ঢাকা, ১১ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৫ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

প্রবাস

জার্মানিতে বাংলাদেশ সমিতির পিঠা উৎসব ও বর্ণমালার প্রথম সমাবর্তন

(১ বছর আগে) ১ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ৮:৪৩ অপরাহ্ন

mzamin

‘একুশ মানে বাংলাদেশে প্রভাতফেরির গান, বিশ্বজুড়ে রক্তে কেনা বাংলা মায়ের মান।’ মহান একুশের অমর স্মৃতি বিজড়িত ভাষার মাস ফালগুন এলেই শুরু হয় বাংলা একাডেমির বইমেলা। বাংলাদেশজুড়ে শিমুল, পলাশ, কৃষ্ণচূড়ার বর্ণাঢ্য রঙে-রূপে সাজতে শুরু করে। ঝিঁঝি ডাকা বাসন্তী বিকালে কোকিলের কুহু ডাক শোনা যায়। তবে দূর পরবাসের দেশ জার্মানিতে এসবের কোনো কিছুই নেই! এখানে এখনো হাড় হিম করা আবহাওয়া। শীতের চাদরে মোড়া প্রকৃতি।

দেশ থেকে প্রায় আট হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করেও জার্মান প্রবাসীরা শীতের পিঠার আবহ পেতে, একুশে ফেব্রুয়ারিকে স্মরণ করতে এতটুকুন কার্পণ্য করেনি। জার্মানির বন্দরনগরী হামবুর্গে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শীতকালীন পিঠা উৎসব। আয়োজনের মূল আকর্ষণ ছিল বর্ণমালা-প্রবাসে বাংলা শেখার স্কুলের প্রথম সমাবর্তন।

জার্মানিতে ১৯৭২ সালে নিবন্ধিত সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশ সমিতি এ. ফাও-এর উদ্যোগে হামবুর্গ শহরের হরনার ফ্রাইহাইট মিলনায়তনে গত ২৫শে ফেব্রুয়ারি জমজমাট এই উৎসবের আয়োজন করা হয়।
মিলনায়তনের চারিদিকে সুসজ্জিত ছিল হরেক স্বাদের পিঠা-পিঠা-পায়েসের পসরা! যুগপৎ মঞ্চে তখন শিল্পীকণ্ঠে গাইছেন একুশের চিরায়ত গান, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি... সমবেত দর্শক-স্রোতারাও সেই সুরে কণ্ঠ মিলিয়ে গাইছেন, ‘আমি কি ভুলিতে পারি...’

পিঠা উৎসবে বাহারি স্টলগুলোর মধ্যে ছিল বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত জার্মান সন্তানদের প্রজন্ম চত্বর, বর্ণমালা স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বর্ণমালার টং, হাসিনা মাহবুবের মেজবান, রহিমা আক্তারের শখের রান্না, তানিয়া আহমেদের সাথী'জ ডিলাইটস, লিপি হোসেনের রান্নাঘরের চা বিলাস এবং বাংলাদেশ সমিতির লাল-লাল-সবুজের আড্ডা।

চিতই পিঠা, নকশি পিঠা, ভাপা পিঠা, পাটি সাপটা, মালপোয়া, চটপটি, ফুসকা, পিয়াজু, পাকোড়া, ছোলা-বুট, ঝাল মুড়ি থেকে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানি মাংস, পোলাও-বিরিয়ানি। ঘরে বানানো মজাদার মিষ্টি, বোরহানীসহ কী ছিল না মেলায়! এ ছাড়া শাড়ি-গহনা নিয়ে ফারজানা শওকত শাহ রীনের শাড়ি কথন বাই নিনিয়া স্টলেও মেলায় আগত অতিথিদের কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে।

দিন-রাতের এই আয়োজনটি সাজানো হয়েছিল তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অধিবেশনে। প্রথম অধিবেশনে একুশের গান, ছড়া, কবিতা, চিঠি-পত্র আর কথা মালা। সুমাইয়া ও শ্রাবণের যৌথ উপস্থাপনায় এতে স্থানীয় শিল্পীরা অংশ নেন।
দ্বিতীয় অধিবেশনে বাংলাদেশ সমিতি এ. ফাও-এর সভাপতি মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সহসভাপতি জাহিদ আল আমীন। সাধারণ সম্পাদক ইসমে আজম সমিতির নব নির্বাচিত কার্যকরী পরিষদের অভিষেক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।

তৃতীয় তথা সমাপনী অবিবেশনে বর্ণমালা-প্রবাসে বাংলা শেখার স্কুলে দুই বছর বাংলা শেখার কোর্স সম্পন্ন করা প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। নীল ক্যাপ আর নীল গাউনে সুসজ্জিত ৫ জন জার্মান অভিবাসী সন্তান সনদ ও সন্মাননা পান।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জার্মানির ইনস্টিটিউট অফ মেমব্রেন রিসার্সের ম্যাটেরিয়ালস কেমিস্ট্রি অ্যান্ড ম্যাস ট্রান্সপোর্ট বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মুশফিকুর রহমান। তিনি বলেন, বিশ্বজুড়েই বাংলাভাষীদের উপস্থিতি এবং তাদের মাতৃভাষাপ্রেম বাংলা ভাষাকে ছড়িয়ে দিয়েছে পৃথিবীর পথে পথে। একুশ শতকে বাংলার এই অহংকারদীপ্ত পদচারণা বায়ান্নর ভাষা শহীদদের কাছে কৃতজ্ঞতায় আমাদের আরও একবার শ্রদ্ধাবনত করে দেয়।

বর্ণমালার পরিচালক রবিউল এইচ চৌধুরী ও সৈয়দ মারজান উল হাসানের উপস্থাপনায় সমাবর্তন বক্তারা জার্মানির বিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যসূচিতে বাংলা ভাষার অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান। পাশাপাশি জার্মানিতে একটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তুলে ধরেন। প্রবাসী ও অভিবাসী প্রজন্মকে বাংলা শেখানোর তাগিদে ২০২২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সমিতি এ. ফাও-এর উদ্যোগে বর্ণমালা স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

মেলায় হামবুর্গ, ব্রেমেন, কীল, গোটিংগেনসহ জার্মানির বিভিন্ন শহরে বসবাসরত আনুমানিক তিন শতাধিক বাংলাদেশি সপরিবার উপস্থিত ছিলেন। ভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎসবের আহ্বানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক স্থানীয় জার্মানরাও মেলায় এসেছিলেন।

বাংলা ভাষায় গান, কবিতা, বাংলা ভাষায় গল্প-আড্ডার সঙ্গে মজাদার বাঙালি রসনা বিলাসে পরিপূর্ণ ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। জার্মানিতে এমন ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন সবার কাছে  অনেক দিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

লেখক: জাহিদ আল আমীন, হামবুর্গ, জার্মানি।
 

প্রবাস থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রবাস সর্বাধিক পঠিত

১০

ঐকমত্য কমিশনে মতামত জমা শেষে সালাহ উদ্দিন আহমেদ/ সংবিধানে ৭১’র সঙ্গে ২৪’কে একই কাতারে আনা সমুচিত নয়

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status