শরীর ও মন
জটিল চর্মরোগ সোরিয়াসিস হলে
অধ্যাপক ডা. এসএম বখতিয়ার কামাল
১২ জানুয়ারি ২০২৪, শুক্রবারসোরিয়াসিস এমন এক ধরনের চর্মরোগ যেখানে ত্বক খুব দ্রুত তৈরি হয়। সাধারণত যেকোনো বয়সের নারী ও পুরুষ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কেন এ রোগ হয়, তার সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে বংশগত কারণকে বেশি দায়ী করা হয়। সাধারণত ত্বকের কোষ প্রতিনিয়ত মারা যায় এবং নতুন করে তৈরি হয়। সোরিয়াসিস রোগীদের ক্ষেত্রে এই মারা যাওয়া কোষের সংখ্যা ও বিস্তারের মাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। ত্বকের সবচেয়ে গভীর স্তর থেকে মৃত কেরাটিনোসাইটস কোষ ওপরের স্তরে আসতে লাগে ১২০ দিন। কিন্তু সোরিয়াসিসের ক্ষেত্রে সময় ৫ থেকে ৭ দিন লাগে। এর ফলে উপরে ২-৩টা লেয়ার পড়তে পড়তে নিচে ১০-১২টা লেয়ার পড়ে যায়। যার কারণে ত্বকে বেশ জটিলতা তৈরি হয়। rtisement: ২:৪৫
সোরিয়াসিস মাথার ত্বকের ওপর হতে পারে, কনুই, হাঁটু ও জয়েন্টগুলোতেও দেখা দেয়, নখের ওপরও হয়ে থাকে। এমনকি অল্প থেকে শুরু হয়ে সারা শরীরেও হয়ে থাকে। এটা অনেক সময় লাল রঙের হতে পারে। সোরিয়াসিস হলে বাকি জীবনটা সঙ্গে নিয়েই কাটাতে হয় এবং নিয়ম করে ওষুধ সেবন ও চলাফেরা নিত্যদিনের রুটিন হয়ে থাকে। কিন্তু ভয়ের কিছু নেই। মনোবল শক্ত করে ফেলা এ ধরনের রোগীদের প্রধান টনিক। সোরিয়াসিস হলে রোগী অনেক হতাশায় থাকে এবং সবার সামনে যেতে খুব অস্বস্তিতে পড়ে। সোরিয়াসিস রোগীরা অনেক সময় পরিবারের মধ্যেও হেয়-প্রতিপন্ন হয়ে থাকেন এবং অনেক সময় পরিবারে অনেকেই এ ধরনের রোগীকে অবজ্ঞাও করে থাকেন যা মোটেও উচিত নয়।
কারণসমূহ
সোরিয়াসিস কেন হয় তার সঠিক কারণ এখনো অজানা। কখনো কিছু কিছু মেডিসিনের জন্য সোরিয়িাসিস রোগ হতে পারে। আবার কোনো কোনো মেডিসিনে সোরিয়াসিস রোগ বেড়ে যেতে পারে। ম্যালেরিয়ার ওষুধ সেবন এবং স্টেরয়েড খেলে এটা বেড়ে যেতে পারে। মেডিসিন যেমন অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ ওষুধ বা সোরিয়াসিস আছে এমন মেডিসিন খেলে এ রোগ হতে পারে। ধূমপান, মদ্যপান, উচ্চ রক্তচাপের বিশেষ ওষুধ সেবন, সোরিয়াসিস হলে স্টেরয়েড খাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। করণীয় এ রোগের কোনো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে আসা উচিত। এ রোগের চিকিৎসক মূলত ডার্মাটোলজিস্ট। হাতুড়ে চিকিৎসায় এ রোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। সোরিয়াসিস হলে রোগীদের কাউন্সেলিংটা খুব জরুরি। সোরিয়াসিস কখনো সারে না, এভাবে কখনই রোগীদের বলা উচিত না। চিকিৎসায় সোরিয়াসিস রোগীরা সহনীয় ও ভালো থাকেন তবে বিনা চিকিৎসায় মারাত্মক সমস্যা হয়ে থাকে। সোরিয়াসিস হলে রোগীকে লোশন বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে হবে এতে ত্বক স্ল্যাপিং আউট হয়ে যায় এবং জমতে পারে না। এই রোগ যেহেতু একটা দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা তাই ধৈর্য ধরে থাকতে হয়।
সোরিয়াসিস জয়েন্টে হতে পারে। জয়েন্টে যদি পেইন থাকে তবে দ্রুত ডার্মাটোলজিস্টদের কাছে যেতে হবে। জয়েন্টগুলো খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট করে ফেলে। তাই এটা তাড়াতাড়ি ট্রিটমেন্ট নেয়া জরুরি। শেষে বলবো, যদি আপনার সোরিয়াসিস হয়েই যায় তাহলে জীবনকে আরও গতিময় ও শক্তিশালী করে তুলুন। চিকিৎসকের পরামর্শে বদলে ফেলুন জীবন ধারা। প্রতিদিন চলুন নিয়ম ও রুটিন করে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থাকা ও আলস্য ত্যাগ সোরিয়াসিস রোগীদের জীবনকে করে আরও গতিময়। ভালো থাকুন।
লেখক: চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ ও হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন।
চেম্বার- কামাল হেয়ার অ্যান্ড স্কিন সেন্টার ফার্মগেট, গ্রীন রোড, ঢাকা। সেল: ০১৭১১-৪৪০৫৫৮।