ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

ঝিনাইদহে ভুয়া ভাউচারে পিবিজিএসআই স্কিমের ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা লোপাট

আমিনুল ইসলাম লিটন, ঝিনাইদহ থেকে
১০ ডিসেম্বর ২০২৩, রবিবার

ঝিনাইদহ জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সহায়তায় স্কুল কমিটির সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষক জাল ভাউচারের মাধ্যমে পারফরমেন্স বেজ্‌ড গ্রান্ডস ফর সেকেন্ডারি ইনস্টিটিউশনস (পিবিজিএসআই) স্কিমের ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খাতভিত্তিক খরচ না করেই ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে সব টাকা তুলে নিয়েছে। এ স্কিমের আওতায় প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ঝিনাইদহের ৬ উপজেলার ১০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে ৫০ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। পিবিজিএসআই স্কিমের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ঝিনাইদহ জেলার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রথম ধাপে মোট ৫৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে ২৭ কোটি ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৪৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই নিয়মে ২৩ কোটি ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। স্কিম পরিচালক চিত্ত রঞ্জন দেবনাথ স্বাক্ষরিত এক পত্রে বলা হয়, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে ৫ লাখ টাকা খাত ওয়ারি ব্যয় করার নির্দেশনা দেয়া হয়। খাতগুলো ছিল- শিক্ষক প্রণোদনা হিসেবে এক লাখ টাকা, বইপত্র, লাইব্রেরি, শিক্ষা উপকরণ ও গবেষণা সরঞ্জাম হিসেবে দেড় লাখ টাকা, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্রীদের জন্য বাধ্যতামূলক পৃথক শৌচাগার, নিরাপদ পানি নিশ্চিতকরণ ও ছাত্রী কমনরুমের উন্নয়নে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা, সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সহায়তা ব্যয় ৭৫ হাজার টাকা এবং সরকার কর্তৃক স্বীকৃত প্রতিবন্ধিতার মাত্রা অনুযায়ী অগ্রাধিকার চাহিদা সম্পন্ন প্রতিবন্ধীকে ৫০ টাকা সহায়তা দিতে বলা হয়। এরমধ্যে বইপত্র, লাইব্রেরি, শিক্ষা উপকরণ ও গবেষণা সরঞ্জাম ক্রয় করতে ৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করতে বলা হয়। এ বিষয়ে হরিণাকুণ্ডুর সোনাতনপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহাবুদ্দীন জানান, সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের টাকা বণ্টন করতে আসলে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে এ খাত থেকে যাতায়াত খরচ ও সম্মানী দিতে হয়েছে। এদিকে সোনাতনপুর হাইস্কুলের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ করেন, তার স্বাক্ষর জাল করে প্রধান শিক্ষক শাহাবুদ্দীন দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। দুইটি ল্যাপটপের ডিসপ্লের দাম দেখিয়েছেন এক লাখ ২৫ হাজার টাকা। সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের ৭৫ হাজার টাকা নিজে চিকিৎসা নিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রধান শিক্ষক জানান, স্কিমের টাকা স্কুল ফান্ডে আসার ১৫ দিনের মধ্যে উপজেলা শিক্ষা অফিসাররা জোর করে ভাউচার নিয়ে নেন। প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়েছে। সরজমিন দেখা যায়, সদর উপজেলার হরিশংকরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে পুরাতন বই ও আসবাবপত্র দেখিয়ে ভুয়া ভাউচার করা হয়েছে। একইভাবে হাটগোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও ভুয়া ভাউচারে টাকা লোপাট করার অভিযোগ উঠেছে। মহেশপুরের খালিশপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে টাকা দিয়ে ভবন রং করা হয়েছে। অথচ ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের পৃথক কমনরুম ও শৌচাগার নেই। মহেশপুরের মালাধরপুর মাদ্রাসায় টাকা দিয়ে সুপারের ব্যক্তিগত শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই মাদ্রাসায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী না থাকা সত্ত্বেও হুইল চেয়ার কেনা হয়েছে। সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সহায়তা ব্যয় ৭৫ হাজার টাকা সভাপতি ও সুপার ভাগাভাগী করে নিয়েছেন। মহেশপুরের বাক্সপোতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুই লাখ ৭৫ হাজার টাকা প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি ভাগাভাগি করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে কালীগঞ্জ ও শৈলকুপা উপজেলার বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টাকার কোনো হদিস নেই। এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফারুক হোসেন জানান, দ্বিতীয় ধাপের বরাদ্দের কোনো চিঠি পাননি। অথচ এ টাকা জুলাই মাস থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে জেলা শিক্ষা অফিসার মনিরুল ইসলাম জানান, পিবিজিএসআই স্কিমের টাকা যদি কেউ খাত ভিত্তিক ব্যয় না করে থাকে তবে স্কুল কমিটি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status