শেষের পাতা
সিলেটে ‘সোর্স’ ভয় বিএনপিতে
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
৮ ডিসেম্বর ২০২৩, শুক্রবার
২২ কিংবা ২৩ বছর বয়সী এক তরুণ। কালো শার্ট পরা। নগরের সুবহানীঘাটের কাঁচাবাজার এলাকা থেকে ছাত্রদলের মিছিলে স্লোগান দিচ্ছিলো। এক পর্যায়ে ছাত্রদল নেতারা সড়কে বসে পড়লেন। ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলেন। ওই সময়ও কালো শার্ট পড়া তরুণটি বাম পাশের কোণায় দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছিলো। এমন সময় পুলিশ সেখানে গেলে ছাত্রদল কর্মীরা মা ও শিশু হাসপাতালের গলি দিয়ে দৌড়ে পালায়। কেউ কেউ আশ্রয় নেয় পাশের দোকানগুলোতে। পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছিল। আর এতে সক্রিয় হয়ে উঠে ওই তরুণ। পুলিশকে দেখিয়ে দিচ্ছিলো ছাত্রদল কর্মীদের। সেখান থেকে ছাত্রদলের দুই কর্মী আটক হয়। আটকের সময় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদল কর্মীদের হাতাহাতি পরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াও হয়। কিন্তু ঘটনার পর থেকে বিএনপি ও ছাত্রদলের ভেতরে ওই তরুণকে নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতারা তার ছবি প্রকাশ করেন। তাদের দাবি- ওই সময় কর্মসূচিতে অবস্থান করা ছাত্রদলের কোনো নেতাই তাকে চিনেন না। তাহলে কে এই তরুণ? এ নিয়ে বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাদের মধ্যে রহস্য দেখা দেয়। সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান তার নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে ওই তরুণ সম্পর্কে লিখেন: ‘ওরে চিনে রাখুন। এ প্রজন্মের রাজাকার। আজকের মিছিলে এই ছেলেটি পুলিশকে খবর দিয়ে নিয়ে আসে এবং নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করতে আওয়ামী পুলিশকে সহযোগিতা করে।’
বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, এই যুবক প্রশাসনের সোর্স হিসেবে কাজ করছে। তাকে কেউ চিনেন না। মিছিল দেখে এসে শরিক হয়। অবরোধকালেও সড়কে অবস্থান করে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। যখন পুলিশ আসে তখন তার মুখোশ উন্মোচিত হয়। ওই সময় ধারণ করা ভিডিও ছবিতে তার ভূমিকা দেখে তারা হতভম্ব হয়ে পড়েন। এ কারণে আন্দোলন কর্মসূচিতে মাঠে থাকা নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম অবিশ্বাস দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তারা। বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তারা ওই তরুণের সন্ধান পেয়েছেন। তার নাম মাহিন ওরফে লিমন। ডাক নাম লিমন। বাড়ি নগরীর ৭ নম্বর ওয়ার্ডে। তাকে মাঝে মধ্যে যুবলীগের মিছিলে দেখা গেছে। এখন সে প্রশাসনের সোর্স হিসেবে কাজ করে। মিছিল দেখলে সেখানে অংশ নেয়। সক্রিয় ভূমিকা রাখে। এরপর পুলিশকে খবর দিয়ে নিয়ে এসে ধরিয়ে দিচ্ছে। শুধু লিমনই নয়, সিলেট নগরীতে এ রকম অসংখ্য সোর্স রয়েছে। তারা বিএনপি’র কর্মসূচিতে সক্রিয়; আবার প্রশাসনকে তথ্য দিচ্ছে।
বিএনপি’র নেতারা জানিয়েছেন, সিলেটে চলমান কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে প্রায় সব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এই অবস্থায়ও তারা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। ঝটিকা মিছিলের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে তাদের কার্যক্রম। যারা কর্মসূচি পালন করছেন এ ঘটনার পর থেকে তাদের মধ্যে অবিশ্বাস দেখা দিয়েছে। বুধবার সিলেটের সুবহানীঘাটে ওই ঘটনার পর পুলিশের হাতে ছাত্রদলের দুই নেতা গ্রেপ্তার হন। কর্মসূচিতে মাঠে সক্রিয় থাকা স্বেচ্ছাসেবকদল মহানগর সভাপতি মাহবুবুল হক চৌধুরী ও সদস্য সচিব আফসর খান গ্রেপ্তার হয়েছেন।