মত-মতান্তর
ঢাকা যেন বিপদমগ্ন, হাহাকারে আকীর্ণ এক ট্র্যাজেডির শহর!
ড. হাসিন মাহবুব চেরী
(৭ মাস আগে) ৩ মার্চ ২০২৪, রবিবার, ১০:৫৮ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৫ পূর্বাহ্ন
ঢাকার নগর বিন্যাসে সুপ্ত আগুন সুযোগ পেলেই লেলিহান শিখায় হানা দিচ্ছে বারবার। পুরান ঢাকার নিমতলী থেকে বেইলি রোড। কোথাও নিরাপদ নেই নগরবাসী। সেফটি বলতে কিছুই নেই নগর ব্যবস্থাপনায়।
ঢাকার বাতাসও বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত। পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করলে ভালো কিছু পাওয়ার আশা সামান্যই। ওয়াশার লাইন আর ড্রেনের পানি মিলেমিশে চলে আসছে ঢাকার বাসাবাড়িতে।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন শহর ঢাকা ৫০০ বছরেরও বেশি সময়কাল পেরিয়ে নিমজ্জিত হয়েছে ঘোরতর সামাজিক-নাগরিক বিপদের ঘূর্ণাবর্তে। ঢাকা যেন বিপদমগ্ন, হাহাকারে আকীর্ণ এক ট্র্যাজেডির শহর।
এই শহরে দিন, মাস, বছর আসে। ঋতুর পর ঋতুর আসে। শহর বন্য আবেগে ভাসে বহুবিধ প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় উৎসব, আয়োজন, উদযাপনে। এসবের সমান্তরালে ট্র্যাজেডি আসে, ট্র্যাজেডি যায়। মৃত্যু আর আহাজারিতে ভারী হয় ঢাকার বাতাস। লোকদেখানো একমিনিট নিরব হয়ে ঢাকা আবার পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে থাকে জীবনকে উপভোগ করার নামে মৃত্যুর আলিঙ্গনে।
কেউ যেন দেখার জন্য নেই! ভাবার ফুসরত নেই সংশ্লিষ্টদের। এসব দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি কেন হচ্ছে, কেউ উত্তর দেয় না। নগরের বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনা চাক্ষুষ দেখা গেলেও প্রতিকার করা হয় না।
ঢাকার নাগরিকদের সুরক্ষার কথা চিন্তা না করে শহরে গড়ে উঠছে বড় বড় অট্টালিকা। গ্রিন কোজি কটেজের মতো শহর জুড়েই ভবনে ভবনে গড়ে উঠেছে হোটেল-রেস্তোরাঁ। এসব ভবনে চুলার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে সিলিন্ডারের গ্যাস। ক্রেতাদের উঠানামার সিঁড়ি বা লিফট নেই পর্যাপ্ত। এ কারণে এসব ভবন হয়ে উঠেছে অনেকটা টাইম বোম। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির যথার্থ শিরোনাম দিয়েছে মানবজমিন- ‘টাইম বোমায় ভাসছে ঢাকা’।
কেন ভাসবে না? Health & Safety বলে যে একটা term আছে এটা আমি বাংলাদেশে থাকতে কোনোদিন শুনিনি। তাই প্রথম যখন UK আসলাম, তখন এদের Health & Safety নিয়ে বাড়াবাড়ি দেখে খুব অবাক হতাম। এখানে বাড়ি ঘরের ভেতরে কার্ডবোর্ড দিয়ে তৈরি হওয়ায় এবং শীতের দেশ বলে হিটিং সিস্টেম ব্যবহার করায় খুব সহজেই আগুন লেগে যায়। আর একারণেই প্রচুর মানুষের সমাগম হবে এরকম প্রতিটি স্থানে আগুন লাগা থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্যে Health & Safety Ensure করতে এরা কড়াকড়িভাবে কিছু বেসিক নিয়ম মেনে চলে।
উদাহরণ দিলে তা স্পষ্ট হবে। যেমন:
১. প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি নেয়ার পর পরই প্রত্যেক কর্মকর্তা এবং কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক Health & Safety ট্রেনিং দেয়া হয়। এবং সেই ট্রেনিং প্রতিবছর renew করতে হয়।
২. প্রতিটি ভবনে অগ্নিনিরোধক ফায়ার ডোর লাগানো হয় এবং তাতে বড় অক্ষরে লেখা থাকে ফায়ার Emergency Evacuation Routes । সেই special রাস্তা দিয়ে বের হয়ে সাথে লাগানো special সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে হয়। তারপর সবাই একত্রে ভবনের পাশে খোলা জায়গায়, যেটাকে fire assembly পয়েন্ট বলে, সেখানে জড়ো হয়। এছাড়া যেকোনো ভবনে কোনো নতুন ব্যক্তি প্রবেশ করলেই উক্ত ভবনের Health & Safety অফিসার এসে ওই ব্যক্তিকে প্রথমেই এই সব নিরাপত্তা সম্পর্কে সরজমিনে দেখিয়ে দেন।
৩. প্রতিটি ভবনের প্রতিটি রুমে ফায়ার অ্যালার্ম লাগানো থাকে, যা সাধারণ একটি সিগারেট এর ধোঁয়াতেও অ্যালার্ম দিতে সক্ষম। এবং এই সিস্টেম ঠিক মতো কাজ করে কিনা সেটা নিশ্চিত করতে প্রতি সপ্তাহে একটা দিন false অ্যালার্ম বাজিয়ে সেটা টেস্ট করে দেখা হয়। এছাড়া প্রতিটি ভবনে কয়েক মাস পর পর ফায়ার অ্যালার্ম বাজলে নিজেকে কিভাবে নিরাপদে বের করে নিতে হবে সেটার প্রাকটিস করা হয় যেটাকে বলা হয় Fire Drill.
