ঢাকা, ২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

খেলা

চ্যালেঞ্জের গল্প শোনালেন বডিবিল্ডার মাকসুদা মৌ

৩০ জুন ২০২২, বৃহস্পতিবার
mzamin

বাংলাদেশের মেয়েরা বডিবিল্ডিং করছে-এটা অনেকেই ঠিক মেনে নিতে পারেন না। এসব নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণাও হয় প্রচুর। মাকসুদা মৌ ঠিক এই ব্যাপারটিরই শেষ দেখতে চান। তিনি স্বপ্ন দেখেন, অন্য আর সবকিছুর মতো পুরুষের পাশাপাশি বডিবিল্ডিংয়ের সব আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে এদেশের মেয়েরা। এরইমধ্যে মৌ তার স্বপ্নের পথে হাঁটা শুরু করেছেন। দেশের প্রথম নারী বডিবিল্ডার হিসেবে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জিতেছেন পদক। এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আগামী দিনেও বিশ্বের বুকে ওড়াতে চান নারী বডিবিল্ডিংয়ে বাংলাদেশের পতাকা। সেই সাফল্যের গল্প আর আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে মানবজমিনের স্পোর্টস রিপোর্টার সামন হোসেনের সঙ্গে কথা বলেছেন মাকসুদা মৌ। নিম্নে তার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো..  কীভাবে বডিবিল্ডিংয়ের মতো খেলাতে এলেন? আমি পতেঙ্গা নৌবাহিনী স্কুল ও কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর টেক্সটাইল ডিজাইনের ওপর পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করতে ২০১৭ সালে ভারতের পাঞ্জাবে যাই। সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে ফিট রাখার জন্য নিয়মিত জিম করতাম।

