শেষের পাতা
পেনশনের জন্য ১৩ বছর ঘুরছেন পিআইডি’র এনামুল
স্টাফ রিপোর্টার
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, রবিবার
২০১১ সালে প্রেস ইনফরমেশন ডিপার্টমেন্ট (পিআইডি) থেকে অবসর নিয়েছেন ফটোগ্রাফার এনামুল হক বাবলু। এরপর দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে নিজের পেনশনের জন্য ঘুরছেন তিনি। সাবেক এক সহকর্মীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার অজুহাত দেখিয়ে পিআইডি কর্তৃপক্ষ তার পেনশন আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ সত্তরোর্ধ্ব সাবেক এই আলোকচিত্রীা। পেনশন না পেয়ে বৃদ্ধ বয়সে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।
এনামুল হক বাবলু জানান, ২০১১ সালের ৩০শে জানুয়ারি তার অবসর গ্রহণের কিছুদিন আগে পিআইডি’র তৎকালীন প্রধান ফটোগ্রাফার আবদুল করিমের কক্ষ থেকে একটি ক্যামেরা চুরির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় পিআইডি কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে একটি চুরির মামলা করে। মামলাটি ৩ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়ে যায়। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় রায়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আবদুল কাদের চুরির অভিযোগ থেকে আমাকে অব্যাহতি দেন। এরপর পিআইডি আপিল করে। ২০২১ সালের ৩১শে অক্টোবর উচ্চ আদালতও আমাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে নিম্নআদালতের রায় বহাল রাখেন। ওই রায়ের পর ২০২২ সালের ৩রা এপ্রিল তথ্য মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মো. মোতালেব হোসাইন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এনামুলকে মামলার অভিযোগ থেকে খালাস দেয়ার বিষয়টি পিআইডিকে অবহিত করা হয়। কিন্তু তারপরও এনামুলের পেনশন আটকে রেখেছে পিআইডি কর্তৃপক্ষ।
সর্বশেষ গত বছরের ১১ই নভেম্বর এনামুলকে দেয়া পিআইডি’র সিনিয়র তথ্য অফিসার (প্রশাসন) পরীক্ষিৎ চৌধুরী স্বাক্ষরিত পেনশন মঞ্জুর সংক্রান্ত একটি চিঠি দেয়া হয়। এতে বলা হয়, এনামুলের পেনশনের বিষয়টি নিম্নল্লিখিত মামলাগুলোর মীমাংসা না হওয়ায় বিধি মোতাবেক নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। মামলা দুটি হলো-জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসারের কার্যালয়ের সরকারি আবাসন পরিদপ্তর কর্তৃক ৭ লাখ ৩ হাজার ৭শ’ টাকার মামলা ও জয়েন্ট ডিস্ট্রিক জজ, ১ম কোর্ট ঢাকায় দায়েরকৃত ৫০ লাখ টাকার মানিস্যুট মামলা।
এ বিষয়ে এনামুল হক বাবলু মানবজমিনকে বলেন, চুরির অপবাদ দেয়ার অভিযোগে পিআইডি’র সাবেক প্রধান ফটোগ্রাফার আবদুল করিমের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে আমি একটি মানহানির মামলা করি। এটি আবদুল করিমের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব। ব্যক্তিগত বিষয়ের দায়ভার তো প্রতিষ্ঠান ঘাড়ে নিতে পারে না।
এ ছাড়া সরকারি আবাসন পরিদপ্তর আমার পেনশন থেকে বাড়ি ভাড়া ৫ লাখ ৮৮ হাজার ২৩৫ টাকা কেটে রেখে তা জানানোর জন্য পিআইডিকে নির্দেশনা দিয়ে চিঠিও দিয়েছে। কিন্তু ২০১৫ সালে সেই নির্দেশনার চিঠি দিলেও আজও তা বাস্তবায়ন করেনি পিআইডি।
এ বিষয়ে পিআইডি’র প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. শাহেনুর মিয়া মানবজমিনকে বলেন, আমিও মনে করি ১৩ বছর ধরে কারও পেনশন আটকে রাখা অস্বাভাবিক। কিন্তু পিআইডি’র তো আরও ৫০০ কর্মকর্তা আছে। অন্য কারও বেলায় তো এ রকমটা হয়নি। কিন্তু শুধু তার বেলায় কেন এমন হচ্ছে- নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো কারণ আছে। তিনি আরও বলেন, আমরাও চাই তার দেনা-পাওনা তিনি নিয়ে যাক। তার পেনশন দ্রুত দেয়ার জন্য তাকে আবাসনের দেনা-পাওনা ও মানহানির মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার পরামর্শ দিয়েছি। এ ছাড়া আরও কিছু পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু তিনি আমাদের পরামর্শ না শুনে পত্রিকায় রিপোর্ট করাতে গেছেন শোরগোল তৈরির জন্য।