ঢাকা, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

খেলা

যে অভিমানে ছেলেকে ক্রিকেটার বানাতে চান না সৈকত

ইশতিয়াক পারভেজ
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বৃহস্পতিবারmzamin

কতো অপেক্ষাই না করতে হয়েছে সরফরাজ খানকে! বাবা নওশাদ খানের কোচিংয়ে প্রতিভা শাণিত করা এ ক্রিকেটার অবশেষে ভারতের জার্সি পরতে পেরেছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রাজকোট টেস্টে অভিষেক হয়েছে তার। তবে বাবা হিসেবে ছেলেকে জাতীয় দলের ক্রিকেটার হিসেবে দেখে তার আনন্দ অশ্রুর ছবি এখন ভাসছে সংবাদ মাধ্যম থেকে শুরু করে নেট দুনিয়াতে। ক্রিকেট বিশ্বজুড়ে এমন অনেক বাবা আছেন যারা ছেলেকে ক্রিকেটার বানাতে পেরে দারুণ খুশি। অথচ বাংলাদেশের ক্রিকেটার সৈকত আলী নিজের সন্তানকে ক্রিকেটার হিসেবে দেখতে চান না। কেন এমন সিদ্ধান্ত! তবে কি নিজের  ১৩ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের অপ্রাপ্তি, শূন্যতা, অবহেলা আর স্ট্র্যাগলময় জীবন এই সবকিছু থেকে ছেলেকে তিনি দূরে রাখতে চাইছেন! মুখে হাসি থাকলে চাপা অভিমানটা সন্তানের ক্যারিয়ার নিয়ে এমন ভাবনাই নেপথ্যের কারণ তা অকপটেই জানিয়ে দিলেন সৈকত। তার মতো জীবন ছেলেরও হোক- সেটা তিনি চান না। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন ২০১০ এ। এরপর থেকে এক যুগ পেরিয়ে গেলেও কখনো আর জাতীয় দলে খেলার সুযোগ হয়নি। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের ছাপ রাখলেও কখনো গুরুত্ব পাননি নির্বাচকদের কাছে। চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে খেলে যাচ্ছেন এখনো ক্রিকেট। যদিও ৩০ বছর বয়সে পা দিয়েও ছাড়েননি জাতীয় দলের খেলার আশা। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে খেলছেন বিপিএল’র দশম আসরে। এখানেই তিনি দেখাতে চান এখনো ফুরিয়ে যাননি। নিজের ক্যারিয়ার জুড়ে থাকা অন্ধকার সরিয়ে আসতে চান আলোতে। দৈনিক মানবজমিন’র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারেই জানিয়েছেন নিজের জীবন, ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনা ও লক্ষ্যের কথা। সেই কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-

এক যুগের বেশি সময় ধরেই ক্রিকেট খেলছেন, কিন্তু সৈকত আলী নামটা এখনো দেখা মিলেনি আলোর সন্ধা। দায়টা কাকে দিবেন?
সৈকত: ২০১০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দিয়ে আসলে ক্রিকেটে বড় স্বপ্ন দেখা শুরু। এরপর ১৩ বছর কেটে গেছে, এখনো জাতীয় দলে কোনোদিন ডাক পাইনি। বলতে পারেন জীবনের সবচেয়ে বড় আফসোস। তবে এই জন্য কাউকে আমি দায়ী করতে চাই না নিজেকে ছাড়া। হয়তো আমার পারফম্যান্সই কারও নজর কাড়তে পারেনি। কিন্তু আমিই হয়তো এমন পারফরম্যান্স করতে পারিনি যেটা নির্বাচকদের বিবেচনাতে আসে। তবে সুযোগ না পাওয়াকে ক্রিকেট ক্যারিয়ারের বড় অক্ষেপ বলছি কারণ আমার সাথে যারা খেলেছেন বা যারা আমার সতীর্থ ছিলেন, তারা সবাই কোনো না কোনো ফরম্যাটে জাতীয় দলের হয়ে খেলেছে। তবে আমার সেই সুযোগ হয়নি। তাদের মধ্যে আমিই একমাত্র যার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়নি। 