বিজ্ঞাপন
শরীরচর্চা করতে জিমে গিয়ে তা রীতিমতো নেশায় পরিণত হয়। এরপর শরীরচর্চা নিয়ে পড়াশোনা করতে কানাডায় যাই।  সেখানে বডি বিল্ডিংকে স্বপ্ন বানিয়ে দেশে চলে আাসি। বাইরের দেশগুলোতে বডিবিল্ডিং খুব জনপ্রিয় খেলা। আমি ভাবলাম দেশে বডিবিল্ডিং শুরু করি তাহলে অনেককিছু করা সম্ভব। শুরুতে কতটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন? আসলে আমার শুরুটা হয়েছে দেশের বাইরে। আমি ইন্ডিয়া ও কানাডাতে পড়াশোনা করেছি। এখানেই আমার বডিবিল্ডিয়ের হাতে খড়ি। যে কারণে শুরুতে আমি খুব একটা বাধার সম্মুখিন হইনি। তবে দেশে অনেকের কটুকথা আমাকে শুনতে হয়েছে। কারণ, আমরা এমন একটা দেশ বা সমাজে থাকি, যেখানে মেয়েরা সাধারণ খেলাধুলা কিংবা শরীরচর্চার সুযোগও পায় না। আমাদের দেশে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনাকে যত গুরুত্ব দেয় শরীরচর্চাকে দেয় না। সামাজিক সচেতনতা বেশি নেই। আমার কাছে অনেক ডাক্তার ওয়ার্ক আউট করে। শারীরিকভাবে তারা খুব আনফিট। আসলে আপনি যে পেশাতেই থাকুন না কেন আপনাকে যে ফিট থাকতে হবে, শরীরচর্চা করতে হবে- এই কালচারটাই আমাদের নেই। তাই শুরুর দিকে এক্সারসাইজ করা এবং স্ট্রেন্থ বিল্ডিং করা আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। পেশাদার খাতায় নাম লেখালেন কবে? ২০১৯ সালে আমি বডিবিল্ডিং শুরু করি এবং একটা টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় হই। ওটা আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল। তখন ভেবেছিলাম যদি আরও একটু ভালো কন্ডিশনিং নিয়ে আসি তাহলে আরও ভালো করতে পারবো। দেশের বাইরে বড় কোনো টুর্নামেন্টে নেমে প্রথমবারই পদক পাবেন বলে আশা করেছিলেন? না। সত্যিকার অর্থে ২০২০ সালে যখন বডিবিল্ডিং প্রতিযোগিতায় নামি, তখনই বলেছি পরের বছরে আমি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা করবো। আমার লক্ষ্য ছিল এখানে আসার। পুরো বছর প্রস্তুতি নিয়েছি। চোটের পর বিশ্রামেও ছিলাম অনেক দিন। ফিজিও নিয়ে ঠিক হয়েছি। বাংলাদেশে আপনি জানেন যে, আমরা নারীরা হাফ স্লিভ বা প্যান্ট পরে প্রতিযোগিতায় অংশ নিই। আর আন্তর্জাতিক আসরগুলোতে বিকিনি পরে স্টেজে উঠতে হয়। আমাকে বিকিনি পরে পারফর্ম করতে হয়েছে। বিষয়টা চ্যালেঞ্জিং ছিল। ওখানে ছোট ছোট ভুলগুলো অনেক বড় করে দেখা হয়। এসব প্রতিকুলতা পার করে আমি সেখানে পদক জিতেছি। মুম্বইয়ে অলিম্পিয়া অ্যামেচার বডিবিল্ডিংয়ে অংশ নিয়ে পদক জেতার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? প্রথম প্রতিযোগিতার মাত্র দুই মাস আগে আমি দেশে এসেছিলাম। নিজেকে ভালোভাবে প্রস্তুত করতে পারিনি। তাই মুম্বাইয়ে অংশ নেওয়ার জন্য অনেক খাটতে হয়েছিল। এক-দেড় ঘণ্টা করে ওয়ার্কআউট করা। সঙ্গে ডায়েট। অন্যদের বোঝানো যাবে না এটা কত পরিশ্রমের কাজ। আসলে আমাদের দেশে ওভাবে কোনো বডিবিল্ডিং বা এক্সপো প্রতিযোগিতা হয় না। বুঝিয়ে বলার জন্য বলছি, এটা আসলে একটা হেলথ ও ফিটনেস এক্সপো। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিযোগী আসেন। মুম্বাইয়ে অনেক ধরনের ব্র্যান্ড ছিল যা আমাদের দেশে ছিল না।  ভবিষ্যতে দেশের নারীদের নিয়ে আলাদা কোনো উদ্যোগ নেয়ার পরিকল্পনা আছে? চিন্তা আছে। আমি যখন চট্টগ্রামে শুরু করি আমি অনেক নারীকে নিয়ে কাজ করতাম। কাপ্তাই থেকে শুরু করে অনেক ছোট ছোট জিমে গিয়েছি। ওখানে নারীরা আসতেন। বোরকা পরেও অনেকে আসতেন। তাদের সম্ভাবনা থাকলেও কেউ মানসিকভাবে শক্ত ছিল না। বাসায় কী বলবে, সমাজ কী বলবে এসব চিন্তা করে অনেকে আসে না। এখানে কাজ করতে হবে। এখন অনেকেই কাজ করছে। অন্যদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য কোথায়? আপনি দেখবেন ফিটনেস আর ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি আলাদা। আমাদের দেশে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি আছে কিন্তু ফিটনেস ইন্ডাস্ট্রি নাই। কোনো অভিনেতা-অভিনেত্রী আছে যাদের সিক্স প্যাক আছে? আরিফিন শুভ আসে আমাদের জিমে। এছাড়া আসলে কেউই আসে না। আমি বলবো না এটা ওদের দোষ। মূলত ওভাবে গাইডলাইনটা পায় না। এখানেই অন্য দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের বড় পার্থক্য। পরবর্তী লক্ষ্য কি? সামনে যুক্তরাষ্ট্রে একটা প্রতিযোগিতা আছে। সেটার জন্য বিদেশি ট্রেনারের কাছে অনলাইনে প্রস্তুতি নিচ্ছি। বডিবিল্ডিংয়ে অনেক খরচ। বিদেশি ট্রেনারকে তিন হাজার ডলার দিতে হচ্ছে। এছাড়া নিজেকে তৈরি রাখতেও ব্যয় প্রচুর। তারপরেও চেষ্টা করছি ভালো কিছু করার। কিন্তু জানিনা কতোদিন একক প্রচেষ্টায় চালিয়ে যেতে পারবো।  ফেডারেশনকে কি পাশে পাচ্ছেন না? আমাদের ছোট্ট ফেডারেশন। তাদের পক্ষে ওইভাবে আমাকে লুক আফটার করা সম্ভব নয়। তারপরেও যতটুকু পারছে নজরুল স্যার সব সময় আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। নানা সীমাবদ্ধতার পরেও ফেডারেশন সব সময় পাশে থাকার চেষ্টা করে।

খেলা থেকে আরও পড়ুন

   

খেলা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status