শেষের পাতা
জামায়াতের কৌশলী পিছুটান
চট্টগ্রামে আন্দোলনে গতি বাড়িয়েছে বিএনপি
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
৬ ডিসেম্বর ২০২৩, বুধবার
গত ২৮শে অক্টোবর ঢাকায় সহিংসতার পর সারা দেশের মতো বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি ও জামায়াত। এরমধ্যে মাঝখানে কিছুদিন অনেকটা পিছুটান দিয়েছিল বিএনপি। তবে চলতি মাসের শুরু থেকেই হঠাৎ বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে দলটির নেতাকর্মীরা। গেল কর্মসূচিতে বেশ চাঙ্গা দেখা যায় তাদের। এ দুইদিনে জেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক ঝটিকা ও মশাল মিছিল করেছেন তারা। তবে শুরু থেকেই নিজেদের সক্ষমতা নিয়ে মাঠে থাকা জামায়াত হঠাৎ মাঠে অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। আগে প্রতি অবরোধ-হরতালে নগরীতেই তারা দৈনিক ৮-৯টি ঝটিকা মিছিল করতেন। সেখানে গত দুইদিনের অবরোধে গোটা জেলাতেই এ সংখ্যা মাত্র ৯টি। এরমধ্যে মহানগরীতে তারা তিনটি মিছিল করেছে। যদিও দায়িত্বশীল নেতারা এটাকে একটা কৌশলের অংশ বলছেন।
সরকার পতনের দাবিতে চলমান ‘নক আউট’ আন্দোলনের মধ্যে গত রবি ও সোমবার ছিল ৯ম দফা অবরোধ কর্মসূচি। এ দুইদিন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখা বিএনপি বরাবরের মতো অনেকটা নীরব থাকলেও মহানগর ও দক্ষিণ জেলায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ঝটিকা ও মশাল মিছিল হয়েছে। এ সময় দুইটি শাখায় ৪৫টি স্পটে নেতাকর্মীরা অবরোধ করেছেন বলে দলটির একটি সূত্র মানবজমিনকে জানিয়েছেন। আর এ সময় শহরে একটি যাত্রীবাহী বাসেও আগুন দেয়া হয়।
জানা যায়, সরকার পতনের দাবিতে চলমান কর্মসূচিতে এলডিপিসহ সমমনা অনেকগুলো দল বিএনপি’র সঙ্গে যুগপৎভাবে কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে আসছে। তবে এ সময়ে এখানে কোনো মিছিল-মিটিংয়ের খবর পাওয়া যায়নি।
এই বিষয়ে মহানগর জামায়াতের এক দায়িত্বশীল নেতা মানবজমিনকে বলেন, শুধুমাত্র ২৮শে অক্টোবরের পরেই এখানে আমাদের দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে বন্দি করা হয়েছে। এদের মধ্যে চট্টগ্রাম শহরের ৯৫ জন। সরকারের দমনপীড়নের কারণে নেতাকর্মীরা চরমভাবে বিপর্যস্ত। মিছিলের ছবি দেখে দেখে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কর্মস্থলে গিয়েও পুলিশ ধরপাকড় করছে। হঠাৎ নীরবের বিষয়ে মহানগর জামায়াতের আরেকজন সিনিয়র নেতা বলেন, “জামায়াত পিছুটান দিয়েছে এটা বলা যাবে না। এটাকে আমাদের একটা কৌশলের অংশ বলেও ধরতে পারেন। তবে এটা ঠিক, আমাদের নেতাকর্মীরাও এখন অনেকটা ক্লান্ত। আর অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, সরকার এত সহজেই থামবে না। তবে আমাদের এই ‘স্লো পয়জনিংয়ে’ তারা ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।”
এদিকে চট্টগ্রামে মহানগর বিএনপি’র দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ইদ্রিস আলী মানবজমিনকে বলেন, ২৮শে অক্টোবর ঢাকায় বিএনপি’র মহাসমাবেশের পর থেকে এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে আমাদের প্রায় ১৩ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরমধ্যে মহানগরে ৫১৪ জন। উত্তর দক্ষিণ জেলায় যথাক্রমে ৩৫০ ও ৩৬৫ জন। আর মামলা হয়েছে মোট ৫৯টি। চলমান কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম নগরে অনেকটা বিএনপি’র মুখপাত্রের দায়িত্বপালন করা এ নেতা বলেন, পুলিশের ভয়ে বিএনপি’র অধিকাংশ নেতাকর্মী রাতে নিজের ঘরে ঘুমাতে পারেন না। এমনকি সমর্থকরা পর্যন্ত গ্রেপ্তার আতঙ্কে ঘরছাড়া হয়েছেন। এরপরও আমরা দলীয় সব কর্মসূচি শক্তভাবে পালন করছি। এখন ভাঙচুর তো দূরের কথা কোথা একটি মিছিল হলেও মামলা দায়ের করা হচ্ছে। কোথাও কোনো কর্মসূচি পালন না হলে আগের মামলায় হলেও গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।
পাঠকের মতামত
পৃথক পৃথকভাবে কর্মসূচী বা আন্দোলন না করে সব দল/মতের মানুষদেরকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে যাওয়া সময়ের অপরিহার্য দাবী। এইভাবে আলাদাভাবে কর্মসূচী দিলে আওয়ামী লীগের মতো ফ্যাস্টিস্ট একটি সরকারকে কোনো অবস্থাতেই থামানো যাবে না। তাই বিএনপি. জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, এলডিপি, এবি পার্টিসহ সব বিরোধী দলকে একতাবদ্ধ হয়ে অভিন্ন কর্মসূচী পালন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।