শরীর ও মন
লিভার বড় হয়ে গেলে বা বর্ধিত লিভার
অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নিল
২৭ জানুয়ারি ২০২৪, শনিবারলিভার বড় হওয়া বর্ধিত লিভার হলো শরীরে ভাইরাস সংক্রমণ থেকে হার্ট ফেলিওর বা হৃদস্পন্দন বন্ধ হওয়ার মতো গুরুতর চিকিৎসাগত অবস্থায় লিভার বড় হয়ে গেলে তাকে তখন বর্ধিত লিভার বা হেপাটোমেগালি বলা হয়। সাধারণত, অন্তর্নিহিত কারণের চিকিৎসা হেপাটোমেগালি সারাতে সাহায্য করে।
রোগের প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গসমূহ:
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, লিভার বড় হয়ে যাওয়ায় কোনো উপসর্গ দেখা যায় না, কিন্তু উপসর্গগুলো স্পষ্ট হতে পারে অভ্যন্তরীণ অসুস্থতা বা রোগের কারণে। এর কয়েকটি উপসর্গ নিচে উল্লেখ করা হলো:
পেটে ব্যথা
বমি বমি ভাব
জন্ডিস
অবসাদ এবং দুর্ববলতা
প্রধান কারণসমূহ
শরীরের একাধিক কার্যকলাপে লিভারের যেহেতু কেন্দ্রীয় ভূমিকা রয়েছে, এইসব কার্যকলাপের পরিবর্তনের কারণে একাধিক রোগ হতে পারে, যার ফলে লিভার বৃদ্ধি পায়।
হেপাটোমেগালির খুব সাধারণ কারণগুলো হলো:
লিভারের রোগ
জীবাণুঘটিত ফোঁড়া- ই. হিস্টোলাইটিকা সংক্রমণের কারণে লিভারে পূঁজ-ভর্তি গর্ত তৈরি হয়।
হেপাটাইটিস
সিরোসিস
ফ্যাটি লিভার বা মেদবহুল লিভার
হেমোক্রোমাটোসিস- শরীরে অতিরিক্ত লৌহ জমা হওয়া
লিভারে সিস্ট হওয়া
লিভারের হেমাঞ্জিওমাস- লিভারের রক্তবাহী শিরা-উপশিরার বিকৃতি
লিভার বড় হওয়া (বর্ধিত লিভার)
পিত্তকোষে প্রতিবন্ধকতা
অ্যামালয়ডোসিস
উইলসন রোগ- শরীরে অতিরিক্ত তামা জমা হওয়া
অন্যান্য রোগ
লিভার ক্যান্সার
লিম্ফোমা
লিউকেমিয়া
হার্ট ফেলিওর
পেরিকার্ডিটিস
সংক্রমণ যেমন- ম্যালেরিয়া এবং টাইফয়েড
রোগ নির্ণয় চিকিৎসা
নিম্নলিখিত নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষার দ্বারা এই রোগের অন্তর্নিহিত কারণ নির্ণয় করা হয়।
রক্ত পরীক্ষা
সম্পূর্ণ রক্ত গণনা (সিবিসি)
লিভারের কার্যকারিতা পরীক্ষা
রক্তরসে প্রোটিনের মাত্রা
হেপাটাইটিস এ.বি.সি.ডি এবং ই. অ্যান্টিজেন/অ্যান্টিবডির মাত্রা পরীক্ষা
ইমেজিং স্টাডিজ বা প্রতিবিম্বিতকরণ দ্বারা পরীক্ষা
পেটের সোনোগ্রাফি
কম্পিউটার দ্বারা পেটের টোমোগ্রাফি (সিটি) স্ক্যান
ম্যাগনেটিক রিজোনেন্স ইমেজিং (এমআরআই) স্ক্যান
লিভার বায়োপসি- এটি লিভার কোষগুলোর অভ্যন্তরীণ কোষীয় গঠন জানতে (হেপাটোসাইট) এবং রোগ নির্ণয় করতে সাহায্য করে
লিভার বৃদ্ধি পাওয়ার কারণের উপর হেপাটোমেগালির চিকিৎসা সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল। যদি রোগের কারণ সংক্রমণ হয়, অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যেতে পারে; হৃদযন্ত্রের রোগের ক্ষেত্রে, অভ্যন্তরীণ অবস্থার চিকিৎসার প্রয়োজন; কখনো কখনো এটি সম্পূণরূপে নিজে থেকে ঠিক হয়ে যায় বা কখনো সহায়ক এনজাইম বা উৎসেচকের প্রয়োজন হয়। যদি ক্যান্সারের কারণে লিভার বৃদ্ধি পায় তখন সার্জারি বা কেমো-রেডিয়েশন থেরাপির প্রয়োজন।
লেখক: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
চেম্বার: ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল, মিরপুর রোড, ধানম-ি, ঢাকা। হটলাইন-১০৬০৬।