৪. প্রতিটি ভবনে সেই প্রতিষ্ঠানেরই স্টাফদের মধ্যে থেকে specially trained লোকজন থাকে যাদের বলা হয় 'ফায়ার মার্শাল'। তাদের কাজ হলো ফায়ার এলার্ম বেজে ওঠা মাত্র লোকজনকে সঠিক পথে বের হতে গাইড করার পর ফায়ার extinguisher equipment ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা। তবে আগুন বেড়ে যেতে দেখলে আগে নিজেকে নিরাপদে বের করে নিয়ে আসা। এবং ফায়ার অ্যালার্ম বাজলে অটোমেটিক ফায়ার ব্রিগেডে কল চলে যায় এবং তারা বুঝে যায় যে কোথায় আগুন লেগেছে। অতঃপর ৩/৪ মিনিটের মধ্যেই কয়েকটি ফায়ার ট্রাক ঘটনাস্থলে চলে আসে।
৫. প্রতিটি প্রতিষ্ঠান নিজ দায়িত্বে Nationwide Fire Protection Companies এর সাথে কন্ট্রাক্ট করে, যেনো তারা উক্ত প্রতিষ্ঠানের ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেম কার্যকরভাবে প্রতিবছর মেইনটেইন করে।
এতো কিছুর কারণে ইউকে'তে ২০২২ সালে ১৮৫,৪৩৭ টি স্থানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটলেও হতাহত হয়েছে মাত্র ৩৩৪ জন। আর আমাদের দেশে একটি ঘটনায়ই হতাহত ৫০ এর উপরে হয়!
এখন প্রশ্ন হলো, আমাদের দেশে এই লেভেলে ফায়ার safety কি আদৌ কোনোদিন সম্ভব হবে? অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং তার ফলশ্রুতিতে অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, দুর্নীতি, দূরদর্শিতার অভাবের জন্য আজীবন আমাদের প্রিয়জনদের এরকম মৃত্যুপুরীতে বসবাস করে যেতে হবে?
আমি শুধু ভাবি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ইত্যাদি শহরে একবার বড় আকারে ভূমিকম্প হলে সেটার কি ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে! নেতা নেত্রীদের কাছে এখন জনগণের হাত পেতে বলা প্রয়োজন যে, আপনারা একটা প্রকল্প হাতে নেন, দরকার হলে সেটা থেকে অর্ধেক টাকাই দুর্নীতি করে পকেটে ঢোকান, তারপরেও সাধারণ মানুষের Health & Safety নিয়ে কিছুটা হলেও কাজ করেন, যেন এরকম করুণ মৃত্যু আমাদের বারে বারে ছোবল না দেয়।
লেখক: ইউকে প্রবাসী তরুণ বিজ্ঞানী, মোটিভেশনাল এক্সপার্ট ও সমাজমনস্ক গবেষক।
ঢাকা শহরের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এমন বিশাল দূর্ঘটনা ঘটে গেল কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছাড়া আর কোন মন্ত্রীর কোন তৎপরতা দেখলাম না। মন্ত্রীরা যদি সত্যিই দেশ ও জনগনের কথা ভাবতেন তাহলে তো তাদের ঘুম হারাম হয়ে যাবার কথা। তারা মিন্টো রোডের বিশাল অট্টালিকায় শুয়ে বসে দিনাতিপাত করতে পারতেন না।
আওয়ামী ঐ মন্ত্রী এমপিরা কোথায়? বা;লাদেশ না কয়েক বছর আগেই ইউরোপ আমেরিকা মত হয়ে গেছে !!!!!