ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

ভারত-পাকিস্তানের যত যুদ্ধ

মানবজমিন ডেস্ক
৮ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার
mzamin

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার কয়েক সপ্তাহের উত্তেজনা বুধবার রাত থেকে সংঘাতে রূপ নিয়েছে। চরম মাত্রার উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে ভারত। বুধবার রাতে পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের একাধিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে তারা। এবারের হামলায় ভারতীয় বিমান, নৌ এবং সামরিক বাহিনী অংশ নিয়েছে। পক্ষান্তরে ভারতের পাঁচটি বিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে পাকিস্তান। এমন পরিস্থিতিতে 
পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাকিস্তান জানিয়েছে, ভারতের হামলায়  মোট ২৬ জন নিহত এবং ৩৫ জন আহত হয়েছেন। তারাও প্রতিশোধ নেয়া শুরু করেছে। এবারের উত্তেজনার সূত্রপাত গত ২২শে এপ্রিল। সেদিন ভারত শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামের একটি পর্যটন উপত্যকায় হামলা চালায় একদল সন্ত্রাসী। এতে ২৬ জন নিহত হন। ওই হামলার দায় একতরফাভাবে পাকিস্তানের ওপর চাপিয়েছে ভারত। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে সেদিন থেকেই দুই দেশের সীমান্তে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে টানা ১১ রাত গুলিবিনিময় হয়েছে। কাশ্মীর হিমালয়ের পাদদেশের একটি অঞ্চল। যার কিছু অংশ পাকিস্তান আর কিছু অংশ ভারতের দখলে রয়েছে। সংঘাতময় পরিস্থিতির মধ্যে উভয় প্রান্তেই সতর্ক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব নতুন নয়। এর আগেও বেশ কয়েকবার সংঘাতে জড়িয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রধারী এ দুই দেশ।  ১৯৪৭ সালে রক্তক্ষয়ী দেশভাগের পর থেকে উভয় পক্ষ একাধিক সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে।  কোনো কোনো সংঘর্ষ শেষ পর্যন্ত সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নিয়েছে। যা নিচে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো।

১৯৪৭: দেশভাগ
১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট দুই শতাব্দীর বৃটিশ শাসনের অবসান ঘটে। প্রধানত মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নাম হয় পাকিস্তান। আর হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নাম হয় ভারত। এই দেশভাগের সময় ভয়াবহ রকমের রক্তপাত হয়। আনুমানিক দশ লাখের বেশি মানুষ নিহত হন। বাস্তুচ্যুত হয় দেড় কোটি মানুষ। ওই দেশভাগের সময় থেকেই কাশ্মীর সমস্যার সূত্রপাত হয়। কাশ্মীর আলাদা একটি রাজ্য ছিল। ভারত-পাকিস্তান ভাগ হওয়ার পর কাশ্মীর কোন দেশের সঙ্গে যোগ দেবে তা নিয়ে তৈরি হয় দ্বন্দ্ব। পরে ১৯৪৯ সালে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় কাশ্মীরকে বিভক্ত করা হয়। সংস্থাটির সমর্থনে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রায় ৭৭০ কিলোমিটার যুদ্ধবিরতি রেখা টানা হয়।

১৯৬৫: কাশ্মীর
কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তান দ্বিতীয় যুদ্ধ বাধে ১৯৬৫ সালের আগস্টে। ওই সময় ভারতের দখলে থাকা কাশ্মীরের অঞ্চল পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে পাকিস্তান। সেই যুদ্ধে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হন। পরে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সেপ্টেম্বরে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় দুই দেশ। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধটি প্রায় এক মাস স্থায়ী হয়।

১৯৭১: বাংলাদেশ
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধ করে বাংলাদেশ। যা দমন করতে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান) সেনা মোতায়েন করা হয়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশ ছিল। পরে ১৯৭১ সালে নয় মাসব্যাপী সংঘাত হয়। যাতে আনুমানিক ত্রিশ লাখ মানুষ নিহত হয় এবং লাখ লাখ মানুষ ভারতে পালিয়ে যায়। ফলে ভারতও পাকিস্তানে হামলা করে। এতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা  তৈরি হয়।

১৯৮৯-৯০: কাশ্মীর
কাশ্মীর নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ১৯৮৯ সালে আবারও উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। সে সময় কয়েক হাজার সৈন্য, মুক্তিযোদ্ধা এবং বেসামরিক মানুষ নিহত হয়। ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যোদ্ধাদের অর্থায়ন এবং তাদের অস্ত্র প্রশিক্ষণে সহায়তা করার অভিযোগ করে।

১৯৯৯: কার্গিল
১৯৯৯ সালে কারগিল পর্বতমালার বরফাচ্ছাদিত চূড়ায় ভারতীয় সামরিক ঘাঁটি দখল করে পাকিস্তান। পরে ওয়াশিংটনের তীব্র চাপের মুখে পাকিস্তান নতি স্বীকার করে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সে সময় সংঘাতময় অঞ্চলের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেছিল পাকিস্তান। দশ সপ্তাহব্যাপী ওই যুদ্ধে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হন। 

২০১৯: কাশ্মীর
এরপরের সংঘাত হয় ২০১৯ সালে। যেটি পুলওয়ামা সংঘাত নামে পরিচিত। সে সময় পুলওয়ামার একটি দূতাবাসে আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়। এতে ৪০ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছিলেন। তখন সাধারণ নির্বাচনের প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত ছিল ভারত। পাকিস্তানের ভূখণ্ড যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা চালায় দেশটি। সেই সংঘাতে আজাদ কাশ্মীরে ভারতীয় একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে পাকিস্তানের সেনারা। যাতে ভারতীয় বিমান বাহিনীর (আইএএফ) উইং কমান্ডার অভিনন্দনকে আটক করা হয়। মিগ২১ বাইসন নামের একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার পর আটক হন তিনি। পরে ওয়াঘা সীমান্ত শান্ত রাখতে তাকে ফেরত দেয় ইসলামাবাদ।

সূত্র: বার্তা সংস্থা এএফপি।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status