বাংলারজমিন
মরে যাচ্ছে ভৈরব নদ, হুমকির মুখে নওয়াপাড়া বন্দর, বেকারের পথে লাখো মানুষ
অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি
৯ ডিসেম্বর ২০২৩, শনিবারদক্ষিণাঞ্চলের ব্যস্ততম নওয়াপাড়া বন্দরের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর কারণ ভৈরব নদ। নদীর তলদেশে পলি জমে ভরাট হয়ে আসছে। দুই তীরেই চর জাগতে শুরু করেছে। অপরিকল্পিত ব্রিজ নির্মাণ ও আশপাশের এলাকা ব্যাপক হারে দখলে এ ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলে দাবি করছেন সচেতন মহল ও বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া অব্যাহত দখল ও অপরিকল্পিত ড্রেজিং, অপরিকল্পিত ঘাট নির্মাণের কারণে থমকে যাচ্ছে নদীর স্বাভাবিক স্রোতধারা। অচিরেই পায়ে হেঁটে পার হওয়া যাবে ভৈরব নদ। এমনটি ঘটলে অকার্যকর হয়ে পড়বে নওয়াপাড়া নদীবন্দর। বেকার হয়ে পড়বে হাজার হাজার হ্যান্ডেলিং শ্রমিকসহ লাখো মানুষ। পথে বসবে শত শত ব্যবসায়ী। কেবল হ্যান্ডলিং শ্রমিক ও ব্যবসায়ী নয়, পরোক্ষভাবে নদীবন্দরের সঙ্গে যুক্ত মোটর শ্রমিক ও ব্রোকার্স ইউনিয়নের শ্রমিকেরাও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেই সঙ্গে সরকার হারাবে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। এসব আশঙ্কা থেকে নদ বাঁচাতে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের দাবি উঠেছে। যদিও বছরের পর বছর ধরে এ দাবিতে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম চললেও অজ্ঞাত কারণে তা মাঝপথে যেয়ে থেমে যায়। পাশাপাশি দখলদারীদের বিরুদ্ধেও অদ্যাবধি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় হতাশ হয়ে পড়েছে স্থানীয় সচেতন মহল।
সরজমিন দেখা যায়, নওয়াপাড়া নদীবন্দরের ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় অর্ধ কিলোমিটারজুড়ে নদীর দুই-তৃতীয়ংশে চর জমে ভরাট হয়ে গেছে। এ ছাড়াও জুট মিল সংলগ্ন এলাকা, বেঙ্গল খেয়াঘাট থেকে নওয়াপাড়া গ্লোবঘাট, তালতলা ঘাটসংলগ্ন এলাকায় পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে নদীতে ছোট-বড় কার্গো জাহাজ চলাচলে চরম বিড়ম্বনা দেখা দিয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, গত ২০২১ সালের ২৪শে জুলাই থেকে বিআইডব্লিউটিএ’র প্রকৌশল (সংস্কার) বিভাগের আওতায় ভৈরব নদ সংস্কার তথা ড্রেজিং শুরু হয়। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ ড্রেজিংয়ে বন্দরের তেমন কোনো উপকার হয়নি। নওয়াপাড়া হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফাল্গুন মণ্ডল বলেন, ভৈরব নদ ঘিরে হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন, মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন ও ব্রোকার ইউনিয়নের ৪০ হাজারের অধিক শ্রমিক ও তাদের পরিবার প্রত্যক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। রয়েছেন নদনির্ভর শত শত ব্যবসায়ী ও তাদের পরিরার। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ এই বন্দরের ক্ষেত্রে বরাবরই চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়ে আসছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। যদিও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ বরাবরই দাবি করে আসছে, অপরিকল্পিত ব্রিজ নির্মাণের কারণে বেহাল দশায় পড়েছে ভৈরব নদ। তাছাড়া বন্দর এলাকায় ড্রেজিং করে মাটি বালু ফেলার জায়গা সংকটে বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় ব্যাপকহারে চর জাগলেও মাটি বালু ফেলার জায়গা না পাওয়ায় ড্রেজিং সম্পন্ন করা যাচ্ছে না।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নোয়াপাড়া গ্রুপের সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং হেড মিজানুর রহমান জনি বলেন, নদীর তলদেশ পলি জমে ভরাট হয়ে আসছে। দু’তীরেই চর জাগতে শুরু করেছে। শিল্প-বাণিজ্য ও বন্দর নগরীর স্পন্দন ভৈরব নদের প্রাণ যায় যায় অবস্থা। খননটা যদি বন্দরের মতো করে উপযোগী করে তৈরি করা না হলে মোকামে ব্যবসায় হুমকির মুখে পড়বে। নওয়াপাড়া সার ও খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী সমিতির যুগা সম্পাদক শাহ মুকিত জিলানী বলেন, এখানে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পণ্য নিয়ে প্রতিদিন ছোট-বড় অনেক জাহাজ আসে। নদে সার, গম, ভূট্টা, সিমেন্ট, ভূষিমাল ও কয়লা নিয়ে জাহাজ নোঙর করে। ড্রেজার আছে, কিন্তু তারা যে কী করে তা সার ব্যবসায়ী সমিতির নলেজে নেই। ঠিকমতো ড্রেজিং না হওয়ায় এই বন্দরের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে নওয়াপাড়া নদীবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. মাসুদ পারভেজ বলেন, মূল চ্যানেলে জাহাজ চলাচলে জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আধুনিক নৌবন্দর স্থাপন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এটা বাস্তবায়িত হলে স্থায়ীভাবে সমস্যার সমাধান হবে। নদীসংলগ্ন এলাকায় ড্রেজিংয়ের মাটি-বালু ফেলার জায়গা সংকটে বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় অধিক চর পড়লেও জায়গা সংকটে ড্রেজিং করতে পারছি না। আমরা অভিযান চালিয়ে ইতিমধ্যে অনেক ঘাট দখল মুক্ত করেছি।