শরীর ও মন
কোলোরেক্টাল ক্যান্সার বুঝার উপায় ও পরিত্রাণ
ডা. মোহাম্মদ তানভীর জালাল
২৯ জানুয়ারি ২০২৪, সোমবারকোলোরেক্টাল বা কোলন ক্যান্সার বহুল পরিচিত একটি রোগ। সাধারণত মলাশয়, বৃহদন্ত্রের অ্যাপেন্ডিক্স অংশে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বৃদ্ধির কারণে এটি হয়ে থাকে। সহজ কথায় অ্যাপেন্ডিক্স, পায়ুপথ ও বৃহদন্ত্রের ক্যান্সারই ‘কোলোরেক্টাল ক্যান্সার’।
জরিপে প্রকাশ সারা বিশ্বে এই রোগে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৬ লাখ মানুষ মারা যায়। নতুন করে আক্রান্ত হয় প্রায় দেড় লাখ। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই কোলন ক্যান্সারে প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার মানুষ মারা যায়। মৃত্যুর দিক দিয়ে এই ক্যান্সারটির স্থান নবম।
কোলোরেক্টাল ক্যান্সার সম্পর্কে ধারণা ও সচেতনতা খুবই প্রয়োজন। কেননা শুরুতে এ রোগটির সঠিক চিকিৎনা না করলে শেষে নিরাময় করা কঠিন হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি হওয়া পাঁচ ক্যান্সারের একটি কোলোরেক্টাল ক্যান্সার। আগে বলা হতো, কোলোরেক্টাল ক্যান্সার বৃদ্ধ, বিশেষ করে পঞ্চাশোর্ধ্বদের হয়ে থাকে। বর্তমানে অনেক অল্প বয়সী এমনকি শিশুরাও এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।’
একজন স্বাভাবিক মানুষ কীভাবে বুঝবেন এই ক্যান্সারে আপনি আক্রান্ত হয়েছেন কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের অন্যতম লক্ষণ মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন। পর্যায়ক্রমে ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য, মলের সঙ্গে রক্ত মিশে থাকা, ওজন কমে যাওয়া, রক্তশূন্যতা, শারীরিক দুর্বলতা এবং পেটে অস্বস্তি ভাব যেমন গ্যাস, পেট ফুলে থাকা, পেট ভর্তি-ভর্তি ভাব, পেট কামড়ানো ইত্যাদি। রোগের শেষ পর্যায়ে মলত্যাগ করতে না-পারা বা অন্ত্রনালি বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো গুরুতর সমস্যাও সৃষ্টি হয়।
প্রতিরোধের উপায়সমূহ: সাধারণত ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে কোনো একটি কারণকে নির্দিষ্ট করা যায় না। তবে কিছু বিষয় থাকে, যেগুলো এ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এরমধ্যে জিনগত ও কিছু পরিবেশগত কারণও দায়ী। পরিবেশগত কারণে পুরুষেরা কোলোরেক্টাল ক্যান্সারে তুলনামূলক বেশি আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া পশ্চিমা দেশগুলোতে বিশেষ করে পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষ এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। রোগটি থেকে বাঁচতে হলে কোনোভাবেই প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া যাবে না। যারা অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত ও অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে থাকেন, তাদের কোলোরেক্টাল ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। আমাদের তুলনায় তাই উন্নত বিশ্বের দেশগুলোয় কোলোরেক্টাল ক্যান্সারে আক্রান্তের হার অনেক বেশি। কিছু কিছু ঝুঁকিপূর্ণ অভ্যাস যেমন ধূমপান কিংবা মদ্যপানেও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
দেখা গেছে প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগ শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করলে জটিলতা এড়ানো যায়। এরমধ্যে কিছু রয়েছে, যার ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই, আবার কিছু আছে যেগুলো আমরা জীবনযাত্রার সঙ্গে পরিবর্তন করতে পারি। শুরুতেই ধরা পড়লে এই রোগের যথাযথ চিকিৎসা করা সম্ভব। কোলোরেক্টাল ক্যান্সার নিরাময়ে সার্জারি, রেডিয়েশন, কেমোথেরাপির যেকোনোটি বা কয়েকটি একসঙ্গে ব্যবহার করা যায়। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের চিকিৎসায় অনেক অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি নতুন চিকিৎসাপদ্ধতি যেমন অ্যান্টিবডি ব্যবহার, জিন থেরাপি, টিউমারের রক্ত চলাচলে বাধা দেয়া এরকম নানা পদ্ধতির মাধ্যমে কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের চিকিৎসার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।
সহযোগী অধ্যাপক (কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ) কলোরেক্টল, লেপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল
বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
ইমেইল:[email protected]/ www.facebook.com/Dr.Mohammed TanvirJalal ফোন: ০১৭১২৯৬৫০০০৯