয়েদের উপবৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক নিয়ম বাদ দেয়া, অভিভাবকদের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন, শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতির মাত্রার ভিত্তিতে অতিরিক্ত ক্লাসসহ উপযুক্ত সহায়তা করা, শিক্ষকদের আর্থিক প্রণোদনা দেয়া ইত্যাদির সুপারিশ করা হয়।

উপস্থিত ছিলেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, গবেষণা দলের প্রধান ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ, বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের আহ্বায়ক আহমদ মোশ্তাক রাজা চৌধুরী, গবেষক দলের সদস্য সৈয়দ শাহাদাত হোসাইন ও মো. আহসান হাবিব প্রমুখ।

 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status