শেষের পাতা
সুনামগঞ্জে বন্যায় ৪৫ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত
এম. এ রাজ্জাক, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে
২ জুলাই ২০২২, শনিবারসুনামগঞ্জে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় শুক্রবার সকাল থেকে বিভিন্ন উপজেলার নদ-নদীর বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। সুরমা নদীর সুনামগঞ্জ পয়েন্ট দিয়ে ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে মাত্র ২৪ মিলিমিটার। পানি কমতে শুরু হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ও ধীরে ধীরে লোকালয় ও রাস্তাঘাট থেকে পানি নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে গত দুইদিন ধরে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যাকবলিত এলাকায় নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল। পানি কমতে শুরু করায় এখন জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে, পানি ধীরে ধীরে নামায় মানুষের দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে। টানা দুই সপ্তাহ পানিবন্দি থাকায় বানভাসিদের মধ্যে খাদ্য সংকট, পানি, স্যানিটেশন, চিকিৎসাসহ মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। বন্যাকবলিতদের মধ্যে ডায়রিয়া, চর্ম রোগসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিসসহ বেসরকারি ত্রাণ তৎপরতা এবং স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত থাকলেও প্রত্যন্ত ও সীমান্ত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী কম দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বানভাসিরা।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বন্যার পানিতে সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলায় ৪২২টি গরু, ৩৭টি মহিষ, ৬৬৯টি ছাগল, ৫১৪টি ভেড়া, ৯৭ হাজার ৮৩১টি হাঁস, ২ লাখ ৮৮ হাজার ৫৫টি মুরগিসহ ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫২৮টি গৃহপালিত প্রাণী মারা গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। এসব প্রাণীর মৃত্যু হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন হাওর এলাকার খামারিরা।
হাওর এলাকার ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, সেই সঙ্গে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পানিতে ভেসে গেছে। এখন আমরা কীভাবে চলবো, ভেবে পাচ্ছি না। সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে ডুবে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫২৮টি গৃহপালিত প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে এবং এ জেলায় ইতিমধ্যে গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
এইদিকে জেলার বন্যাকবলিত হাজারো মানুষের ঘরে খাবার নেই, বাইরে কাজ নেই, উঁচু এলাকা থেকে পানি কমলেও নিচু এলাকা, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, মধ্যনগর, ধর্মপাশা এলাকা এখনো বন্যাকবলিত। বন্যায় এলজিইডির ২০০ কিলোমিটার সড়ক, ১২০টি ব্রিজ-কালভার্টের আপ্রোচ এবং ৪টি ব্রিজ-কালভার্টের সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের ৮টি সড়কের ১৮৪ কিলোমিটার ও ৩৫টি ব্রিজ-কালভার্টের ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিক হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় জেলার ১১ উপজেলা ও ৪ পৌরসভার ৪৫ হাজার ২৮৮টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৪ হাজার ৭৪৭টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং ৪০ হাজার ৫৪১টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে, সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানা যায়নি।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, জেলায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। সরকারিভাবে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া বেসরকারি ত্রাণ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে সমন্বয় করে বিভিন্ন উপজেলায় দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গতকাল সকাল থেকে সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে এবং পানি কমতে শুরু করেছে।