বাংলারজমিন
কালীগঞ্জে ভ্যানের চাকা না ঘুরলে ঘুরছে না বৃদ্ধার জীবনের চাকা
কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
৫ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার
জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন বৃদ্ধা মণিমালা (৬৫)। জীবনের চাকা সচল রাখতে প্রতিনিয়ত ঘুরিয়ে চলছেন ভ্যানের চাকা। পুরুষের মতো চড়ে চালাতে না পারলেও ষাটোর্ধ্ব মণিমালা মালবোঝাই ভ্যানটি দুই হাতের সাহায্যে টেনে নিয়ে ছুটে চলেছেন এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম, এক হাট থেকে অন্য হাটে। ভ্যানের চাকা না ঘুরলে সংসারের চাকাও ঘোরে না তার। একদিন মাল বিক্রি বন্ধ থাকলে অনাহারে অর্ধহারে থাকতে হয় তার পরিবারকে। অপর্যাপ্ত ও অনিয়মিত রোজগারে চলা একটা পরিবারের প্রধান হিসেবে মণিমালা সদস্যদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারপরও প্রায় ২৫ বছর ধরে ভ্যানে মাল বয়ে মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে বেড়াচ্ছেন।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের মৃত আশুতোষ কুমার পালের স্ত্রী মণিমালার সংগ্রামী জীবনের কথা। ২৫ বছর হলো স্বামী মারা যাওয়ার। এরপর থেকেই সংসারের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছেন। এক ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে অর্ধহারে দিন কাটান। এরইমধ্যে মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন শিবনগর এলাকায়। ছেলেকেও দিয়েছেন বিয়ে। নলডাঙ্গা বাজারের একটি ভাঙড়ি দোকানে কাজ করে ছেলে একা সংসার চালাতে পারে না। এ কারণে মণিমালা ভ্যানে করে বিভিন্ন জায়গায় মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে থাকেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে তিনি প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকার মতো মাল বিক্রি করেন। এতে তার লাভ হয় মাত্র ২০০ টাকা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে এত অল্প টাকা রোজগার করে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন মণিমালা। দিনে দিনে শরীরের শক্তিও কমে আসছে। যার কারণে কপালে তার চিন্তার ভাঁজ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। মণিমালা আক্ষেপ করে বলেন, আমি একজন মহিলা হয়েও বেঁচে থাকার তাগিদে কাজ করি। মালবোঝাই ভ্যান টানতে খুব কষ্ট হয়। কিন্তু অন্য কোনো উপায় নেই। নিজের বলে কিছুই নেই। মাথাগোঁজার ঠাঁইও নেই আমার। শুধুমাত্র বিধবা ভাতা ছাড়া আর কোনো সরকারি সাহায্য পাই না।