কখনো কি মনে হয়েছে বিসিবি বা জাতীয় দলের নির্বাচকদের অবহেলার শিকার আপনি?
সৈকত: আমি নির্বাচকদের নিয়ে কিছু বলতে চাই না। কারণ অভ্যন্তরীণ বিষয় সম্পর্কে আমি জানিও না। তবে আমি আমার কথা বলতে পারি। কউ কখনো বলতে পারবে না যে, সৈকত আলি কোনো বাজে কাজ করেছে এমন কোনো রিপোর্টও নেই, আল্হামদুলিল্লাহ্। সব মিলিয়ে লাইফে ভালো-খারাপ দুই সময়ই পার করেছি।

সতীর্থদের কাছ থেকে পিছিয়ে পড়ার কারণ কি বলে মনে করেন?
সৈকত: আমার মনে হয় ইঞ্জুরির কারণে আমি অনেকটা পিছিয়ে গেছি। আমার প্রাইম টাইমে আমি প্রায় দেড় বা দুই বছর ইঞ্জুরিতে ছিলাম। যার কারণে খেলা থেকে দূরে থাকতেও হয়েছে। এই সময়টা আমাকে একটু পিছিয়ে দিয়েছে। আমি আসলে অন্য কারো দোষ দেবো না। আর সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে (২০১৬)  থাকার সময়। তখন ইঞ্জুরির কারণে পুরো টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়লাম। তখন নিজেকে প্রস্তুত করেছিলাম ভালো পারফর্ম্যান্স করে জাতীয় দলের জায়গা করে নেওয়ার জন্য ঐ ইঞ্জুরিটা আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। 

তাহলে আপনার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের প্রাপ্তি কি?
সৈকত: ক্রিকেটটাতো আনন্দের চেয়ে দুঃখ বেশি দেয়। এই ছোট্ট ক্যারিয়ারে সাফল্য বলতে। 
ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন দলে ছিলাম। ২০১২তে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে ম্যান অব দ্য ফাইনাল হই। ২০১৫তে প্রাইম ব্যাংক চ্যাম্পিয়ন হয়, সেই ফাইনালে প্রায় ৬০ রানের কাছাকাছি করে অপরাজিত থাকি।  শেখ জামালের হয়েও একবার ট্রফি জিতি। আর সুন্দর মুহূর্ত বলতে বিপিএল’র ফাইনালে যখন গেইলের সঙ্গে ব্যাট করে ফিফটি করলাম। এটা ছিল একটা স্বপ্নের মতো ক্রিস গেইলের মতো একজন ব্যাটসম্যানের সঙ্গে ব্যাটিং করে ফিফটি করি। সেদিন আবার আমার পরিবারের সবাই উপস্থিত ছিল।

আপনার তো ছেলে সন্তান তাকে ক্রিকেটার বানাতে চান কিনা?
সৈকত: না, আমার ছেলেকে ক্রিকেটে আনার ইচ্ছা নাই। তবে ছেলে যখন বড় হবে তখন আমি পুরোটা ওর উপর ছেড়ে দেবো ও কি করতে চায়, ও কি হতে চায়। ও ক্রিকেটে আসতে চাইলেও আমি মানা করবো না। তবে হ্যাঁ, আমার ইচ্ছা নেই ও ক্রিকেট খেলুক। আমি চাই না আমি ক্রিকেট খেলতে গিয়ে যে কষ্টের জীবন কাটিয়েছি তার কোনো প্রভাব আমার ছেলের উপরে পড়ে। 

জাতীয় দলে ফিরবেন এই বিশ্বাসটা এখনো রাখেন?
সৈকত: এখন আমার বয়স প্রায় ৩০ পেরিয়েছে। আমাদের দেশের কথা আলাদা কিন্তু অস্ট্রেলিয়াাতে ক্রিকেটারদের এই বয়সেই অভিষেক হয়। হ্যাঁ, আমার এখনো বিশ্বাস আছে জাতীয় দলে ফেরার। এরজন্যই আমি এত হার্ডওয়ার্ক এখনো চালিয়ে যাচ্ছি। যদি স্বপ্ন না হতো তাহলে এখনো প্র্যাক্টিস চালিয়ে যাওয়া বা ক্রিকেটের সঙ্গে থাকা হতো না। আমি এখনও চেষ্টা করি, ভালো পারফর্ম্যান্স করে নির্বাচকদের নজরে আসার জন্য।

খেলা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

খেলা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status