শরীর ও মন
কীভাবে বুঝবেন আপনার শিশু অটিজম কিনা
ডা. এম এ হক, পিএইচডি
১৪ জানুয়ারি ২০২৪, রবিবারকুসংস্কার ও অজ্ঞতার কারণে অটিস্টিক শিশুরা আজ শিক্ষা ও নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অটিজম নির্ণয় ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণের জন্য প্রশিক্ষিত ডাক্তার ও মনস্তত্ত্ববিদ প্রয়োজন যা বাংলাদেশে অপ্রচলিত। এ ছাড়া অভিভাবকদের মধ্যেও প্রাথমিক পর্যায়ে অটিজম নিয়ে সচেতনতার যথেষ্ট অভাব বিদ্যমান। শিশুদের অটিজমের লক্ষণসমূহ এক থেকে তিন বছরের মধ্যে বোঝা যায়। অটিজম একটা জন্মগত ব্যাপার। অটিজমের বৈশিষ্ট্য নিয়েই একটা শিশু মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেয়। শিশুর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার লক্ষণসমূহ প্রকাশ পেতে থাকে। মা-বাবা একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারেন অন্য শিশুদের সঙ্গে তার নিজের বাচ্চার আচরণগত সমস্যা। সাধারণত শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশের পর্যায়ের ক্ষেত্রে ১৮ মাস থেকে ৩৮ মাস বয়সের মধ্যেই অটিজমের বৈশিষ্ট্যগুলো প্রকাশ পায়। অটিস্টিক শিশুরা নিজস্ব একটা মনোজগৎ তৈরি করে। চারপাশ থেকে আলাদা তাদের এ জগৎ। তাদের আচরণও স্বাভাবিক হয় না। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনোবিকাশের প্রতিবন্ধকতার কারণ হিসেবে মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক জৈব রাসায়নিক কার্যকলাপ, মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক গঠন, বংশগতির অস্বাভাবিকতা প্রভৃতির কথা বলে থাকেন।
অটিজমের লক্ষণ:
‘আরওয়া’ বয়স দুই বছর চার মাস। সে কথা বলতে শিখেনি। ডাকলে সাড়া দেই না। ডাকলে চোখের দিকে তাকাই না। একা একা থাকে, বাড়িতে সমবয়সী কোনো শিশু এলে তাদের সঙ্গে মেশে না। মাঝেমধ্যে কোনো কারণ ছাড়াই উত্তেজিত হয়ে পড়ে, কখনো নিজেকে আঘাত করে, একই কাজ বারবার করে। যেমন বারবার হাত নাড়ায়। অস্থির, শুধু দৌড়াদৌড়ি করে। শরীর অল্পতেই ঠাণ্ডা লাগে। সঠিক ভাবে খাওয়া-দাওয়া করলেও শরীর পুষ্টি পায় না। সে একজন অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু। অটিজম হচ্ছে স্নায়ুর বিকাশজনিত সমস্যা। মায়ের গর্ভ থেকে জন্মের কয়েক বছর পর পর্যন্ত শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ ঘটতে থাকে। কোনো কারণে স্নায়ুর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হলে শিশু অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হতে পারে।
অটিজম শিশুর মধ্যে নিম্নলিখিত কারণসমূহ দেখা যায়:
* ১২ মাস বয়সের মধ্যে আধো আধো কথা বলতে পারছে না, পছন্দের বস্তুর দিকে ইশারা করছে না।
* ১৬ মাসের মধ্যে কোনো একটি শব্দ বলতে পারে না।
* ২৪ মাস বয়সের মধ্যে দুই বা ততোধিক শব্দ দিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে না।
* বয়স উপযোগী সামাজিক আচরণ করছে না।
* ভাষার ব্যবহার রপ্ত করতে পারার পর আবার ভুলে যাচ্ছে।
অটিজম কী পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব?
সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে শিশুদের ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ জীবন আচরণ স্বাভাবিক ধারায় নিয়ে আসা সম্ভব। বর্তমানে দেশের অনেক শিশুই অটিস্টিক হওয়া সত্ত্বেও স্বাভাবিক জীবনের সঙ্গে মানিয়ে চলতে সক্ষম হচ্ছে। এই জন্য অটিজম শিশুর অভিভাবকদের সবচেয়ে বেশি সচেতন হতে হবে। শিশুর ছোট বয়স থেকেই প্রয়োজনীয় ও সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে “ড. হক হোমিও ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিসার্স সেন্টারের” উদ্যোগে অটিজম শিশুর অভিভাবকদের জন্য প্রতি শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ফ্রি কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
লেখক: পিএইচডি (স্বাস্থ্য), এমফিল (স্বাস্থ্য), ডিএইচএমএস। চিকিৎসক ও গবেষক (ক্রনিক ডিজিজ অ্যান্ড নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার)।
চেম্বার: নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, (ড. হক হোমিও ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের একটি প্রতিষ্ঠান), বিটিআই সেন্ট্রা গ্রান্ড, গ্রাউন্ড ফ্লোর (জি-৪), ১৪৪ গ্রিন রোড, পান্থপথ, ঢাকা। মোবাইল: ০১৭০৭-০৭৩১৪১