বাংলারজমিন
পথশিশুদের আলোর পথ দেখাচ্ছে স্বপ্নসিঁড়ি
ইভান চৌধুরী, বেরোবি থেকে
৯ ডিসেম্বর ২০২৩, শনিবার
সুবিধা ও অধিকার বঞ্চিত শিশুদের আলোর পথ দেখাচ্ছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বপ্নসিঁড়ি। যে শিশুরা শহরের আশপাশে, ফুটপাথে প্লাস্টিক, বোতল, পলিথিন কুড়াতো। কেউ ভিক্ষা বৃত্তি করতো, কেউবা বাসাবাড়িতে কাজ করতো। এমনকি অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তো অনেকে। কারও আবার মা নেই, কারও নেই বাবা, কারও আবার মাথাগোঁজার ঠাঁইটুকু নেই এমন শিশুদের পাশে স্বপ্নসিঁড়ি কাজ করে যাচ্ছে।
ছিন্নমূল শিশুদের আলোর পথ দেখানোর এক উদীয়মান সূর্য, তারুণ্যনির্ভর সংগঠন স্বপ্নসিঁড়ি। শিশুদের নিয়ে অক্ষর জ্ঞানের পাশাপাশি নৈতিক বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার এ কাজটি করে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজপড়ুয়া একঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থী। রংপুর বাবুপাড়া রেলস্টেশন এলাকায় সপ্তাহে প্রতি শুক্রবার এবং শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঠশালায় চলে পাঠদান। এই পাঠশালায় বর্তমানে ৬৫ শিশু শিক্ষার্থীকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫ শিক্ষার্থী নিয়মিত পাঠদান করাচ্ছেন। ‘হাত বাড়াই মানবতার সেবায়, লক্ষ্য মোদের আকাশ ছোঁয়ায়’ এ স্লোগান সামনে রেখে বেরোবির তরুণ শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টায় ৩রা মার্চ ২০১৮ সালে পথশিশু এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বপ্নসিঁড়ি পাঠশালা। যেখানে অধিকার বঞ্চিত শিশুদের জন্যে বিনামূল্যে পাঠদানের পাশাপাশি বিনামূল্যে বই, খাতা-কলম, ব্যাগসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ দেয়া হয়। নিয়মিত নেয়া হয় পরীক্ষা, মেধাক্রম অনুসারে পুরস্কার প্রদান এবং খাবারের ব্যবস্থা করা হয় যাতে করে শিশু শিক্ষার্থী শিক্ষা থেকে দূরে সরে না যায়। পাশাপাশি অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ নানা দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। যাতে করে তাদের শিশুদের পাঠদানের উৎসাহ দেন তারা।
শিশু শিক্ষার্থী সুমন বলেন, ভাইয়া ও আপুরা আমাদের শিখিয়েছে বড়দের দেখলে সালাম দিতে হয়, বড়দের সম্মান করতে হয়, সব সময় সত্য কথা বলতে হয়। রোজা বলেন, এখানে অনেক সুন্দর করে আমাদের পড়ায়। আমি এখানে এসে অ, আ, ই, ঈ শিখেছি এবং ১, ২, ৩, ৪ শিখেছি। এ বিষয়ে কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থী রাশিদুল ইসলাম রিপন জানান, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য স্বপ্নসিঁড়ি সংগঠন প্রশংসার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। সংগঠটি সর্বদা বিশ্বাস করে মানবিক সমাজ গঠনে সবার অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজনীয়। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী জেমি আক্তার বলেন, আমার মন খারাপ থাকলেও এখানে এসে শিশুদের পড়ালে মন ভালো হয়ে যায়। মাঝে মাঝে শিশুরা অনেক দুষ্টুমি করে এরপরও এখানে পড়াতে ভালো লাগে এবং এখানে পড়াতে এসে আমি খুব খুশি। ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নাজমুস সাকিব বলেন, স্বপ্নসিঁড়ি এমন একটি জায়গা যেখানে গেলে মানসিক প্রশান্তি ও ভালোবাসা মিলে। পরিবারে গেলে যে প্রশান্তি পাওয়া যায় তা আসলে আর কোথাও পাওয়া যাবে না। আর কোটি টাকা দিয়েও তা কেনা সম্ভব না।
স্বপ্নসিঁড়ির সাধারণ সম্পাদক ফাতিহুল ইসলাম শোভন বলেন, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য স্বপ্নসিঁড়ি কাজ করে যাচ্ছে। নানা ধরনের স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করে থাকে স্বেচ্ছাসেবীরা। সভাপতি জিএম ইমরাস বলেন, সংগঠনটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই অধিকার বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিতকল্পে কাজ করে আসছে। এ সংগঠন আমাদের আবেগ ও অনুভূতির জায়গা। একটি শিশুও যেন শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় সেই লক্ষ্যে কাজ করতে চাই।