খেলা
শান্তর রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিতে দারুণ কিছুর স্বপ্ন
স্পোর্টস রিপোর্টার
১ ডিসেম্বর ২০২৩, শুক্রবার
সেঞ্চুরি স্পর্শ করেই ব্যাট উঁচিয়ে ছুটলেন ড্রেসিং রুমের দিকে। গ্যালারিজুড়ে তখন নাজমুল হোসেন শান্তর নাম ধরে স্লোগান। ভারপ্রাপ্ত টেস্ট অধিনায়ক শুধু দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এমন নয়, ব্যাট হাতেও পথ দেখাচ্ছেন সতীর্থদের। সিলেট টেস্টের প্রথম দুইদিন নিউজিল্যান্ড-বাংলাদেশ লড়াই করছিল সমানে সমান। কিন্তু গতকাল টাইগার অধিনায়কের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিতে তৃতীয় দিনটা নিজেদের করে নেয় বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও এখন স্বাগতিকদের হাতে। ৩ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ২১২ রান। সেই সুবাদে ২০৫ রানের লিড।
বড় কোনও অঘটন না হলে সফরকারিদের বড় টার্গেট ছুড়ে দেয়া সম্ভব। হাতে রয়েছে আরো ৭ উইকেট। সেটি হলে জয় আশা করাই যায়। তবে নিউজিল্যান্ড বলে কথা! টেস্ট ক্রিকেটের অলিগলি তাদের বেশ ভালো করেই জানা। তাই এই টেস্ট জিততে হলে ব্যাটসম্যানদের পাড়ি দিতে হবে আরোও পথ। তারপর বড় দায়িত্ব নিতে হবে বোলারদের। আজ চতুর্থ দিন শান্ত ১০৪ ও মুশফিকুর রহীম ৪৩ রানে অপরাজিত থেকে মাঠে নামবেন। তবে দিনের দারুণ সময়টাতে কিছু বিব্রতকর ঘটনাও আছে। যেমন ওপেনার জাকির হাসান ও অভিজ্ঞ ব্যাটম্যান মুমিনুল হকের টেস্ট ক্রিকেটে রান আউট হওয়া ছিল বেশ দৃষ্টিকটু। তবে তা পুষিয়ে দিয়েছেন অধিনায়ক। নেতৃত্বের অভিষেকেই সেঞ্চুরি করা প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার এখন তিনি। আগের ১২ অধিনায়কের মধ্যে ৪ জন পঞ্চাশ পেরোলেও তিন অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। ২০০৯ এ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৯৬ রানের ইনিংস খেলেন সাকিব আল হাসান।
অথচ গতকাল তৃতীয় দিনের প্রথম ঘণ্টা বাংলাদেশের জন্য ছিল ভীষণ হতাশার। আগের দিন ২৬৬ রানে ৮ উইকেট হারানো ব্ল্যাকক্যাপরা গড়ে তুলেছিল কঠিন প্রতিরোধ। অধিনায়ক টিম সাউদিকে দারুণ ভাবে সঙ্গ দেন কাইল জেমিসন। উইকেটের দেখা মিলছিল না, রানও আটকে রাখতে পারছিলেন না বোলাররা। দু’জনের দারুণ ব্যাটিংয়ে লিডও নিয়ে ফেলে কিউইরা। পরে ৭০ বল খেলে ২৩ রান করা এই ব্যাটার জেমিসন মুমিনুল হকের বলে হন এলবিডব্লিউ। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি তিনি। ভাঙে সাউদির সঙ্গে ৫২ রানের জুটি। ওই ওভারেই শেষ উইকেটটিও নিয়ে নেন মুমিনুল। ৬২ বলে ৩৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলার পর কিউই অধিনায়ককে বোল্ড করেন তিনি। ৩১৭ রানে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড।
দ্বিতীয় ইনিংসে শুরু করতে নেমেও ব্যাট হাতে হাতাশ করেন দুই ওপেনার। প্রথম ইনিংসের মতোই জাকির এদিন সাজঘরে ফেরেন ব্যর্থ হয়ে। দলের জন্য তার অবদান মাত্র ১৭ রানের। অন্যদিকে প্রথম ইনিংসে দলের পক্ষে ৮৬ রান করা মাহমুদুল হাসান জয়ও দ্বিতীয় দফায় দলের হাল ধরতে পারেননি। আউট হন মাত্র ৮ রান করে। ২৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ভীষণ বিপদে পড়ে দল। তবে সেখান থেকে হাল ধরেন শান্ত ও মুমিনুল হক। দারুণ খেলতে থাকা দু’জনের জুটি ভাঙে দলীয় ১১৬ রানে। ফিফটি থেকে ৮ রান দূরে থেকে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেন মুমিনুল। এই জুটি ভাঙলেও টাইগারদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে পথ দেখাচ্ছেন শান্ত। সিলেট টেস্টে ১৯২ বলে শান্ত স্পর্শ করেন তিন অংকের মাইলফলক। সেই সঙ্গে মুশফিককে সঙ্গী করে সমৃদ্ধ করছেন দলীয় সংগ্রহ। শান্তর সঙ্গে মুশফিকের ৯৬* রানের জুটি দলকে দেখাচ্ছে বড় লক্ষ্যের পথ। দিনশেষে ৭১ বলে ৪৩* রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক।
বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ডও গড়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। চলতি বছর ওয়ানডেতে দুটি ও টেস্টে তিনটি সেঞ্চুরি করেছেন তরুণ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। এতদিন এক পঞ্জিকাবর্ষে সমান ৪টি করে সেঞ্চুরির রেকর্ড ছিল শাহরিয়ার নাফীস (২০০৬), তামিম ইকবাল (২০১০) ও মুমিনুল হকের (২০১৮)। এদের মধ্যে মুমিনুলের ৪টি সেঞ্চুরিই ছিল টেস্টে।