শেষের পাতা
বিদেশে সম্পদ থাকার বিষয় স্বীকার করলেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী
স্টাফ রিপোর্টার
৩ মার্চ ২০২৪, রবিবার
লন্ডনে নিজের ব্যবসা ও সম্পদ থাকার কথা স্বীকার করেছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ। বিদেশে সম্পদ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে কোনো টাকা না নেয়ার দাবি এবং নির্বাচনী হলফনামায় তার বিদেশে থাকা সম্পদের তথ্য গোপন করার কারণ জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া ব্লুমবার্গে প্রকাশিত নিউজ এবং টিআইবি’র দেয়া প্রতিবেদনের সমালোচনা করেছেন সাইফুজ্জামান। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন তিনি।
নির্বাচনী হলফনামায় বিদেশে সম্পদের তথ্য গোপন করার বিষয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, হলফনামা আমি বারবার চেক করেছি এবং এক্সপার্ট দিয়েও চেক করিয়েছি। সেখানে কোথাও কলাম নেই যে- বিদেশি সম্পত্তি উল্লেখ করতে হবে। বিগত নির্বাচনেও আমি এ ধরনের কোনো তথ্য দেইনি। আমি ভেবেছি- ওইটা কলামে নেই, বাড়তি করে কেন সেটা বলতে যাবো। দীর্ঘদিন ধরে আমি যেভাবে কাজ করে আসছি, ওই হিসাবে আমি সেটি করেছি। এখানে আমার কোনো ধরনের খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। দেশ এবং বিদেশের সম্পদের আয়কর নথি তার কাছে আছে উল্লেখ করে এই সংসদ সদস্য বলেন, আমার দেশ এবং বিদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ওভাবে পুরোটা মিক্সড করিনি। আমি যে কাজগুলো করেছি তা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছি।
মন্ত্রী থাকার সময় লন্ডনে তার ব্যবসার ব্যাপক সম্প্রসারণের বিষয়ে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আমি ব্যবসা করেছি দীর্ঘদিন ধরে, আমার তো একটা নেটওয়ার্ক আছে। আমি দেখছি একটা সুযোগ আসছে। ধাপে ধাপে করে তখন রিয়েল এস্টেট ব্যবসা ড্রপ করছে, ডেভেলপাররা প্যানিক হয়ে গেছে। তারা বলছে- ভালো ডিসকাউন্টে আমরা প্রোপার্টি দেবো, তুমি কি নিবা? তখন ইন্টারেস্ট রেট ড্রপ করলো। ল্যান্ডাররা ল্যান্ডিংয়ে এগ্রেসিভ হয়ে গেল। আমি সেই সুযোগটি নিলাম। এভাবে আমি ব্যবসা পরিচালনা করেছি।
পারিবারিক ব্যবসার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার বাবা ১৯৬৭ সাল থেকে লন্ডনে ট্রেডিং ব্যবসা করেন। এই সূত্র থেকে আমাদের ব্যবসা শুরু। পরবর্তী সময়ে ছোটবেলা থেকেই আমাদের লন্ডন-আমেরিকাতে বাড়িঘর ছিল, ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল। এ ছাড়া আমাদের রেস্টুরেন্ট, সুপার মার্কেট, রিয়েল এস্টেট’র ব্যবসা ছিল। যেটা অনেকেই জানতো। আমরা বাংলাদেশ থেকে কোনো টাকা নেইনি। আমি ব্যবসায়িক ক্যারিয়ার শুরু করেছি আশির দশক থেকে। প্রায় ৩৫ বছর ধরে আমি ব্যবসা করছি, ১২ বছর ধরে রাজনীতি করছি। ব্যবসায়িক ক্যারিয়ার আমার অনেক বেশি। বাংলাদেশ থেকে টাকা না নিয়েই ব্যবসা করা যায়। ওখানে আমার বিশাল অঙ্কের লোন আছে। আমার বাবার বিদেশের ব্যবসা ৫০ বছর ধরে।
ব্লুমবার্গের রিপোর্টের সমালোচনা করে সাবেক ভূমিমন্ত্রী বলেন, হতে পারে ব্লুমবার্গ আন্তর্জাতিক মিডিয়া, তার সঙ্গে আমি পুরোপুরি একমত না। হেডলাইন আর মূল কন্টেন্ট এর সঙ্গে আপনি দেখেন- হেডলাইনটা করেছে হ্যাভি। ভেতরে সে আমার পুরো ব্যবসায়িক ইতিহাস নিয়ে গেছে। আমার বাবা বাংলাদেশের একজন প্রথম প্রাইভেট সেক্টরের ব্যাংকের উদ্যোক্তা। তিনি এভাবে ট্রেইন করে দিয়ে গেছেন যে দেশে ব্যবসা করতে হবে, বাইরেও ব্যবসা করতে হবে। আমাকে তো ব্যবসা করে চলতে হবে। তিনি বলেন, শুধু লন্ডন-আমেরিকা না, যে দেশেই আমরা ব্যবসার সুযোগ দেখি সেখানেই ব্যবসা করি। এটা লুকোচুরির কিছু নেই।
টিআইবি’র প্রতিবেদন উল্লেখ করে সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, টিআইবি’র বিষয়টা নিয়ে আমি খুবই বিস্মিত। এমন একটা সময়ে নিউজটা করলো সেটা নির্বাচনের ৭ দিন আগে। এটা কি আমাকে দিয়ে সরকারকে বিব্রত করার জন্য? যদি আমি বাংলাদেশ থেকে টাকা নিতাম আর বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি না নিতাম তাহলে সেটা অপরাধ হতো। যতটুকু পেরেছি আমি নিজেকে স্বচ্ছ রাখার চেষ্টা করেছি।
বিদেশি সম্পদের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমার এডভাইজার বলেছে- আমি কেন নিজের নামে এতকিছু করছি। এটাও ঠিক- তারা ব্যাংকের লোন নিজের নামে না করলে দিবে না, আবার নিজের নামে সম্পদ করলেও প্রশ্ন আসবে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমি কি চোর? নিজের নামে করলে সমস্যা কি? আমার যথেষ্ট ব্যাকআপ আছে। আমি তো চুরি করিনি। আমার জন্য আমি দল বা সরকারকে বিব্রত করতে চাই না।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমি খুশি হবো যদি একটি হাই পাওয়ার তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় যে, মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীত্বকালীন সময়ে আমি কোনো দুর্নীতি করেছি কিনা। তদন্ত কমিটিতে একজন করে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমার ১০ বছরে মন্ত্রীত্বকালীন সময়ে কি করেছি না করেছি- এটা সারফেস করা হোক। তদন্ত কমিটি যদি আমার এক টাকার দুর্নীতি পায় আমি কথা দিচ্ছি- এমপি থেকে রিজাইন দেবো।
পাঠকের মতামত
জমি খারিজের সময় এবং জমি রেকর্ডের সময় টাকা নেই এইগুলো কে কে খায়